
ছবি: প্রতিকী
অনেকেই মনে করেন কার্বোহাইড্রেট মানেই ওজন বৃদ্ধি। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি একটি ভুল ধারণা। আমাদের শরীরের সঠিক কার্যকারিতার জন্য কার্বোহাইড্রেট অপরিহার্য, বিশেষ করে মস্তিষ্ক ও পেশির কার্যকলাপের জন্য।
পুষ্টিবিদ ক্যারোলিন সাসি বলেন, “কার্বোহাইড্রেট আমাদের প্রধান শক্তির উৎস। এটা মস্তিষ্ক, নার্ভ সিস্টেম এবং ব্যায়ামের সময় পেশির জন্য সবচেয়ে কার্যকর জ্বালানি।”
এমনকি মস্তিষ্ক প্রতিদিন প্রায় ১১০ থেকে ১৪৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট ব্যবহার করে। আর কার্বোহাইড্রেট না খেলে শরীর প্রোটিন ও মাংসপেশি ভেঙে শক্তি নিতে শুরু করে—যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
তবে সব ধরনের কার্বস সমান নয়। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, প্রোটিন ও ফাইবারযুক্ত জটিল কার্বোহাইড্রেট খাওয়ার।
কেন প্রোটিনযুক্ত কার্বোহাইড্রেট খাবার ভালো?
জটিল কার্বোহাইড্রেট হজম হতে সময় নেয়, ফলে এটি রক্তে শর্করার ওঠানামা কমায়। এতে থাকা ফাইবার পেট ভরার অনুভূতি দেয় এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্যে সহায়তা করে। প্রোটিনও হজম ধীর করে এবং পেশি গঠনে সহায়তা করে।
প্রোটিন-সমৃদ্ধ এই কার্বস খাবারগুলো বিশেষ করে নিরামিষভোজীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তারা প্রাণিজ উৎস থেকে প্রোটিন পান না।
এছাড়া, এই খাবারগুলো রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখে, ওজন কমাতে সাহায্য করে এবং দীর্ঘস্থায়ী শক্তি দেয়।
প্রোটিনসমৃদ্ধ কার্বোহাইড্রেটসমূহ
১. গ্রীক দই
প্রতি কাপ গ্রীক দইয়ে থাকে প্রায় ৮ গ্রাম কার্বস ও ২০ গ্রাম প্রোটিন। এটি প্রোটিন ও কার্বস একসঙ্গে পাওয়ার অন্যতম সেরা উৎস।
২. কটেজ চিজ
গ্রীক দইয়ের মতোই প্রোটিন ও কার্ব সমৃদ্ধ। এর সোডিয়াম একটু বেশি হলেও যারা আলাদা টেক্সচার পছন্দ করেন তাদের জন্য এটি ভালো বিকল্প।
৩. মসুর ডাল
অর্ধেক কাপ মসুর ডালে থাকে ১২ গ্রাম প্রোটিন, ২৩ গ্রাম কার্বস ও ৮ গ্রাম ফাইবার। এটি ভাতের বিকল্প হিসেবে বা স্যুপ ও পাস্তা সসেও ব্যবহার করা যায়।
৪. ছোলা
অর্ধেক কাপ ছোলায় থাকে ৭ গ্রাম প্রোটিন, ২০ গ্রাম কার্বস ও ৬ গ্রাম ফাইবার। সালাদ, রোস্ট বা হালকা স্ন্যাকস হিসেবে খাওয়া যায়।
৫. বিভিন্ন ধরনের শিম
যেমন কালো শিম, রেড কিডনি, পিন্টো ইত্যাদি সবই ফাইবার ও প্রোটিনসমৃদ্ধ। এর মধ্যে কালো শিম সবচেয়ে ভালো, কারণ এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও থাকে।
৬. কুইনোয়া
প্রতি কাপ রান্না করা কুইনোয়ায় থাকে ৮ গ্রাম প্রোটিন, ৫ গ্রাম ফাইবার ও ৪০ গ্রাম কার্বস। এটি একটি সম্পূর্ণ প্রোটিন ও হেলদি ফ্যাটও থাকে।
৭. চিয়া বীজ
দুই টেবিল চামচ চিয়া বীজে থাকে ৬ গ্রাম প্রোটিন, ১০ গ্রাম ফাইবার ও ১২ গ্রাম কার্বস। এটি পুডিং, স্মুদি বা গ্রানোলায় ব্যবহার করা যায়।
৮. কুমড়ার বীজ
এক আউন্স বীজে থাকে ৮ গ্রাম প্রোটিন, ২ গ্রাম ফাইবার ও ৪ গ্রাম কার্বস। এটি স্ন্যাকস বা সালাদের উপর ছিটিয়ে খাওয়া যায়।
৯. এডামামে
প্রতি কাপ রান্না করা এডামামে-তে ১৯ গ্রাম প্রোটিন, ৮ গ্রাম ফাইবার ও ১৪ গ্রাম কার্বস থাকে। এটি ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডেও সমৃদ্ধ।
১০. সবুজ মটর
এক কাপ সবুজ মটরে থাকে ৯ গ্রাম প্রোটিন, ৯ গ্রাম ফাইবার ও ২৫ গ্রাম কার্বস। এটি অনেকেই সবজি মনে করলেও আসলে এটি একটি লেগিউম।
১১. আলু ও মিষ্টি আলু
একটি মাঝারি আলুতে থাকে ৩ গ্রাম প্রোটিন এবং একটি মিষ্টি আলুতে থাকে ২ গ্রাম। অন্যান্য খাবারের সঙ্গে মিলিয়ে খেলে প্রোটিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। যেমন: তিন প্রকার ডাল দিয়ে তৈরি চিলি আলুর উপর দিয়ে পরিবেশন করা যায়।
কার্বোহাইড্রেট মানেই খারাপ নয়—বরং সঠিক উৎস থেকে নেওয়া হলে তা আপনার শক্তি, মনোযোগ, হজম এবং পেশির জন্য দারুণ উপকারি হতে পারে। তাই ডায়েটে প্রোটিনযুক্ত জটিল কার্বস যুক্ত করুন, সুস্থ থাকুন।
সূত্র: https://www.today.com/health/diet-fitness/high-protein-carbohydrates-rcna202420
রবিউল হাসান