
ছবি: সংগৃহীত
জীবনের মোড়ে মোড়ে অনেক সময়ই প্রয়োজন হয় নতুন করে ভাবার, প্রশ্ন তোলার কিংবা পরিচিত পথ থেকে সরে এসে অন্য রাস্তায় পা বাড়ানোর সাহসের। এপ্রিল মাসে প্রকাশিত আত্ম-উন্নয়নমূলক বইগুলো আমাদের ঠিক সেই আহ্বানই জানায়—নিজেকে আরও ভালোভাবে জানার, পরিবর্তনকে বরণ করার এবং সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ঠিক করে এগিয়ে যাওয়ার। জীবনের ছোট-বড় নানা সংকটে এই দশটি বই হতে পারে আপনার পথের আলোকবর্তিকা।
১. প্রশ্ন করো এই বইকে — ভিকি ট্যান গ্রাহ্যযোগ্য নকশার মাধ্যমে তৈরি একটি অভিনব বই, যেখানে পাঠকেরা নিজের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলোর জন্য বইটিকেই প্রশ্ন করতে পারে! ছয়টি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে সাজানো এই বই—জীবন, স্বাস্থ্য, সম্পর্ক, কাজ, মানসম্পন্ন সময় এবং অস্তিত্ববাদী উদ্দেশ্য—পাঠকদের এক নতুন ভাবনার জগতে নিয়ে যায়। বইজুড়ে রয়েছে ৩৫টিরও বেশি ‘কগনিটিভ বায়াস’ বা চিন্তাগত পূর্বাগহের বিশ্লেষণ, যা আমাদের দৈনন্দিন সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব ফেলে। মজাদার চিত্র ও প্রশ্ন-উত্তরভিত্তিক বিন্যাসে লেখা বইটি পাঠকদের জন্য হতে পারে এক আনন্দঘন আত্ম-আবিষ্কারের যাত্রা।
২. দ্য নেক্সট ডে — মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চ গেটস জীবনের মোড় ঘোরানো মুহূর্তগুলিতে কীভাবে স্থির থাকতে হয়, তা নিয়ে অনুপ্রেরণামূলক এক আলাপ। নিজের জীবনের বড় পরিবর্তনের অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া শিক্ষাগুলোকে সুন্দরভাবে ভাগ করে নিয়েছেন মেলিন্ডা। এই বইটি পরিবর্তনের মুহূর্তগুলোকে ভয় নয়, বরং এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ হিসেবে দেখার আহ্বান জানায়।
৩. রিভার্স দ্য সার্চ — ম্যাডেলিন ম্যান চাকরি খোঁজা নয়, চাকরিকে যেন আপনাকে খুঁজে পায়—এই দর্শন নিয়েই লেখা হয়েছে বইটি। পেশাগত জগতে কীভাবে নিজের মূল্য নির্ধারণ করে সঠিক জায়গায় পৌঁছাতে হয়, তা নিয়ে একটি বাস্তবসম্মত, কৌশলনির্ভর গাইড।
৪. আমি ভাবিনি এমন হবে — জেসিকা এন. টার্নার হৃদয়ভাঙা, অর্থনৈতিক চাপ, স্বাস্থ্যসংকট বা জীবনের হতাশাজনক মুহূর্ত—সবকিছু নিয়ে ভাবতে শেখায় এই বই। প্রত্যাশা আর বাস্তবতার মাঝে তৈরি হওয়া ফাঁক কিভাবে মানসিক শান্তি আর নতুন সম্ভাবনার ভিত্তি হতে পারে, তা দেখায় টার্নার।
৫. নতুন কিছু নয় — অ্যাশলি পাইপার অতিরিক্ত ভোগবাদ ও অপ্রয়োজনীয় খরচের বিরুদ্ধে এক শক্ত বার্তা। ৩০ দিনের এক চ্যালেঞ্জের মাধ্যমে কীভাবে আপনি কম খরচে, সচেতনভাবে এবং মানসিকভাবে সুস্থ জীবনযাপন করতে পারেন, তার দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বইটিতে।
৬. রাইজ অ্যাবাভ — স্কট ব্যারি কাউফম্যান ‘ভিক্টিম মাইন্ডসেট’ বা নিজেকে সব সময় বিপর্যস্ত ভাবার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে এসে কীভাবে নিজেকে আত্মবিশ্বাসী ও দায়িত্বশীল করে তোলা যায়, সে বিষয়ে মনোবিজ্ঞানভিত্তিক পরামর্শে ভরপুর এক দারুণ বই।
৭. ক্লিক — জ্যাক ন্যাপ ও জন জেরাটস্কি সৃজনশীল পণ্যের ডিজাইন ও বাজারজাতকরণে বিশ্বখ্যাত দুই লেখকের লেখা এই বইটি নতুন কিছু শুরু করতে চাওয়া যেকোনো ব্যক্তি বা টিমের জন্য কার্যকর হাতিয়ার। ১০ ধাপের "ফাউন্ডেশন স্প্রিন্ট" পদ্ধতি আপনাকে শেখাবে কীভাবে স্মার্টভাবে কাজ শুরু করে দ্রুত ফল পাওয়া যায়।
৮. শ্যাটারপ্রুফ — টাশা ইউরিচ শুধু সহনশীলতা নয়, বরং পরিবর্তনকে নিজের পক্ষে কাজে লাগানোর জন্য আত্মবিশ্বাস ও আত্মজ্ঞান তৈরির উপর জোর দিয়েছে এই বই। চার ধাপের প্রক্রিয়ায় কিভাবে আপনি নিজের ট্রিগার, ছায়া ও পিভট পয়েন্ট চিনে নিতে পারেন, তা শেখায় ইউরিচ।
৯. দ্য বুক অব আলকেমি — সুলেইকা জাওয়াদ জার্নালিং বা ডায়েরি লেখাকে একধরনের সৃজনশীল সাধনা হিসেবে তুলে ধরেছেন লেখিকা। ভালোবাসা, ভয়, অহং, উদ্দেশ্য—এই দশটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে গড়ে তোলা বইটি জীবনের সংকটপূর্ণ সময়ে আত্মপ্রকাশের উপায় হিসেবে লেখালেখিকে কাজে লাগানোর কথা বলে।
১০. হাউ টু ফল ইন লাভ উইথ কোয়েশ্চনস — এলিজাবেথ ওয়েইনগার্টেন সব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার বদলে যদি প্রশ্নগুলোকেই ভালোবাসতে শিখি? অনিশ্চয়তার সময়ে কীভাবে অজানাকে ভয় না পেয়ে গ্রহণ করা যায়, এবং তার মধ্য থেকেই জীবনের গভীরতম অর্থ খুঁজে পাওয়া যায়—সেই ধারণা নিয়েই লেখা এই বই।
জীবন বদলায় বইয়ের পাতায় পাতায়। এই দশটি আত্ম-উন্নয়নমূলক বই—প্রশ্ন করা থেকে শুরু করে নিজের মধ্যে ফিরে আসা পর্যন্ত—আমাদের শেখায় কীভাবে আরও মানবিক, বোধসম্পন্ন ও সচেতন হয়ে ওঠা যায়। আপনি যেখানেই থাকুন, এই বইগুলোর প্রতিটিই হতে পারে আপনার নিজস্ব অভিযাত্রার শ্রেষ্ঠ সহযাত্রী।
আসিফ