
ছবি সংগৃহীত
বর্তমান যুগে কাজ, পরিবার এবং দৈনন্দিন দায়িত্বের ভারে আচ্ছন্ন। তখন সম্পর্ক তৈরি এবং তা বজায় রাখা অনেকটা একটি চ্যালেঞ্জ মনে হতে পারে। সামাজিক বৃত্তি সংকুচিত হওয়ার সাথে সাথে অনেক সময় মনে হয় গভীর সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য সময় এবং মানসিক শক্তি খুঁজে পাওয়া কঠিন।
তবে, ক্লাসিক্যাল গবেষণায় দেখা গেছে যে সামাজিক সমর্থন আমাদের মেন্টাল এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি আমাদের দুইভাবে প্রভাবিত করে: একটির নাম "মূল প্রভাব" মডেল, যেখানে শক্তিশালী সামাজিক নেটওয়ার্ক থাকার কারণে মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্য উন্নত হয়, এবং অপরটি হল "বাফারিং মডেল", যা স্ট্রেসের ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে আমাদের রক্ষা করতে সহায়ক।
এতসব গুরুত্বের মাঝেও সম্পর্ক তৈরি এবং বজায় রাখা অনেক সময় কঠিন হতে পারে। তবে ভালো খবর হলো, সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য আপনার বড় কোনো উদ্যোগের দরকার নেই। কখনো কখনো, ছোট ছোট সদিচ্ছাপূর্ণ কর্মকাণ্ড এবং সহানুভূতির মাধ্যমে সম্পর্কের ভিত্তি শক্তিশালী করা সম্ভব।
এখানে দুইটি গবেষণাপ্রসূত উপায় তুলে ধরা হলো, যা আপনাকে আপনার সম্পর্কগুলো আরও দৃঢ় করতে সাহায্য করবে:
১. সমন্বিত কাজের মাধ্যমে সম্পর্ক গড়ে তোলা
যখন আপনি অন্য কারো সাথে একত্রে কোনো লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজ করেন, তখন একটি বিশেষ ধরনের সম্পর্কের অনুভূতি সৃষ্টি হয়। এটি হতে পারে বন্ধুদের সহায়তায় কোনো কাজ করা, একটি দলগত খেলায় অংশগ্রহণ করা, কিংবা একসাথে কোনো প্রকল্পে কাজ করা। একসাথে কাজ করার মাধ্যমে আপনি একে অপরের উদ্দেশ্য এবং পরিকল্পনা বুঝতে শুরু করেন, যার ফলে স্বাভাবিকভাবেই একটি সম্পর্ক তৈরি হয়।
২০১৭ সালে Social Cognitive and Affective Neuroscience জার্নালে একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়, যেখানে দেখা গেছে, একসাথে কাজ করার সময় মানুষের মস্তিষ্কে বিশেষ কিছু সমন্বয় ঘটে, যা সম্পর্কের উন্নয়নে সহায়ক। গবেষণায় এটি প্রমাণিত হয়েছে যে, যখন দুটি ব্যক্তি একসাথে কাজ করেন, তাদের মস্তিষ্কের অংশগুলো একে অপরের সাথে সিঙ্ক্রোনাইজড হয়ে যায়, যা পরে একে অপরের প্রতি সদয় এবং সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব সৃষ্টি করে।
এছাড়াও, এটি একটি মৌলিক ধারণা যে, একে অপরের সাথে ছোট ছোট কাজগুলো ভাগ করে নেয়ার মাধ্যমে সম্পর্কের গভীরতা তৈরি হয়। আপনি যদি ইতিমধ্যে কারো সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলেন, তবে কিছু সাধারণ কার্যক্রম, যেমন মেলামেশা, সুস্থতার জন্য একসাথে হাঁটা বা রান্না করা সম্পর্ক আরো দৃঢ় করতে পারে।
২. অর্থপূর্ণ সাহায্যের মাধ্যমে সম্পর্ক গড়ে তোলা
আপনি যখন কারো কাছে সাহায্য চান, তখন এটি হয়তো আপনার জন্য কিছুটা অস্বস্তিকর হতে পারে, কিন্তু মনোবিজ্ঞানী গবেষণা বলছে যে, সাহায্য চাওয়া সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করে। একটি বিশেষ মনোবিজ্ঞানী ধারণা “আমায়ে”, যা জাপানি শব্দ, তা হলো অন্যের সহানুভূতির প্রতি আকর্ষণ এবং তাদের উপর নির্ভরতা। এটি মানে যে, অন্যের কাছে সাহায্য চাওয়া এবং তাদের সাহায্য গ্রহণ করা, সম্পর্ককে আরো গভীর এবং শক্তিশালী করে তোলে।
গবেষণায় দেখা গেছে, যখন কেউ সাহায্য চায়, তখন তাদের প্রতি অন্যদের আকর্ষণ এবং বন্ধুত্বের অনুভূতি বৃদ্ধি পায়। এটি প্রমাণ করে যে, সাহায্য চাওয়া, যদিও একটু দুর্বলতার মতো মনে হতে পারে, কিন্তু এটি সম্পর্কের শক্তি বাড়ায় এবং একে অপরের প্রতি বিশ্বাস এবং শ্রদ্ধা বৃদ্ধি পায়।
আপনি যদি এই পন্থাটি জীবনে কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে চান, তবে আপনাকে হয়তো মনে হতে পারে যে সাহায্য চাওয়া অনেকে গায়ে খাটে, কিন্তু এটি সম্পর্কের পরিসীমা বাড়াতে সাহায্য করে। আপনাদের মধ্যকার যোগাযোগ আরও গাঢ় এবং সৎ হতে পারে।
আশিক