ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২

শৈশবে যদি এই কথাগুলো শুনে থাকেন, তবে বুঝে নিন আপনি বেড়ে উঠেছেন আবেগগতভাবে অপরিণত পরিবেশে!

প্রকাশিত: ২১:৩৮, ২৩ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ২১:৪০, ২৩ এপ্রিল ২০২৫

শৈশবে যদি এই কথাগুলো শুনে থাকেন, তবে বুঝে নিন আপনি বেড়ে উঠেছেন আবেগগতভাবে অপরিণত পরিবেশে!

ছবিঃ সংগৃহীত

শৈশব আমাদের জীবনের সবচেয়ে গঠনমূলক সময়। এই সময়কার অভিজ্ঞতা, বিশেষ করে যে ভাষা ও শব্দ আমাদের উদ্দেশে ব্যবহৃত হয়, তা আমাদের আত্মপরিচয়, আত্মবিশ্বাস ও মানসিক স্থিতিশীলতার ওপর গভীর প্রভাব ফেলে।

অনেক সময়ই অভিভাবকেরা না বুঝেই এমন কিছু শব্দ ব্যবহার করেন, যেগুলো শিশু মনে গভীর আঘাত হানে। তারা হয়তো মনে করেন, এগুলো শাসনের অংশ; কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, এসব কথা অনেক ক্ষেত্রে অভিভাবকের আবেগগত অপরিপক্বতার প্রমাণ।

আলসে

একজন শিশুকে আলসে বলা মানে তার আচরণের গভীরে না গিয়ে সহজ সমালোচনায় ঝুঁকে পড়া। শিশুটি হয়তো বিষণ্ন, ভয় পাচ্ছে, বা তার কোনো কাজ ভালো লাগছে নাযা হয়তো সে প্রকাশ করতে পারছে না। আবেগগতভাবে পরিণত অভিভাবক চেষ্টা করেন সেই কারণ খুঁজে বের করতে। কিন্তু অপরিণত অভিভাবকরা এইসব মনস্তাত্ত্বিক জটিলতা বুঝে উঠতে না পেরে দোষ চাপিয়ে দেন শিশুর ওপর। এতে শিশুর মধ্যে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি তৈরি হয়, সে নিজের ক্ষমতা নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়ে।

অতিরিক্ত সংবেদনশীল

অনেক শিশুই আবেগপ্রবণ হয়, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু যখন তাদের বলা হয়, তুই খুব বেশি সংবেদনশীল, তখন সেটা তাদের অনুভূতির মূল্যহীনতার বার্তা দেয়। অভিভাবক নিজেই হয়তো আবেগ প্রকাশে অস্বস্তি বোধ করেন, তাই শিশুর আবেগ তারা সামলাতে পারেন না। শিশু ভাবতে শেখেআবেগ দেখানো মানে দুর্বলতা। ফলে বড় হয়ে সে হয় আবেগ চেপে রাখে, নয়তো নিজের অনুভূতির সত্যতা নিয়ে দ্বিধায় ভোগে।

স্বার্থপর

শিশুরা প্রকৃতিগতভাবেই নিজেকে প্রাধান্য দেয়এটা বিকাশের স্বাভাবিক পর্যায়। সেই সময় তাকে স্বার্থপর বলা মানে তার মানসিক বিকাশের পথে বাধা সৃষ্টি করা। শিশু হয়তো দানশীলতা বা সহানুভূতির গুরুত্ব না বুঝেই অপরাধবোধে ভুগতে শুরু করে।

অতিরিক্ত নাটক করছে

শিশু যদি কাঁদে, কষ্ট পায় বা কোনো বিষয়ে অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখায়, তখন তাকে নাটক করছে বলা একধরনের আবেগ অস্বীকার। শিশু নিজের অনুভূতিকে অপ্রয়োজনীয় মনে করতে শেখে এবং ভবিষ্যতে তা দমন করতে শুরু করে।

ঝামেলার উৎস

শিশু যদি প্রশ্ন করে, বা নিজের মত প্রকাশ করে, অনেক সময় তাকে ঝামেলা বলা হয়। এ ধরনের আচরণ শিশুর চিন্তাশক্তির পরিচয়, যা উৎসাহিত করা উচিত। অপরিণত অভিভাবকের প্রতিক্রিয়া, ভিন্নমত মানতে না পেরে নেতিবাচক ট্যাগ দেওয়া। শিশু নিজেকে সমস্যা হিসেবে ভাবতে শুরু করে, ফলে তার ব্যক্তিত্ব বিকাশে বাধা পড়ে।

জেদি/একগুঁয়ে

শিশুর যদি নিজের মত থাকে বা কিছুতে স্থির থাকে, তাকে বলা হয় জেদি । কিন্তু এই জেদ হতে পারে ভবিষ্যতের আত্মপ্রত্যয়ের ভিত্তি। শিশু হয় আত্মবিশ্বাস হারায়, না হয় জোর করে নিজের মত চাপিয়ে দেয়দুটি ক্ষেত্রেই ভারসাম্য নষ্ট হয়।

বিপদের কারণ

সবচেয়ে বিপজ্জনক ট্যাগ। শিশুকে যদি বলা হয়, তুই সব সময় ঝামেলা করিস, তাহলে সে নিজেকে অপরাধী ভাবতে শেখে, এমনকি নিজের অস্তিত্বকেই অস্বীকার করতে শুরু করে। ভবিষ্যতে নিজেকে সবসময় বিপদের উৎস ভাবার প্রবণতা তৈরি হয়যা হতাশা, আত্মদ্বন্দ্ব ও আত্মঘৃণায় রূপ নিতে পারে।

বোঝা, মাফ করা ও নিজেকে নতুন করে গড়া; এই শব্দগুলো যদি আপনার শৈশবে শোনা হয়ে থাকে, তবে এটা অপরাধ নয়, এটা উপলব্ধির সুযোগ। আপনি জানলেন, সেসব কথা আপনার দোষ ছিল না, বরং আপনার অভিভাবকের সীমাবদ্ধতার প্রতিফলন।

সূত্রঃ হ্যাকস্পিরিট

আরশি

×