ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২ বৈশাখ ১৪৩২

কঠিন সময়েও চারটি সহজ উপায়ে খুঁজে পাবেন জীবনের আনন্দ

প্রকাশিত: ০০:১৭, ২৬ এপ্রিল ২০২৫

কঠিন সময়েও চারটি সহজ উপায়ে খুঁজে পাবেন জীবনের আনন্দ

ছবি: প্রতীকী

বিশ্বজুড়ে অনিশ্চয়তা ও চাপের মধ্যে অনেকেই আনন্দ ও স্বস্তির খোঁজে দিশেহারা। এমন পরিস্থিতিতে জীবনে কীভাবে নতুন করে আনন্দ ফিরিয়ে আনা যায়—সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে অনেকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আনন্দ খোঁজার চেষ্টা নয়, বরং তাকে আমন্ত্রণ জানানোর অভ্যাসই আমাদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে।

নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে এমন একটি উদাহরণ তৈরি করেছেন জিম নামের এক তরুণ। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ক্লান্তি ও উদাসীনতার সঙ্গে লড়াই করছিলেন। বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো, হাইকিং, এমনকি পিয়ানো শেখা—সবই করেছেন তিনি। কিন্তু কোনো কিছুই তাকে মন থেকে আনন্দ দিতে পারেনি। বারবার তার মনে প্রশ্ন জেগেছে, “আমার সঙ্গে কি কিছু সমস্যা হচ্ছে?”

এই প্রশ্নে জিম একা নন। অনেকেই নানা কর্মকাণ্ড, সম্পর্ক বা অবসরভ্রমণের মধ্যে আনন্দ খুঁজে ফেরেন। কিন্তু আনন্দ যেন অধরাই থেকে যায়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সমস্যাটা আনন্দ চাওয়া নয়, বরং যেভাবে আমরা আনন্দ খুঁজছি—তাতে। আমরা আনন্দ পাওয়ার আশায় কাজ করি, আনন্দ নিয়ে কাজ করি না। অথচ আনন্দ কোনো পুরস্কার নয়, এটি একটি পছন্দ, একটি মনোভাব। আমরা কী করছি তার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ, আমরা তা কীভাবে করছি।

নিচে দেওয়া হয়েছে চারটি অভ্যাস—যেগুলো কঠিন সময়েও জীবনে আনন্দ ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হতে পারে:

১. বর্তমানকে অনুভব করুন ও কৃতজ্ঞ থাকুন
আনন্দের মূল চাবিকাঠি হলো ‘এখন’-এ সম্পূর্ণভাবে উপস্থিত থাকা। অতীতের অনুশোচনা বা ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তায় নয়, বরং ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে মুহূর্তকে উপভোগ করতে পারলেই আমরা প্রকৃত আনন্দে পৌঁছাতে পারি। সূর্যাস্ত দেখা, প্রিয় গান শোনা বা প্রিয় খাবার ধীরে ধীরে উপভোগ করাও হতে পারে এই চর্চার অংশ।

২. খেলাধুলার মতো করে মেতে উঠুন
রুটিনের একঘেয়েমি ভেঙে দিতে কাজে আনুন কল্পনা ও কৌতূহল। প্রতিদিনের একঘেয়ে কাজকে যদি খেলায় রূপ দেওয়া যায়, তাহলে তা আনন্দের উৎস হয়ে উঠতে পারে। যেমন—গৃহস্থালির কাজকে চ্যাম্পিয়নশিপ ভাবা বা যানজটে বসে আশপাশের মানুষদের নিয়ে গল্প তৈরি করাও হতে পারে নতুন আনন্দ খোঁজার উপায়।

৩. নিখুঁততার বদলে অর্থবোধ বেছে নিন
পারফেকশনিজম আমাদের আনন্দ নষ্ট করে দেয়। কাজটা "সঠিকভাবে" করার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো কাজের উদ্দেশ্য ও তা থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতা। অর্থপূর্ণ কিছু করার ইচ্ছা থাকলেই তাতে আনন্দ জুড়ে যায়। ভুল করতে হতে পারে—তবু এগিয়ে চলার মধ্যেই আনন্দ লুকিয়ে থাকে।

৪. সময়ের রেখায় ভেসে চলুন
ভবিষ্যতের কোনো পরিকল্পনা নিয়ে উত্তেজনা যেমন আনন্দ দিতে পারে, তেমনি পুরনো সুখস্মৃতিও মনে এনে দিতে পারে প্রশান্তি। শৈশবের কোনো মুহূর্ত, প্রিয় কারো সঙ্গে কাটানো সময়—এসব ফিরে দেখা ও আগাম আনন্দের পরিকল্পনাই আমাদের মানসিকভাবে পরিপূর্ণ করে তোলে।

সবশেষে বলতেই হয়, আনন্দ ধরা দেওয়ার বস্তু নয়— তাকে আহ্বান করতে হয়। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে আমরা ঠিক করতে পারি, আমরা কীভাবে নিজেকে প্রকাশ করব। সচেতনভাবে উপস্থিত থাকা, খেলাধুলা ও সৃষ্টিশীলতা মেশানো, উদ্দেশ্যবোধে মনোযোগ দেওয়া আর অতীত-ভবিষ্যতের সংযোগে জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গেলে, আনন্দ ঠিকই পথ খুঁজে নেয়—এমনকি কঠিন সময়েও।

সূত্র: সাইকোলজি টুডে

এম.কে.

×