
ছবি: সংগৃহীত।
আধুনিক টিপস নয়, বরং ইতিহাস থেকে পাওয়া এক সহজ রুটিনই বদলে দিয়েছে আমার সকাল—এবং পুরো দিন।
আমি বহু বছর ধরে সচেতনতা (মাইন্ডফুলনেস), মনোবিজ্ঞান এবং উৎপাদনশীলতা নিয়ে পড়াশোনা করেছি। বিভিন্ন আধুনিক কৌশলও ব্যবহার করেছি—যেমন বুলেটপ্রুফ কফি, হ্যাবিট স্ট্যাকিং, ডোপামিন ডিটক্স—যা আপনি নাম বলবেন, তা-ই আমি হয়তো করে ফেলেছি।
কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, যে সকালের রুটিনটি আমার জীবনে প্রোডাক্টিভিটির অভাবনীয় উত্থান ঘটিয়েছে, সেটি কোনো সিলিকন ভ্যালির বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে নয়—বরং ১৮০০ শতকের জীবনধারা থেকে অনুপ্রাণিত।
হ্যাঁ, সেই সময়ের কথা—যখন ছিল না ইন্টারনেট, স্মার্টফোন, কিংবা গুগল ক্যালেন্ডারের রিমাইন্ডার। ছিল কেবল সরলতা, শৃঙ্খলা, আর ধীরগতির জীবন।
কীভাবে শুরু হলো এই যাত্রা?
একদিন হঠাৎ বেঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিন, চার্লস ডারউইন এবং ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের লেখা কিছু চিঠি ও ডায়েরি হাতে আসে। সেখানে লক্ষ্য করলাম—তাঁদের সকালের শুরু ছিল অত্যন্ত নিয়মিত, কোনো তাড়াহুড়া ছাড়াই। সময় ছিল গভীর চিন্তা, শারীরিক নড়াচড়া এবং আত্মপর্যালোচনার জন্য বরাদ্দ।
ভাবলাম—আমাদের আধুনিক সকাল কি খুব বেশি তথ্য-অভিভূত হয়ে যাচ্ছে?
৩০ দিনের এক পরীক্ষা
আমি সিদ্ধান্ত নিলাম—৩০ দিনের জন্য ১৮০০ শতকের অনুপ্রেরণায় তৈরি একটি সকাল বেছে নেব। স্ক্রিন নয়, ফোন নয়—শুধু নিরব, মনোযোগী সকাল।
এই ছিল আমার রুটিন, এবং কেন এটি এত কার্যকর ছিল:
১. প্রতিদিন একই সময়ে ঘুম থেকে উঠা (সপ্তাহান্তেও)
৫:৩০টায় ঘুম থেকে উঠতাম। শুধু অভ্যাস গড়ার জন্য। দিনের শুরুটা ছিল শান্ত, অপ্রতিবন্ধক—যেখানে আমি, আমার চিন্তা এবং নরম সকালের আলো ছাড়া কিছু ছিল না।
২. স্ক্রলিং নয়, দিন শুরু হতো 'নিরবতা' দিয়ে
আমি প্রতিদিন ১০ মিনিট করে জার্নাল লিখতাম। কৃতজ্ঞতা, পরিকল্পনা ও অনুভূতির কথা লিখে মনকে স্থির করতাম।
৩. শরীরচর্চা মানে ছিল না জিমে ছুটে যাওয়া
৩০ মিনিট হাঁটা বা ধীরে বাইক চালানোই ছিল মূল লক্ষ্য। শুধু শরীর জাগানো, ক্যালোরি পোড়ানো নয়।
৪. প্রতিদিন একই ধরনের সহজ নাস্তা
ওটমিল, কলা, চিয়া সিড ও দারচিনি—প্রতিদিন একই খাবার। এতে সময় এবং মানসিক শক্তি সাশ্রয় হতো।
৫. ফোন ছাড়াই ৯০ মিনিট গভীর কাজ
সকালে ৯০ মিনিট শুধু লেখালেখি বা চিন্তামূলক কাজ করতাম। ফোন বা ইন্টারনেট একদমই না।
৬. ডিজিটাল অ্যাপ নয়, হাতে লেখা দিনের পরিকল্পনা
শুধু ৩টি গুরুত্বপূর্ণ কাজ লিখতাম, এবং সময় ভাগ করে নিতাম। এতে ফোকাস বজায় থাকত।
অপ্রত্যাশিত ফলাফল কী ছিল?
১. প্রোডাক্টিভিটি বেড়েছে, কিন্তু মানসিক চাপ কমেছে
২. মস্তিষ্কে ছিল স্পষ্টতা, ধোঁয়াশা কম
৩. সারা দিন সময়ের দৌড়ে পিছিয়ে পড়ার অনুভূতি আসেনি
৪. সৃজনশীলতা বেড়েছে
৫. সকালে উঠেই দিনটিকে নিজের মতো করে গড়া সম্ভব হয়েছে
সরলতা কখনোই পুরনো হয় না। আমরা হয়তো সবকিছু ফেলে বনে গিয়ে বসবাস করতে পারি না, কিন্তু একটু সরলতা এনে দিলে সকালের গতি বদলে যায়। ১৮০০ সালের রুটিন এত ভালো কাজ করেছে কারণ এটি ছিল সহজ, সচেতন এবং মানুষকেন্দ্রিক।
আজকের প্রযুক্তিনির্ভর জীবনে সত্যিকারের মনোযোগ আর শান্তির জন্য, হয়তো আমাদের দরকার... একটু ইতিহাসে ফিরে যাওয়া।
সায়মা ইসলাম