ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২

জেন-জেড হয়ে বুমার বাবা-মার কাছ থেকে ব্যক্তিগত স্পেস চাইতে অপরাধবোধ হচ্ছে?

প্রকাশিত: ১৮:৫৭, ২৩ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ১৮:৫৮, ২৩ এপ্রিল ২০২৫

জেন-জেড হয়ে বুমার বাবা-মার কাছ থেকে ব্যক্তিগত স্পেস চাইতে অপরাধবোধ হচ্ছে?

ছবিঃ সংগৃহীত

আমরা সবাই ছোটবেলা থেকে একটা কথা শুনে বড় হয়েছি, বড়দের সম্মান করতে হয়। এখনও হয়তো কানে বাজে। বাবা-মা মানেই নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, ত্যাগ আর সারা জীবনের অবলম্বন। কিন্তু বড় হতে হতে আমরা বুঝতে শিখি, ভালোবাসা আর সীমারেখা (boundary) পরিপূরক হতে পারে।

তবুও যখন বুমার (১৯৪৬-১৯৬৪ সালের মধ্যে জন্ম) বাবা-মার সঙ্গে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা নিশ্চিত করতে চাই, তখন মনে হয় যেন ভয়ংকর কিছু করে ফেলছি। কেন এমন হয়? কেন আমরা নিজেদেরই দোষী ভাবি? চলুন দেখি এমন কয়েকটি কারণ, যার জন্য আমরা এতটা অপরাধবোধে ভুগি।

প্রজন্মের ব্যবধানআসলে অনেক বড়

আমাদের বাবা-মা বড় হয়েছেন এমন এক সমাজে, যেখানে “বড় মানেই ঠিকএই ধারণা ছিল স্বাভাবিক। তাদের কাছে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা, মানসিক স্বাস্থ্য বা স্বাধীন মত প্রকাশ অনেকটাই অজানা ধারণা। তাই যখন আমরা আজকের যুগের মতো স্বাধীনতা চাই, তখন সেটা তাদের চোখে হয়তো অভদ্রতা বা অপমান মনে হয়।এই ভুল বোঝাবুঝিই আমাদের মনে তৈরি করে অপরাধবোধ।

বাবা-মায়ের অনুভূতিকে কষ্ট দিতে না চাওয়া

আপনারও হয়তো হয়েছেবাবা-মা খুব উৎসাহ নিয়ে কিছু জানতে চেয়েছেন, আর আপনি চেয়েছেন চুপ থাকতে। হয়তো মা জানতে চেয়েছেন, কোথায় যাচ্ছেন, কেমন লাগছেএ সবই ভালোবাসা থেকে, সন্দেহ থেকে নয়। তবুও যখন আপনি একটু স্পেস চেয়েছেন, তখন নিজেকেই খারাপ মনে হয়েছে। কিন্তু বুঝতে হবে, এটা অসম্মান নয়নিজের মনের যত্ন নেওয়া।

না বলার অপরাধবোধ

এই মানুষগুলোর জন্যই আমরা আজকের আমরা। তারা অনেক কিছু ত্যাগ করেছেন। তাই যখন কোনো ব্যাপারে না বলি, মনে হয় যেন তাদের সেই ভালোবাসার প্রতি অবহেলা করছি। কিন্তু আসলে, নিজের সীমা বোঝা আর না বলা হলো সম্পর্ককে আরও টিকিয়ে রাখার একটা সচেতন প্রয়াস।

পুরোনো নিয়ম ভাঙা কঠিন

বহু বছর ধরে একটা সম্পর্ক যেভাবে চলেছে, সেই ছক ভাঙা কঠিনতম কাজগুলোর একটি। যেমনযতদিন ছোট ছিলাম, বাবা-মা যা বলতেন, তা-ই শেষ কথা ছিল। এখন যখন আমরা বড় হচ্ছি, নিজস্ব চিন্তা, পছন্দ, সময় চাইছি, তখনই সেই পুরনো অভ্যেসের সঙ্গে নতুন বাস্তবতার সংঘাত শুরু হয়। এটা স্বাভাবিক, দোষের নয়।

সমাজের চাপ

অনেক সংস্কৃতিতেই বাবা-মাকে ঈশ্বরের মতো ভাবা হয়। এই ধারণা আমাদের ভেতরে গেঁথে গেছে। তাই যখন একটু ভিন্নমত পোষণ করি, তখন সমাজের চোখে সেটা অপরাধ মনে হয়। কিন্তু মনে রাখবেনসম্মান মানে অন্ধ আনুগত্য নয়। সীমারেখা মানে অশ্রদ্ধা নয়। এটা নিজের অস্তিত্বকে রক্ষা করার উপায়।

অশান্তি এড়াতে চাওয়া

অনেক সময় আমরা জানি, সীমারেখা টানলে ঝামেলা হবে। হয়তো রাগ, চিৎকার, চোখের জলএসবের ভয়েই চুপ করে থাকি। কিন্তু আপনি যদি চুপ করে নিজের ভিতরে চেপে যান, তাহলে তা ধীরে ধীরে বিষের মতো জমতে থাকে। সৎভাবে কথা বলা, আপস না করে সীমারেখা স্থাপন করাই দীর্ঘমেয়াদে সম্পর্কটাকে আরও সুন্দর করে তুলতে পারে।

অনেক সময় মনে হয়, আমার কোনো অধিকার নেই

অনেকেই মনে করেন, বাবা-মায়ের সঙ্গে সীমারেখা টাকা মানে আমি খারাপ মানুষ! এই ভুল ধারণা আমাদের অনেক সময় নিজের প্রয়োজন বা নিরাপত্তার চেয়ে অন্যের খুশিকে প্রাধান্য দিতে শেখায়। কিন্তু সত্যিটা হলোআপনারও অধিকার আছে নিজের জায়গা, নিজের সময়, নিজের চিন্তার ওপর। আর সেই অধিকার চাওয়া মানে অহংকার নয়, এটা আত্মসম্মান।

অপরাধবোধ নয়, আত্মসম্মান বেছে নিন। আপনার অনুভূতিগুলো স্বাভাবিক। সীমারেখা টানতে ভয় পাওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু ধাপে ধাপে এগোতে পারলেই আপনি নিজেকে আরও ভালোভাবে চিনবেন। প্রতিবার আপনি নিজেকে সম্মান করবেন, সম্পর্কও ধীরে ধীরে নতুনভাবে গড়ে উঠবে সমতা, বোঝাপড়া আর ভালোবাসার ভিত্তিতে।

সূত্রঃ ডেইলি মোটিভেশন নিউজ

আরশি

×