
একসাথে বিছানায় ঘুমাতে গিয়ে অনেক দম্পতিই পড়েন বিপাকে। কেউ ঘুমের মধ্যে কাত হয়, কেউ আবার চাদর টেনে নেয় বা তাপমাত্রা নিয়ে হয় বিবাদ—ফলে গভীর ঘুম যেমন ব্যাহত হয়, তেমনই প্রভাব পড়ে সম্পর্কেও। এই সমস্যা সমাধানে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান স্লিপ মেথড, যা সহজ অথচ কার্যকর।
পদ্ধতিটি কী?
এই পদ্ধতিতে একসাথে একই বিছানায় ঘুমালেও, প্রত্যেকেই ব্যবহার করেন নিজস্ব চাদর বা কম্বল। মানে, একই বিছানা কিন্তু আলাদা আলাদা ডুভে (duvet)। ঘুম বিজ্ঞানী ড. মাইকেল গ্রাডিসার বলেন, “ঘুমের সময় সঙ্গীর গতিবিধি বা তাপমাত্রাজনিত বিরক্তি কমাতে এটি দারুণ কার্যকর।”
কেন জনপ্রিয়?
২০২৩ সালের অক্টোবরে টিকটকে ভাইরাল হয় এই পদ্ধতি। ইনফ্লুয়েন্সার এরিকা স্টলম্যান ডাউডি দেখান, ডেনমার্কে ভ্রমণের সময় তিনি ও তার স্বামী আলাদা ডুভে ব্যবহার করে দারুণ ঘুমিয়েছেন। এর পর থেকেই নেটিজেনদের আগ্রহ বেড়েছে।
পদ্ধতির সুফল কী কী?
ব্যক্তিগত তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ:
যার যেভাবে ঘুমাতে আরাম, সে অনুযায়ী চাদর ব্যবহার করতে পারেন। কেউ চাইলে হালকা বা ঠান্ডা কম্বল নিতে পারেন, কেউ আবার গরম চাদর ব্যবহার করতে পারেন।
ঘুমের বিঘ্ন কমে:
যদি একজন ঘুমের মধ্যে বেশি নাড়াচাড়া করেন, তা আর অপরজনকে বিরক্ত করবে না। এমনকি ভিন্ন ঘুমের রুটিন হলেও সমস্যা হবে না।
সস্তা বিকল্প:
যারা ‘স্লিপ ডিভোর্স’ বা আলাদা ঘুমানোর কথা ভাবেন, তাদের জন্য এটা সস্তা ও সহজ সমাধান।
কিছু সম্ভাব্য অসুবিধাও আছে
ঘনিষ্ঠতা কমে যাওয়ার ভয়:
একসাথে একটি চাদরের নিচে থাকলে যেমন জড়াজড়ি বা ঘনিষ্ঠতার সুযোগ থাকে, আলাদা ডুভেতে তা একটু কমে যেতে পারে।
বিছানা গুছাতে ঝামেলা:
দুটি ডুভে মানে অতিরিক্ত ধোয়া ও বিছানা গুছানোর বাড়তি সময়।
সব সমস্যার সমাধান নয়:
ঘুমের গুরুতর সমস্যা—যেমন ঘুমের মধ্যে হাঁটা, ঘন ঘন নড়াচড়া বা স্নোরিং—এই পদ্ধতিতে পুরোপুরি সমাধান হয় না।
সঙ্গীর সঙ্গে ভালো ঘুম পেতে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান পদ্ধতির বাইরেও যা করণীয়
একই বিছানায় ঘুমানো অনেক দম্পতির জন্যই আরামের থেকে সমস্যা তৈরি করে বেশি। স্ক্যান্ডিনেভিয়ান ঘুম পদ্ধতি এই সমস্যা কমাতে সহায়তা করলেও, আরও কিছু পরামর্শ রয়েছে যা সঙ্গীর সঙ্গে শান্তিময় ঘুম নিশ্চিত করতে পারে। ঘুম বিশেষজ্ঞদের মতে, নিচের কিছু টিপস মেনে চললে দাম্পত্য জীবন যেমন সুস্থ থাকবে, তেমনি ঘুমও হবে গভীর।
সঠিক ম্যাট্রেস নির্বাচন করুন:
সব ম্যাট্রেসই দম্পতির জন্য উপযুক্ত নয়। এমন ম্যাট্রেস নির্বাচন করুন, যার এজ সাপোর্ট ভালো এবং ‘মোশন আইসোলেশন’ ফিচার থাকে, যাতে একজন নড়াচড়া করলেও অপরজন বিরক্ত না হন। এটি নিঃসন্দেহে ঘুমের মান উন্নত করবে।
মাঝেমধ্যে আলাদা ঘুমানোও হতে পারে সমাধান:
‘স্লিপ ডিভোর্স’ শুনতে অদ্ভুত লাগলেও, মাঝেমধ্যে আলাদা ঘুমানো দাম্পত্য সম্পর্ক ও ঘুমের মান উভয়ই উন্নত করতে পারে। ঘুম বিজ্ঞানী গ্রাডিসার বলেন, “সপ্তাহে এক-দু’দিন নিজের মতো ঘুমালেও সেটা মানসিক প্রশান্তি এনে দিতে পারে। দিনের বেলা সেই শক্তি ব্যবহার করুন সম্পর্ক দৃঢ় করতে।”
একজনের ঘুম টাইম অন্যজনের জানা থাকা জরুরি:
ঘুমের সময়ের স্বাভাবিক প্রবণতা (ক্রোনোটাইপ) জানলে একজন অন্যজনের সঙ্গে সমন্বয় করে নিতে পারেন। ঘুম মনোবিদ ড. জেড উ বলেন, “যখন একে অপরের ঘুমের ধরন বোঝা যায়, তখন সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলাটা সহজ হয়। সম্পর্কেও কম হয় টানাপোড়েন।”
প্রযুক্তির ব্যবহার করুন ঘুমের উন্নয়নে:
স্মার্ট অ্যালার্ম বা ঘুম ট্র্যাকিং ডিভাইসের মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করলে ঘুমের মান ভালো হতে পারে। গ্রাডিসার বলেন, “স্মার্ট অ্যালার্ম আপনাকে হালকা ঘুমের সময়ে জাগায়, এতে ঘুম ভাঙার পর ক্লান্তি কম থাকে এবং সঙ্গীর ঘুমেও ব্যাঘাত হয় না।”
শব্দ প্রতিরোধ করুন:
যদি সঙ্গীর নাক ডাকার অভ্যাস থেকে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে, তাহলে ইয়ারপ্লাগ বা স্লিপ হেডফোন ব্যবহার করতে পারেন। তবুও সমস্যা থাকলে বিশেষ অ্যান্টি-স্নোর ডিভাইস ব্যবহার বা চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াও জরুরি।
সম্পর্ক বাঁচাতে ভালো ঘুম দরকার। আর ভালো ঘুম পেতে প্রয়োজন একটু বাড়তি সচেতনতা। স্ক্যান্ডিনেভিয়ান ঘুম পদ্ধতি হতে পারে সেই ছোট্ট পরিবর্তন, যা বদলে দিতে পারে সম্পর্কের রসায়ন।
রাজু