
ছবিঃ সংগৃহীত
প্রেম মানুষের সবচেয়ে পুরনো অনুভূতিগুলোর একটি হলেও, যুগে যুগে এর নিয়ম-কানুন অনেকটাই বদলে গেছে। যে বিষয়গুলো এক সময় ‘অবশ্য মানতেই হবে বলে ধরা হতো’, সেগুলো এখনকার তরুণ প্রজন্মের কাছে অদ্ভুত, এমনকি অপ্রাসঙ্গিক মনে হয়।
চলুন দেখে নেওয়া যাক এমনই ১০টি প্রেম-নিয়ম, যা বুমার প্রজন্ম (৫০/৬০-এর দশকে জন্ম নেওয়া) খুবই গুরুত্ব দিত, কিন্তু জেন-জেড (১৯৯৭-২০১২ সালের মধ্যে জন্ম) প্রজন্মের কাছে তা যেন একেকটা টাইম ট্রাভেলের মতো পুরনো ধারণা!
১. প্রথম পদক্ষেপ ছেলেকেই নিতে হবে
আগে যদি কোনো মেয়ে প্রেমে আগ্রহ দেখাত, তাকে খারাপ চোখে দেখা হতো। অথচ এখনকার তরুণীরা নিজেরাই মেসেজ পাঠায়, ডেটে আমন্ত্রণ জানায়। প্রেম এখন একতরফা খেলা নয়, বরং দু’জন মিলেই শুরু হয় গল্প।
২. বিয়ের আগে একসাথে অনেক সময় কাটানো মানেই সম্পর্ক নষ্ট
বুমাররা মনে করতেন, বিয়ের আগে একসাথে থাকলে সম্পর্কের ‘ভাগ্য খারাপ’ হবে। অন্যদিকে আজকের জেন-জেডরা বরং সম্পর্কের ‘ট্রায়াল ভার্সন’ চালায়—একসাথে থাকা, কাজ করা, এমনকি পোষা কুকুরও রাখা হয় একসাথে!
৩. যে আয় করবে, অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তও সে নেবে
আগে ছেলেরা অর্থনৈতিক ব্যাপারগুলো নিজের উপর নিয়ে নিত। বিল দিত, তাই রেস্টুরেন্টও তারাই ঠিক করত। এখনকার তরুণরা কিউআর কোডে বিল ভাগ করে, গুগল ডকে সবাই মিলে রেস্টুরেন্ট ঠিক করে—কারণ প্রেম মানে এখন সমতা।
৪. রাগ নিয়ে ঘুমানো যাবে না
বুমার যুগে মনে করা হতো, রাগ করে ঘুমানো মানেই সম্পর্ক শেষ। জেন-জেডরা বলে, ঘুম দরকার—পরের দিন মাথা ঠান্ডা হলে সমস্যা মেটানোই ভালো।
৫. দুজনের আয় একসাথে রাখা
আগে যৌথ অ্যাকাউন্টই ছিল আদর্শ। এখনকার তরুণরা নিজের অর্থ স্বাধীনভাবে রাখতে ভালোবাসে। তারা বাজেট বানায়, কিন্তু গোপন রাখে না, বরং সীমারেখা তৈরি করে।
৬. নিজেদের মানসিক সমস্যাগুলো গোপন রাখা
বুমারদের চোখে থেরাপি মানেই সম্পর্ক শেষের দিকে। কিন্তু এখন? সম্পর্ক ভালো রাখতেই থেরাপি নেয়া হয়। সোশ্যাল মিডিয়াতেও অনেকে নিজেদের থেরাপি জার্নি শেয়ার করেন।
৭. সন্তানের জন্য হলেও সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হবে
আগে ছিল ডিভোর্স মানে ব্যর্থতা। কিন্তু জেন-জেডরা মনে করে, দুজন যদি সুখী না থাকে, তাহলে আলাদা থাকাই ভালো—শিশুর জন্যও সেটাই ভালো উদাহরণ।
৮. পুরুষই পরিবারের প্রধান
চগাড়ি চালানো থেকে ছুটির পরিকল্পনা—সব সিদ্ধান্ত নিতেন পুরুষ। এখন? যার যেটা ভালো লাগে সে সেটাই করে। সম্পর্ক এখন ভাগাভাগির উপর চলে।
৯. গোপনীয়তা ঠিক, অন্যদিকে প্রশ্ন করা অভদ্রতা
আগে ডায়েরি পড়া যেত, কিন্তু আগের সম্পর্ক নিয়ে কিছু জানতে চাওয়া ছিল ‘পলিটিকালি ইনকারেক্ট’। এখন জেন-জেড বলে, ফোন বা ইনবক্স ব্যক্তিগত, কিন্তু অতীত ও সীমারেখা নিয়ে খোলামেলা কথা বলতেই হবে।
১০. ডিভোর্স মানেই ব্যর্থতা
বুমাররা সম্পর্ক রক্ষা করাকে জয় মনে করত, আর ডিভোর্সকে হার। কিন্তু এখনকার তরুণরা বলে, ভুল গল্প থেকে বেরিয়ে আসা অনেক বেশি সাহসের কাজ।
নিয়ম নয়, সম্পর্কের মূল চেতনাই আসল। প্রত্যেক প্রজন্মের নিজস্ব কিছু নিয়ম থাকে, যা সময়ের সঙ্গে বদলায়। আজকের জেন-জেডরা যেমন স্বাধীনতা, সমতা ও মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দেয়, তেমনি আগামী প্রজন্মও আমাদের অনেক নিয়মকে ‘ক্রিঞ্জ’ ভাববে। কিন্তু প্রেমের মূল কথা একই থাকে—সম্মান, সংলাপ ও যত্ন। পুরনো যা ক্ষতিকর তা ফেলে দিন, ভালো যা আছে রেখে দিন, আর বাকিটা বানিয়ে নিন আপনাদের মতো করে। কারণ ভালোবাসা একটা চলমান প্রক্রিয়া। নতুনভাবে শেখা আর নতুনভাবে তৈরি করার নামই ভালোবাসা।
সূত্রঃ ডেইলি মোটিভেশন নিউজ
আরশি