ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২ বৈশাখ ১৪৩২

জেনে নিন প্রতিদিন হাঁটলে আপনার শরীরে কী ঘটে

প্রকাশিত: ২২:১২, ২৫ এপ্রিল ২০২৫

জেনে নিন প্রতিদিন হাঁটলে আপনার শরীরে কী ঘটে

ছবি: প্রতিকী

বিশ্বের বিভিন্ন চিকিৎসক স্বাস্থ্য সংস্থাগুলো শরীরচর্চার গুরুত্ব বারবার তুলে ধরেছেন। তাদের মতে, সুস্বাস্থ্য সুস্থ জীবনযাপনের জন্য নিয়মিত হাঁটাহাঁটি এক চমৎকার সহজলভ্য অভ্যাস। প্রতিদিনের হাঁটা শুধু যে শরীরকে চাঙা রাখে তাই নয়, এটি মানসিক প্রশান্তি, ক্যালোরি ক্ষয় এবং আয়ু বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

. হৃদযন্ত্রকে করে শক্তিশালী

হৃদপিণ্ড একটি পেশি, যা হাঁটার মাধ্যমে আরও সবল হয় এবং কার্যক্ষমতা বাড়ে। এটি রক্ত চলাচল উন্নত করে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে।
নিয়মিত হাঁটা হৃদরোগ প্রতিরোধ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর। এটি অতিরিক্ত ওজন, উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল এবং দীর্ঘস্থায়ী স্ট্রেসের মতো হৃদরোগের ঝুঁকিও কমায়। ৭০ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিদের প্রতিদিন অতিরিক্ত ৫০০ পদক্ষেপ হাঁটলে হৃদরোগ, স্ট্রোক হার্টফেল হওয়ার ঝুঁকি ১৪% পর্যন্ত কমে যায়।

. হাড় সন্ধি করে মজবুত

নিয়মিত হাঁটা শরীরের পেশিগুলোকে শক্তিশালী করে। সপ্তাহে অন্তত তিন দিন ৩০ মিনিট করে জোরে হাঁটলে অস্থিক্ষয় কমে এবং নতুন হাড় গঠনের প্রক্রিয়াও ত্বরান্বিত হয়।

. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

মাত্র ৩০ মিনিটের একটি হাঁটা রক্তে রোগ প্রতিরোধক কোষের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত হাঁটেন, তারা ভাইরাসে আক্রান্ত হন কম এবং আক্রান্ত হলেও উপসর্গ থাকে তুলনামূলকভাবে হালকা।

. ওজন হ্রাসে সহায়ক

হাঁটলে ক্যালোরি ক্ষয় হয়, যা ওজন হ্রাসে সাহায্য করে। ১২৫ পাউন্ড ওজনের একজন ব্যক্তি ৩০ মিনিটে প্রায় ১০৭ ক্যালোরি ক্ষয় করতে পারেন, আর ১৮৫ পাউন্ড ওজন হলে ক্ষয় হয় প্রায় ১৫৯ ক্যালোরি। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা কম চর্বিযুক্ত খাদ্যাভ্যাস মিলে ওজন হ্রাসে ডায়েটের চেয়েও কার্যকর বলে প্রমাণ মিলেছে।

. মস্তিষ্কের জন্য উপকারী

মাঝারি গতির হাঁটাচলা মস্তিষ্কের সেই অংশগুলোর আকার বাড়াতে সাহায্য করে যেগুলো তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, স্মৃতি শেখার সঙ্গে জড়িত। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিয়মিত হেঁটে চলা আলঝেইমারসহ নানা ধরনের স্মৃতিভ্রংশ প্রতিরোধে কার্যকর হতে পারে।

. মানসিক স্বাস্থ্যে ইতিবাচক প্রভাব

হাঁটার সময় শরীরে এন্ডরফিন হরমোন নিঃসৃত হয়, যা মন ভালো করে। গবেষণায় দেখা গেছে, যত বেশি হাঁটবেন, তত ভালো লাগবে।
নিয়মিত হাঁটা স্ট্রেস, হতাশা মানসিক অস্বস্তির দিনগুলোকে প্রায় ৪০% পর্যন্ত কমিয়ে আনতে পারে।

. সামাজিক সংযোগ বৃদ্ধি করে

একসাথে হাঁটা এক ধরনের সামাজিক কার্যক্রম। এতে একাকীত্ব দূর হয়, সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং হাঁটার অভ্যাসে উৎসাহ দায়বদ্ধতা তৈরি হয়।

. আয়ু বাড়াতে সাহায্য করে

প্রতিদিন মাত্র ,০০০ পদক্ষেপ বেশি হাঁটলেই মৃত্যুঝুঁকি ২২% কমে যায়। প্রতিদিন যারা ১১,৫০০ পদক্ষেপ হাঁটেন, তাদের মৃত্যুঝুঁকি ৬৭% পর্যন্ত কম হয়। নিয়মিত দ্রুত গতিতে হাঁটা আয়ু বাড়ায়ধীরে হাঁটাদের তুলনায় এরা গড়ে ২০ বছর পর্যন্ত বেশি বাঁচতে পারেন।

কীভাবে হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলবেন?

কতক্ষণ হাঁটবেন: সপ্তাহে মোট ১৫০ মিনিট মাঝারি মাত্রার হাঁটা বা শারীরিক পরিশ্রম করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এটি প্রতিদিন ভাগ করে নেওয়া যায়।

কতদূর হাঁটবেন: জনপ্রিয় টার্গেট ১০,০০০ পদক্ষেপ হলেও গবেষণায় দেখা গেছে ,২০০ পদক্ষেপ থেকেই উপকার শুরু হয়।

৬০ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য উপকার পাওয়া যায় প্রতিদিন ,০০০-,০০০ পদক্ষেপে। ৬০ বছরের নিচে হলে ,০০০-১০,০০০ পদক্ষেপে সর্বোচ্চ উপকার মেলে।

কবে ফল পাবেনফল পেতে সময় লাগলেও, হাঁটা যতটুকুই হোক না কেন, তা না হাঁটার চেয়ে ভালো। ধীরে ধীরে অভ্যাস তৈরি করাই মূল কথা।

বিশেষ পরামর্শ: হাঁটা শুরুর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উত্তম।

 

সূত্র: https://www.verywellhealth.com/benefits-of-walking-every-day-11719538

রবিউল হাসান

×