ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১১ বৈশাখ ১৪৩২

বয়স্ক নারীর জীবন সংগ্রাম

রাজু মোস্তাফিজ

প্রকাশিত: ২০:২৬, ২৪ এপ্রিল ২০২৫

বয়স্ক নারীর জীবন সংগ্রাম

বাঁশের কয়েকটি খুঁটির ওপর দাঁড় করানো ছোট্ট একটি ঝুপড়ি ঘর। পুরনো ঢেউটিন আর পলিথিন দিয়ে  মোড়ানো নড়বড়ে এ ঘরটিতে মানবেতর দিন কাটছে পঞ্চাশ ঊর্ধ্ব লাইলী বেওয়া। স্বামী সন্তান কেউ নেই।খেয়ে না খেয়ে চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। জীবনের এই প্রান্তে চেয়ারম্যান বা মেম্বারের কাছে পায়নি কোনো বয়স্ক বা বিধবা ভাতার কার্ড। মানুষের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে এখনো জীবনটাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। আসছে বর্ষা মৌসুমে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়তে হবে তাকে। বৃৃষ্টির সেই দিনগুলোতে দিনের পর দিন অন্যের বাড়িতে নির্ঘুম রাত কাটাতে হবে প্রতি বছরের মতো। জীবনের এই পড়ন্ত বেলায় একটি ঘর করে দেওয়ার জন্য কেউ যদি তাকে সহায়তা করতো তাহলে বাকি জীবনটা নিশ্চিন্তে কাটাতে পারতেন।
কুড়িগ্রাম শহরের পৌরসভা এলাকার ৬ নং ওয়ার্ডের টাপু ভেলাকোপা গ্রামের মৃত আকমল মিয়ার স্ত্রী নিঃসন্তান লাাইলী বেগম। তিন দশকের বেশি সময়ে আগে তার স্বামী হঠাৎ হার্ট এ্যাটাকে মারা যান। তারপর থেকে একাই জীবন যুদ্ধ চালিয়ে আসছেন। প্রতিদিন খুব ভোরে উঠে নামাজ পড়েই বাড়ি থেকে বের হন কাজের সন্ধানে। ছুটা কাজ করেন বিভিন্ন বাড়িতে। প্রতিদিন কাজ পান না তিনি। যেদিন কাজ পান সেদিন দুই বেলা খাবার জোটে আর তা না হলে উপোস থাকতে হয়। বয়সের ভারে বেশি কাজও করতে পারেন না। লাইলী বেগমের জীবনে আর নেই কোনো স্বপ্ন। শুধু জীবনটাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য জীবনের পড়ন্ত বেলাও তাকে কাজ করতে হয় অবিরাম।
শুধু একটি ঘরের জন্য স্থানীয় মেম্বার ও চেয়ারম্যানের কাছে মাসের পর মাস ঘুরেছেন। গরিব বলে তাকে কেউ পাত্তা দেননি। দেননি কোনো বয়স্ক অথবা বিধবা ভাতার কার্ড। তিনি অভিযোগ করেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে কোনো টাকা দিতে পারেননি বলেই তিনি কোনো কার্ড পাননি।
লাইলী বেওয়া জানান, তার জন্মই যেন আজন্ম দুঃখে গড়া। বাবার বাড়িতে অভাবের সংসার ছিল তাদের। মাত্র ১২ বছর বয়সে তার বিয়ে হয়েছিল। তখন তার পুতুল খেলার বয়স। জীবন সংসার কিছুই বোঝেনি। মাত্র ৭ বছর সংসার করার পর হঠাৎ তার স্বামী হার্ট এ্যাটাকে মারা যান। চোখের সামনেই জীবনের সব রঙিন স্বপ্ন চুরমার হয়ে যায়। স্ত্রীর আগে স্বামী মারা যাওয়ার সামাজিক কুসংস্কারগুলো তখন গলা টিপে ধরে। আত্মীয়স্বজন পাড়া প্রতিবেশীর নানা লাঞ্ছনা নীরবে সহ্য করেন তিনি। বাবা-মা দ্বিতীয় বিয়ে দিতে চাইলেও মানুষের সমালোচনায় তা হয়ে ওঠেনি। নিঃসন্তান লাইলী বেগম যেন বেঁচে আছেন জীবন্ত লাশ হয়ে। প্রতিবেশী সালাম মিয়া জানান, লাইলী বেওয়ার দুঃখের শেষ নেই। তার একমাত্র ভাতিজা মাঝে মাঝে খোঁজ নিলেও কোনো সহায়তা করে না। সে ঢাকায় শ্রমিকের কাজ করে। মেম্বার চেয়ারম্যান যদি একটা বিধবা ভাতা কিংবা বয়স্ক ভাতা করে দিত তাহলে লাইলীর উপকার হতো। তিনি আরও জানান, তার একটি ঘর নেই। সরকার যদি একটি ঘরের ব্যবস্থা করত তাহলে উপকার হতো।
৬নং ওয়ার্ডের সাবেক পৌর কমিশনার মো. টুংকু মিয়া জানান, বিধবা লাইলী বেগমের  সঙ্গে আমার পরিচয় আছে। গত বছর উনার বিধবা কার্ড হওয়ার কথা ছিল সঙ্গত কারণে হয়নি। তবে এ বছরেই হয়ে যাবে। তার বিধবা ভাতার জন্য অনলাইন নাম সাজেস্ট করা হয়েছে খুবই দ্রুত কার্ডের ব্যবস্থা হবে।

প্যানেল

×