ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২

মনে রাখতে পারছেন না? আপনার মস্তিষ্ক কি ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে!

প্রকাশিত: ২২:৩৯, ২২ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ২২:৪০, ২২ এপ্রিল ২০২৫

মনে রাখতে পারছেন না? আপনার মস্তিষ্ক কি ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে!

ছবি: সংগৃহীত।

"চাবি কোথায় রেখেছি যেন মনে নেই..." "ফ্রিজ খুলে দাঁড়িয়ে আছি, কিন্তু কেন এসেছিলাম ভুলে গেছি!"
এই রকম ঘটনা কি আপনার সাথেও ঘটছে? অনেকেই ইদানিং অনুভব করছেন, আগের মতো সবকিছু মনে থাকে না। সামান্য কিছু কাজ বা কথাও ভুলে যাচ্ছেন ঘন ঘন। শুধু বয়স্করা নন, এখন তরুণরাও এই সমস্যা অনুভব করছেন। প্রশ্ন উঠছে—এটা কি সাধারণ ভুলে যাওয়া, নাকি বড় কোনো সংকেত?

আজকাল অনেকেই অভিযোগ করছেন, তারা আগের তুলনায় বেশি ভুলে যাচ্ছেন। বিশেষ করে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো মন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে খুব সহজে। যেমন কারো নাম মনে না রাখা, ফোন কোথায় রেখেছি ভুলে যাওয়া, কিংবা কী কাজ করতে যাচ্ছিলাম তা এক মুহূর্তেই মাথা থেকে বেরিয়ে যাওয়া। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর পেছনে রয়েছে কয়েকটি নির্দিষ্ট কারণ।

১. প্রযুক্তি নির্ভরতা:
স্মার্টফোন, গুগল, রিমাইন্ডার—সব কিছু এখন হাতের মুঠোয়। আগে যে জিনিসগুলো আমরা মস্তিষ্ক দিয়ে মনে রাখতাম, এখন তা করে দিচ্ছে প্রযুক্তি। ফলে আমাদের ব্রেইন কম সক্রিয় থাকছে স্মৃতি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে।

২. মানসিক চাপ ও উদ্বেগ:
করোনা মহামারি পরবর্তী সময়ে মানুষের জীবনে মানসিক চাপ বেড়েছে বহুগুণ। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, চাকরি নিয়ে চিন্তা, পারিবারিক টানাপোড়েন—এসব মিলিয়ে মানসিক অস্থিরতা আমাদের মনোযোগ এবং স্মরণশক্তিকে ক্ষয় করে দিচ্ছে।

৩. ঘুমের ঘাটতি:
পর্যাপ্ত এবং গভীর ঘুম না হলে মস্তিষ্ক নতুন স্মৃতি গঠনে ব্যর্থ হয়। আজকের ব্যস্ত জীবনে ঘুমের গুরুত্ব অনেক সময়ই অবহেলিত থাকে। অথচ এই ঘুমই স্মৃতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

৪. অপুষ্টি ও অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস:
মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ঠিক রাখতে দরকার ভিটামিন বি১২, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, আয়রনসহ বিভিন্ন পুষ্টিকর উপাদান। কিন্তু ফাস্ট ফুড ও অনিয়মিত খাওয়াদাওয়ার কারণে এই প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো শরীরে ঠিকমতো পৌঁছায় না।

এটা কি অ্যালঝেইমার্স বা ডিমেনশিয়ার লক্ষণ?
সাধারণ ভুলে যাওয়া মানেই যে অ্যালঝেইমার্স বা ডিমেনশিয়া, তা নয়। তবে যদি কেউ প্রতিদিনের সাধারণ কাজ ভুলে যেতে থাকেন, পরিচিত মুখ চিনতে সমস্যা হয় বা কথাবার্তায় গড়মিল দেখা দেয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

সমাধান কী হতে পারে?

  • প্রযুক্তির উপর কম নির্ভরশীল হওয়া
  • মেডিটেশন ও মানসিক চাপ কমানোর চর্চা
  • নিয়মিত ঘুম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ
  • দৈনন্দিন কাজে স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর অনুশীলন (যেমন: Sudoku, পাজল খেলা)
  • সামাজিক মেলামেশা বাড়ানো


আমাদের স্মৃতিশক্তি সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়, কিন্তু এই পরিবর্তন যদি জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করে, তাহলে সেটিকে গুরুত্ব না দিয়ে উপায় নেই। মনোযোগ, ঘুম, খাদ্য এবং মানসিক সুস্থতা—এই চারটি দিকেই নজর দিলে ভুলে যাওয়ার প্রবণতা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। মনে রাখা জরুরি, ‘ভুলে যাওয়া’ কখনো কখনো আমাদের জীবনযাপনের একটি বার্তা হয়ে আসে—যে বার্তা বলে, "নিজের দিকে একটু খেয়াল রাখো।"

নুসরাত

×