
ছবি: সংগৃহীত।
আজকের সমাজে আবেগ একটি লাক্সারি। আপনি কষ্টে আছেন? কেউ মাথা ঘামাবে না। বরং আপনি যদি সবকিছু সহ্য করে একগাল হেসে চলেন, তবে সমাজ আপনাকে বাহবা দেবে। আমরা এমন এক পৃথিবীতে বাস করছি, যেখানে কাঁদা দুর্বলতার প্রতীক আর হাসি হয়ে উঠেছে প্রতিরক্ষার ঢাল। প্রশ্ন হলো, কেন এমনটা হচ্ছে? কাঁদা কি সত্যিই ব্যর্থতা? আর হাসি কি কেবলই মুখোশ?
রাস্তাঘাট, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কিংবা অফিসের করিডোরে আপনি হয়তো লক্ষ করেছেন—মানুষজন ‘ভালো আছি’ বলার অভিনয় করছে। আসলে তারা কতটা ভালো, তা কেউ জানে না, জানতেও চায় না। আমাদের সমাজ এমন একটা জায়গায় এসে ঠেকেছে, যেখানে কারও আবেগ, কষ্ট বা কান্না আর গুরুত্ব পায় না। আপনি কাঁদলে সেটা অনেকে দুর্বলতা ভাববে, কেউ কেউ তাচ্ছিল্য করবে। সান্ত্বনা দেওয়ার চেয়ে রসিকতা করাটাই যেন এখনকার ট্রেন্ড।
মনোবিজ্ঞান কী বলছে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি একটি "ইমোশনাল ডিসকানেক্ট"-এর যুগ। মানুষ নিজেদের সমস্যা নিয়েই এত ব্যস্ত যে অন্যের কষ্ট বোঝার সময় বা মানসিক শক্তি তাদের নেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে “হ্যাপি ফেস” দেখিয়ে সবাই নিজের অসহায়তা লুকাতে চায়। এই 'হাসিমুখের প্রজন্ম' একদিকে নিজেদের বাঁচাতে হাসছে, অন্যদিকে অন্যের কান্না অগ্রাহ্য করে এগিয়ে যাচ্ছে।
জীবনের বাস্তবতা:
একটা সময় ছিল যখন বাড়ির প্রবীণ সদস্যরা ছোটদের চোখের পানি দেখে পাশে দাঁড়াতেন। এখনকার বাস্তবতা—“নিজের যুদ্ধ নিজেকেই লড়তে হবে।” আপনাকে হাসিখুশি দেখলে মানুষ আপনার পাশে থাকবে, কিন্তু আপনি ভেঙে পড়লে অনেকেই হারিয়ে যাবে। তাই অনেকেই মনে করেন, কাঁদার সময় নেই, হেসেই যেতে হবে—যত কষ্টই থাকুক না কেন।
তবে কি কান্না মূল্যহীন?
না, কান্না কোনোভাবেই দুর্বলতা নয়। এটা মানবিকতা, এটা আত্মরক্ষা। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, কাঁদার অধিকারও আজকাল নিজের একান্ত জায়গায় সীমাবদ্ধ। সমাজ আপনাকে হাসতে শেখায়, কাঁদতে নয়। তাই হয়তো কেউ বলেছিল—“Don’t cry. No one really cares. Just smile, and they’ll think you’re fine.”
আমাদের সমাজে সত্যিকারের সংবেদনশীলতা হারিয়ে যাচ্ছে। অথচ প্রয়োজন ছিল উল্টোটা—আরও একটু মানবিক হওয়া, অন্যের অনুভূতি বোঝা। আপনি যদি কান্না না থামাতে পারেন, অন্তত কাউকে কান্নার সময় পাশে দাঁড়ান। কারণ আপনি না বুঝলেও, কোনো একদিন, আপনারও কাঁদতে ইচ্ছে করবে।
নুসরাত