
ছবি: প্রতিকী
সুখ কি কেবল ভাগ্যের ব্যাপার? না কি অতিরিক্ত ইতিবাচক মনোভাবের ফল? সাম্প্রতিক গবেষণা ও প্রাচীন জ্ঞান বলছে সুখ একধরনের ‘দক্ষতা’, যা আমরা চর্চার মাধ্যমে অর্জন করতে পারি।
গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, সুখ কেবল জন্মগত বৈশিষ্ট্য নয়; বরং কিছু নির্দিষ্ট অভ্যাস, মানসিকতা ও দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দীর্ঘস্থায়ী সুখবোধ বা ‘সাবজেকটিভ ওয়েলবিয়িং’ গড়ে তোলা সম্ভব।
সুখ নিয়ে গবেষণায় অগ্রগামী ড. মার্টিন সেলিগম্যান বলেন, সুখ তিনটি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠে আনন্দ, সম্পৃক্ততা ও জীবনের অর্থ। এই তিনটি গুণ গড়ে তুললে পাওয়া যায় প্রকৃত সুখ।
দুই ব্রিটিশ মনোচিকিৎসক ক্যাথারিন কাভালো ও অ্যালিস টিউ এখানে এমন ১২টি দক্ষতার কথা বলেছেন, যা যে কেউ আয়ত্ত করতে পারেন সুখী জীবনের পথে চলতে—
১. মাইন্ডফুলনেস (মনোসংযোগ বা সচেতন উপস্থিতি)
প্রতিদিন মাত্র ৫ মিনিট ধ্যান করলে মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমে, এমনকি ব্রেইনে ইতিবাচক পরিবর্তন আসে। সময় না পেলে ‘রঙের হাঁটা’র মতো সহজ কৌশলও কাজে লাগাতে পারেন। চেষ্টা করুন হাঁটতে হাঁটতে আশপাশের যত বেশি রঙ খুঁজে পাওয়া যায় তা খেয়াল করতে।
২. আশাবাদিতা (Optimism)
নেগেটিভিটির প্রতি মানুষের প্রাকৃতিক ঝোঁক আছে, কিন্তু সেটাই নিয়ম নয়। আশাবাদী হতে পারলে আমরা প্রতিকূলতাতেও ইতিবাচক দিক খুঁজে পাই। চেষ্টা করুন। দিন শেষে অন্তত একটি ভালো ঘটনা লিখে রাখার অভ্যাস গড়ে তুলতে।
৩. সম্পর্ক ও সংযোগ (Connection)
হার্ভার্ডের দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা বলছে, সুখী জীবনের মূল চাবিকাঠি হলো শক্তিশালী সম্পর্ক। প্রিয়জনের ‘ভালোবাসার ভাষা’ বুঝে নিন, ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলুন। এমনকি অচেনা মানুষের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলাও মন ভালো করতে পারে।
৪. ফ্লো (Flow)
যে কাজটা করতে গিয়ে সময়ের হিসাব থাকে না সেটাই আপনার ‘ফ্লো স্টেট’। এ ধরনের কাজে মন ও মগজ পুরোপুরি যুক্ত থাকে, যা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। গান শোনা, আঁকা, লেখা বা সাঁতার যা আপনাকে ডুবিয়ে রাখে, সেটাই অনুসরণ করুন।
৫. কৃতজ্ঞতা (Gratitude)
প্রতিদিন তিনটি ছোট জিনিসের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন যেমন বিছানায় বসে কফি পান, ট্রেনে আসন পাওয়া, প্রিয় বন্ধুর মেসেজ পাওয়া। কৃতজ্ঞতা ব্রেইনের নিউরাল পাথওয়েতে পরিবর্তন এনে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলে।
৬. নিজস্বতা (Authenticity)
অন্যের প্রত্যাশা পূরণের চাপে আমরা অনেক সময় নিজের চাওয়া ভুলে যাই। নিজের মূল্যবোধ, স্বপ্ন ও যা আপনাকে আনন্দ দেয় তা খুঁজে বের করুন। মনে রাখবেন, নিজেকে জানা ও গ্রহণ করা মানেই সত্যিকার মুক্তি।
৭. দয়ালুতা (Kindness)
ছোটখাটো সহানুভূতির কাজ যেমন একটি শুভেচ্ছাবার্তা, কারও খোঁজ নেওয়া বা মনোযোগ দিয়ে শোনাসহ সবই দয়া প্রকাশের উপায়। এটি শুধু অন্যকে নয়, আপনাকেও খুশি করে তোলে।
৮. গ্রহণযোগ্যতা (Acceptance)
জীবনের কিছু বিষয় আমরা পাল্টাতে পারি না। সেই অপ্রিয় সত্য মেনে নেওয়া মানে নিজের কষ্ট ও অস্থিরতাকে নিয়ন্ত্রণে আনা। অনুভূতির সঙ্গে লড়াই না করে তাকে উপলব্ধি করুন।
৯. সহনশীলতা (Resilience)
জীবনের ধাক্কা সামলে আবার উঠে দাঁড়ানোর নামই সহনশীলতা। নিজেকে সময় দিন, বিশ্রাম দিন, প্রয়োজন হলে সাহায্য চেয়ে নিন। আবেগ চিহ্নিত করার ক্ষমতা বাড়ান।
১০. নিজেকে ভালোবাসা (Self-compassion)
নিজের সঙ্গে যেমন কথা বলেন, সেই শব্দগুলো অন্য কাউকে বলতেন কি? যদি না বলেন, নিজেকেও সেভাবে বলবেন না। ‘আমি চেষ্টা করছি’ এই বাক্যটি দিয়েই শুরু করুন। নিজেকে ভালোবাসুন, গ্রহণ করুন।
১১. জীবনের উদ্দেশ্য (Purpose)
কাজ, পরিবার, সমাজসেবা যা-ই হোক, নিজেকে কোথায় খুঁজে পান, কী করলে মনে হয় আপনি সত্যিই কিছু করছেন, তা বোঝার চেষ্টা করুন। জীবনের উদ্দেশ্য আবিষ্কার মানেই গন্তব্য খুঁজে পাওয়া।
১২. খেলাধুলা ও আনন্দ (Playfulness)
শুধু শিশুদের নয়, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যও খেলা ও আনন্দ অপরিহার্য। মেঘে আকার খোঁজা, রান্নার সময় গানের তালে নাচা এসবই মন ভালো করার ও স্ট্রেস কমানোর উপায়।
সুখের পেছনে দৌড়ানো নয়, বরং এই ১২টি অভ্যাস গড়ে তোলার মধ্যেই রয়েছে সুখের সন্ধান। একটু একটু করে চর্চা শুরু করুন, সময়মতো বিরতি নিন এবং ভুল করলেও নিজেকে ক্ষমা করতে শিখুন। সুখ কোনও গন্তব্য নয়—এটি প্রতিদিনের ভ্রমণ।
সূত্র: https://inews.co.uk/inews-lifestyle/skills-boost-happiness-transform-life-3658665
রবিউল হাসান