
ছবি: সংগৃহীত।
এক দশকেরও বেশি সময় ধরে অনলাইন ব্যবসায় অভিজ্ঞ এক উদ্যোক্তা জানিয়েছেন, অর্থ সম্পর্কিত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা তিনি পেয়েছেন সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন অভ্যাস থেকে, যা নীরবে তাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত করছে। অধিকাংশ অভ্যাসই আপাতদৃষ্টিতে নিরীহ মনে হলেও, এগুলোই মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোকে সঞ্চয়ের পথ থেকে বিচ্যুত করে দেয় এবং মাসের শেষে বেতন-নির্ভর করে রাখে।
তিনি উল্লেখ করেছেন, এমন ৯টি ‘ছলনাময়’ অভ্যাস রয়েছে, যেগুলোর কারণে উপার্জন বাড়লেও তা সঞ্চয়ে রূপ নেয় না। প্রতিটি অভ্যাসের সঙ্গে দিয়েছেন একটি করে সহজ সমাধান।
১. আয় বাড়লেই খরচ বাড়ানো (লাইফস্টাইল ইনফ্লেশন): বেতন বাড়ার পর নতুন গাড়ি কেনা কিংবা বিলাসী খাবার খাওয়া অনেকের অভ্যাস। এটি ‘লাইফস্টাইল ইনফ্লেশন’ নামে পরিচিত। এর ফলে সঞ্চয়ের হার অপরিবর্তিত থেকে যায়।
সমাধান: বেতন বাড়ার পর তিন মাস আগের বাজেটেই চলুন এবং বাড়তি অর্থ সরাসরি বিনিয়োগ করুন।
২. ক্ষুদ্র খরচকে উপেক্ষা করা: প্রতিদিনের ছোটখাটো খরচ যেমন কফি, রাইড শেয়ার ইত্যাদি একত্রে বিশাল অর্থ ব্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
সমাধান: এক সপ্তাহের জন্য সব ১০ ডলারের নিচের খরচ লিখে রাখুন। এ তালিকাই খরচ কমানোর উৎসাহ জোগাবে।
৩. অব্যবহৃত সাবস্ক্রিপশন চালু রাখা: অনেকেই স্ট্রিমিং বা অ্যাপ সাবস্ক্রিপশনের জন্য অর্থ দেন, অথচ তা ব্যবহার করেন না।
সমাধান: প্রতি তিন মাসে ১৫ মিনিট সময় নিয়ে অপ্রয়োজনীয় সাবস্ক্রিপশন বাতিল করুন।
৪. ক্রেডিট কার্ডে কেবল ন্যূনতম পরিশোধ করা: এতে করে দীর্ঘমেয়াদে সুদের বোঝা বাড়ে এবং ঋণ শোধে সময় লাগে অনেক বেশি।
সমাধান: ছোট ঋণ আগে শোধ করুন অথবা সর্বোচ্চ সুদের ঋণ থেকে শুরু করুন।
৫. খেলনার মতো জিনিস দীর্ঘ কিস্তিতে কেনা: গাড়ি, মোবাইল বা আসবাবপত্র দীর্ঘ মেয়াদে কিস্তিতে কিনলে তার প্রকৃত মূল্য বেড়ে যায়।
সমাধান: অন্তত ২০% ডাউন পেমেন্ট এবং ৩ বছরের মধ্যে পরিশোধের অঙ্গীকার রাখুন।
৬. ট্যাক্স রিফান্ড বা বোনাসকে অতিরিক্ত অর্থ ভাবা: অনেকে এই অর্থ খরচ করে ফেলেন, অথচ জরুরি সঞ্চয় গড়ে ওঠে না।
সমাধান: রিফান্ডের ৮০% সঞ্চয়ে রাখুন, বাকি ২০% খরচ করুন আনন্দের জন্য।
৭. ‘Buy Now, Pay Later’-এর অতিরিক্ত ব্যবহার: এতে অনেক সময় একাধিক কিস্তির দায়ে পড়তে হয়, যা আয়কে ক্ষয় করে।
সমাধান: “Pay in 4” ক্লিক করার আগে ভাবুন, আপনি কি পুরো টাকা এখন দিতে পারবেন?
৮. বারবার বাড়তে থাকা বিল নিয়ে উদাসীন থাকা: মোবাইল, ইন্টারনেট বা ইন্স্যুরেন্স বিল অনেক সময় অযথা বাড়ানো হয়।
সমাধান: প্রতি ছয় মাসে একটি কোম্পানিকে ফোন করে বর্তমান বাজারদরের সঙ্গে তুলনা করুন।
৯. মাস শেষে সঞ্চয়ের চিন্তা: বেশিরভাগ সময় মাস শেষে কিছুই বাঁচে না।
সমাধান: বেতন ঢোকার দিনই ১০–২০% অর্থ সঞ্চয়ে ট্রান্সফার করুন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ছোট ছোট পরিবর্তনগুলোই দীর্ঘমেয়াদে বড় অর্থনৈতিক পরিবর্তন আনতে পারে। সাধারণ অভ্যাসগুলোর মধ্যেই লুকিয়ে আছে সঞ্চয় ও বিনিয়োগের সম্ভাবনা। তাই এখনই সময় নিজেকে সচেতন করে তোলার এবং অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ গঠনে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার।
সায়মা ইসলাম