
ছবি: সংগৃহীত
আধুনিক যুগে মোবাইল ফোন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে এর অতিরিক্ত ব্যবহার ডেকে আনতে পারে মারাত্মক বিপদ। মনোবিজ্ঞানী এবং শিশু বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরেই ছোট বয়সে শিশুদের হাতে মোবাইল ফোন তুলে দেওয়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছেন। অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের ফলে শিশুদের শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক বিকাশে নানাবিধ নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শৈশবে মোবাইল ফোনের প্রতি আসক্তি শিশুদের মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে তাদের মনোযোগের অভাব, শেখার আগ্রহ কমে যাওয়া এবং স্মৃতিশক্তির দুর্বলতা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও, দীর্ঘক্ষণ স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকার কারণে চোখের সমস্যা এবং ঘুমের ব্যাঘাতের মতো শারীরিক জটিলতাও সৃষ্টি হতে পারে।
শুধু তাই নয়, ছোট বয়সে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে শিশুরা এমন অনেক বিষয়বস্তুর সংস্পর্শে আসতে পারে যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
সহিংসতা বা অনুপযুক্ত দৃশ্য তাদের মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এবং তাদের মধ্যে ভয়, উদ্বেগ বা আগ্রাসী মনোভাবের জন্ম দিতে পারে।
অন্যদিকে, মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারে শিশুরা বাস্তব জগতের সাথে তাদের সংযোগ হারাতে শুরু করে। খেলাধুলা, বন্ধুদের সাথে মেশা বা পারিবারিক আড্ডার পরিবর্তে তারা ভার্চুয়াল জগতে নিজেদের আবদ্ধ করে ফেলে। এর ফলে তাদের সামাজিক দক্ষতা এবং যোগাযোগ স্থাপনের ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। তারা একা থাকতে পছন্দ করে এবং অন্যদের সাথে মিশতে দ্বিধা বোধ করে।
সচেতন অভিভাবক হিসেবে কিছু পদক্ষেপ নিয়ে আপনি আপনার সন্তানদের এই মারাত্মক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে পারেন।
মোবাইল ব্যবহারের সময়সীমা নির্ধারণ: আপনার সন্তানের জন্য দৈনিক মোবাইল ব্যবহারের একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করুন। যেমন, ২ ঘন্টা বা ৪ ঘন্টা। আর সেটা কঠোরভাবে মেনে চলুন।
কোনো ভাবেই যেন সে তার অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে না পারে।
মোবাইলের বিকল্প বিনোদন: তাদেরকে মোবাইল ফোনের বিকল্প কাজে উৎসাহিত করুন। বিভিন্ন খেলাধুলা, ছবি আঁকা, গান গাওয়া বা বই পড়ার মতো সৃজনশীল এবং শারীরিক কার্যকলাপে জড়িত করুন।
পারিবারিক সময় বৃদ্ধি: প্রতিদিন অন্তত কিছু সময় পরিবারের একসাথে কাটান। গল্প করুন, খেলুন বা একসাথে বাইরে ঘুরতে যান।
পরিবারের সাথে সময় কাটালে ফোনে আসক্তি কমতে পারে।
ডিজিটাল স্ক্রিনের বিকল্প: তাদের হাতে আকর্ষণীয় বই, পাজল বা শিক্ষামূলক খেলনা তুলে দিন।
এতে তার ফোন থেকে দূরে থাকার অভ্যাস তৈরি হবে।
নিজে উদাহরণ তৈরি করুন: ছোটবেলায় বাচ্চারা তাদের আপনজনকে সবচেয়ে বেশি অনুকরণ করে। আপনার নিজের মোবাইল ব্যবহারের পরিমাণ কমান এবং তাদের সামনে একটি সুস্থ উদাহরণ তৈরি করুন।
চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ: আপনার সন্তানের অস্বাভাবিক আচরণ দেখলে বা মোবাইল আসক্তির লক্ষণ মনে হলে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন।
মনে রাখবেন, শৈশব হল একটি শিশুর ভবিষ্যৎ জীবনের ভিত্তি। এই সময়ে সঠিক পরিচর্যা এবং দিকনির্দেশনা প্রদানের মাধ্যমে আপনি আপনার সন্তানদের একটি সুস্থ, সুন্দর এবং সফল জীবন উপহার দিতে পারেন। ছোট বয়সে মোবাইল ফোনের লোভনীয় আকর্ষণ এড়িয়ে আপনার সন্তানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য সঠিক পদক্ষেপ নিন।
আবুবকর