
ছবি: সংগৃহীত
বর্তমান যুগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের উন্মুক্ততার যুগে অনেকেই নিজের ব্যক্তিগত অনুভূতি ও জীবনের নানা দিক খোলাখুলি প্রকাশ করতে আগ্রহী। তবে মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, কিছু বিষয় আছে যা গোপন রাখাই শ্রেয়। অতিরিক্ত ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করলে তা মানসিক ভারসাম্যে বিঘ্ন ঘটাতে পারে, সম্পর্ক নষ্ট করতে পারে এবং সামাজিক অবস্থানেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। গোপনীয়তা মানে লুকোচুরি নয়, বরং এটি একটি সুস্থ মানসিক সীমানা নির্ধারণ করে যা আমাদের আবেগগত সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়তা করে।
নিচে মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এমন পাঁচটি বিষয় তুলে ধরা হলো, যেগুলো অন্যের সঙ্গে না বলাই ভালো:
১. আর্থিক অবস্থা ও ব্যাংক ব্যালেন্স
আপনার আয়, ব্যয়, সঞ্চয় বা ঋণের মতো আর্থিক তথ্য অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করলে তা হিংসা, অস্বস্তি বা নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে। মনোবিজ্ঞান বলছে, টাকা-পয়সা নিয়ে আলোচনা অনেক সময়ই প্রতিযোগিতার মনোভাব উস্কে দেয়, যা সম্পর্কে দূরত্ব তৈরি করে। সবাই যে আপনার ভালোর কামনা করে, তা নয়—তাই নিজের আর্থিক তথ্য গোপন রাখাই বিচক্ষণতার পরিচয়।
২. ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও স্বপ্ন
নিজের লক্ষ্য ও স্বপ্ন আগেভাগে বলে দিলে, তা বাস্তবায়নে বাধা আসতে পারে। গবেষণা বলছে, লক্ষ্য পূরণের আগেই তা নিয়ে বেশি কথা বললে মস্তিষ্ক ভেবে বসে যে কাজটি শেষ হয়ে গেছে, ফলে বাস্তব চেষ্টার গতি কমে যায়। এছাড়াও, অন্যের নেতিবাচক মতামত বা সন্দেহ আপনার আত্মবিশ্বাসে চোট দিতে পারে। তাই স্বপ্ন পূরণের আগে তা নিয়ে কম কথা বলাই ভালো।
৩. দান বা সেবার কথা
যে কোনো দান বা সাহায্যের কথা নিজে থেকে বলে বেড়ালে তা আত্মপ্রচারের মতো শোনাতে পারে। মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন, প্রকৃত উদারতা আসে নিঃস্বার্থতা থেকে, প্রশংসা পাওয়ার বাসনা থেকে নয়। তাই আপনি যদি কারও উপকার করে থাকেন, তবে সেটিকে নিজের মধ্যেই রাখাই শ্রেয়—এটি এক ধরনের আত্মনম্রতার প্রকাশ।
৪. পারিবারিক সমস্যা
পারিবারিক কলহ বা ব্যক্তিগত পারিবারিক দ্বন্দ্ব অন্যদের সঙ্গে ভাগ করলে ভুল বোঝাবুঝি, গুজব এবং সম্পর্কের অবনতি ঘটতে পারে। মানুষের অভ্যাস থাকে প্রেক্ষাপট না জেনে মন্তব্য করার, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে। মনোবিজ্ঞান বলছে, পরিবার নিয়ে বাইরে আলোচনা করলে সম্পর্ক আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই পরিবার সংক্রান্ত সমস্যাগুলো ঘরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা উত্তম।
৫. রাগ ও অভিমান
অভিমান বা রাগ নিয়ে অতিরিক্ত আলোচনা করার ফলে তা হ্রাস পাওয়ার বদলে আরও গভীর হতে পারে। নেতিবাচক আবেগ নিয়ে বারবার আলোচনা আমাদের মস্তিষ্কে তা আরও শক্তভাবে গেঁথে দেয়। অনেক সময় আপনার এই আবেগিক দুর্বলতাকে কেউ সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। তাই এই ধরনের আবেগ নিজের মধ্যেই প্রক্রিয়াকরণ করা, অথবা প্রয়োজনে কাউন্সেলরের সঙ্গে আলোচনা করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
সব কিছু শেয়ার করা উচিত নয়। কিছু বিষয় গোপন রাখলে মানসিক শান্তি বজায় থাকে, আত্মসম্মান অক্ষুণ্ণ থাকে এবং সম্পর্কও হয় মজবুত। তাই কখন কী বলতে হবে, এবং কাকে বলতে হবে— তা জেনে, বুঝে বলাই সবচেয়ে বিচক্ষণতার পরিচয়।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
এম.কে.