
ছবিঃ সংগৃহীত
কিছু মানুষ আছেন, যাদের সঙ্গে মিশতে গেলেই বিপত্তি বাধে। কখনো সহকর্মী, কখনো পরিবার বা বন্ধুরা—তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করা চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়ায়। তবে ভালো খবর হলো, এমন কঠিন পরিস্থিতি সামলাতে সাহায্য করতে পারে কিছু মূল্যবান বই।
পেশাজীবনের শুরুতে এক রাগী বসের অধীনে কাজ করতেন এক নারী। অফিসের গুজব অনুযায়ী, তিনি তার এক সহকর্মীর দিকে জুতা ছুড়ে মেরেছিলেন। এমন এক বসের রোষানলে পড়ার ভয়ে তিনি সবসময় সন্ত্রস্ত থাকতেন। একসময় এক বন্ধু তাকে একটি বই উপহার দেন—“Coping With Difficult Bosses” (রবার্ট এম. ব্রামসন, ১৯৯২)। এই বই তাকে আত্মবিশ্বাস জোগায়, শেখায় কীভাবে এমন বসের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হয়, নাম ধরে ডাকতে হয় এবং চোখে চোখ রাখতে না পারলেও কপালে তাকিয়ে থাকার কৌশল।
যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এমেরিটাস ও পরিবারবিষয়ক বিশেষজ্ঞ উইলিয়াম ডোহার্টি বলেন, কঠিন মানুষের সঙ্গে সম্পর্কের সমস্যা সামলাতে বই বড় সহায় হতে পারে। তবে তিনি সতর্ক করেন, যেসব বই শুধু অন্য পক্ষের দোষে ফোকাস করে, সেগুলো এড়িয়ে চলাই ভালো। কারণ বেশিরভাগ সম্পর্ক সমস্যা দুই পক্ষের পারস্পরিক আচরণ থেকেই জন্ম নেয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নিচের ৬টি বই আপনাকে এমন সম্পর্কের জট খুলতে সাহায্য করতে পারে:
১. “How to Win Friends and Influence People” — ডেল কার্নেগি
এই ক্লাসিক বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৩৬ সালে। এতে কার্নেগি ব্যাখ্যা করেছেন কীভাবে ব্যক্তিগত সমস্যায় পড়লে তা দূর করা যায়। তিনি দেখিয়েছেন, অন্যের ভুল ধরার আগে নিজের ভুল স্বীকার করলে, তারা আপনার কথায় মনোযোগ দেয় বেশি।
এনওয়াইইউ-র অধ্যাপক জোনাথন হেইড বলেন, তিনি তার শিক্ষার্থীদের এই বই পড়তে দেন এবং নিজেও উপকৃত হয়েছেন। বইটি তাকে শিখিয়েছে, তর্ক না করে শুনতে, শিখতে ও কৌশলে বোঝাতে।
২. “Why Won’t You Apologize?” — হ্যারিয়েট লার্নার
২০১৭ সালে প্রকাশিত এই বইতে ড. লার্নার ব্যাখ্যা করেছেন, ক্ষমা চাওয়ার গুরুত্ব ও এর জটিল মনস্তত্ত্ব। কেউ কেন বারবার ক্ষমা চায়, আবার কেউ কেন কখনো বলে না “আমি দুঃখিত”—তাও বিশ্লেষণ করেছেন তিনি।
ড. ডোহার্টি বলেন, এটি সম্ভবত তিনি পড়া সবচেয়ে কার্যকর আত্ম-উন্নয়নমূলক বই। এতে সম্পর্কের ভুল-ভ্রান্তিকে স্বাভাবিক হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।
৩. “The Asshole Survival Guide” — রবার্ট আই. সাটন
২০১৭ সালে প্রকাশিত এই বইটি তার আগের বেস্টসেলার “The No Asshole Rule”-এর অনুসরণে লেখা। এখানে তিনি অবমাননাকর ও অসভ্য আচরণ সামলানোর কৌশল দিয়েছেন—রসিকতা দিয়ে পরিস্থিতি হালকা করা, বা প্রমাণ সংরক্ষণ করে প্রয়োজনে এইচআর-এ যাওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ টিপস।
অ্যাডাম গ্রান্ট, পেনসিলভানিয়া ইউনিভার্সিটির প্রফেসর বলেন, তিনি এই বই সবচেয়ে বেশি মানুষকে সাজেস্ট করেছেন।
৪. “The Defining Decade” — মেগ জে
২০১২ সালে প্রকাশিত এই বইতে বলা হয়েছে, বিশের দশক হলো জীবনের ভিত্তি গড়ার সময়।
ড. জে দেখিয়েছেন, কঠিন মানুষের সঙ্গে লড়াই না করে যদি কেউ সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসে, তবে সে আত্মনিয়ন্ত্রণ ও আত্মবিশ্বাস গঠনের সুযোগ হারায়।
সাইকোথেরাপিস্ট ড্যাফনি ডে মার্নেফ বলেন, এই বই শুধু তরুণদের নয়, সব বয়সের জন্যই প্রাসঙ্গিক।
৫. “Difficult Conversations” — ডগলাস স্টোন, ব্রুস প্যাটন ও শিলা হিন
১৯৯৯ সালে প্রকাশিত এই বইটি দেখিয়েছে কীভাবে জটিল কথোপকথন দ্রুত নেতিবাচকতা ছড়ায়।
থেরাপিস্ট এলিজাবেথ আর্নশ বলেন, তার ক্লায়েন্টদের সঙ্গে এই বইটি বারবার কাজে লাগে।
এতে উভয় পক্ষকে তাদের নিজ নিজ ভূমিকা স্বীকার করার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের পথ দেখানো হয়।
৬. “The Art of Possibility” — রোজামান্ড স্টোন জ্যান্ডার ও বেঞ্জামিন জ্যান্ডার
২০০০ সালে প্রকাশিত এই বইটি মূলত নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে জীবন ও সম্পর্ককে ইতিবাচকভাবে দেখার কৌশল শেখায়।
বইটিতে বলা হয়েছে, মানুষকে “কঠিন” বা “বিপজ্জনক” হিসেবে চিহ্নিত না করে, বরং তাদের অভ্যন্তরীণ কণ্ঠস্বর বুঝে সহানুভূতির সঙ্গে এগোলে সম্পর্ক আরও সহজ হয়।
বিখ্যাত মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ সেথ গডিন বলেন, এটি সহানুভূতি শেখার সবচেয়ে ভালো বই।
সূত্রঃ https://www.nytimes.com/2025/04/22/well/difficult-people.html#
ইমরান