
ছবি: প্রতীকী
ভিটামিন-ডি সমৃদ্ধ খাবার স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি। এই চর্বিতে দ্রবণীয় পুষ্টি উপাদানটি আমাদের দেহ সূর্যের আলো থেকে শোষিত হয়ে তৈরি করে, তবে তা খাবার ও সাপ্লিমেন্ট থেকেও পাওয়া যায়। শরীরের নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজে ভিটামিন-ডি ভূমিকা রাখে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, যুক্তরাজ্যে এক জরিপ অনুযায়ী ২০২২ সালে প্রতি ছয়জনের মধ্যে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীরে ভিটামিন-ডি এর ঘাটতি দেখা গেছে, যা প্রায় ২০ শতাংশ মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
ভিটামিন-ডি এর ঘাটতি হলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, কিছু নির্দিষ্ট ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে এবং লিভার ও কিডনি সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
কোন খাবারে পাওয়া যায় বেশি ভিটামিন-ডি?
নিউ ইয়র্কের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন কো-অর্ডিনেটর অ্যামেলিয়া শেরি জানান, ভিটামিন-ডি খুব বেশি খাবারে পাওয়া না গেলেও যেসব খাবারে পাওয়া যায়, সেগুলো খুব সহজেই আমাদের ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করা যায়। নিচে বিশেষজ্ঞরা বাছাই করে দেওয়া ভিটামিন-ডি সমৃদ্ধ ৭টি খাবার তুলে ধরা হলো:
১. সালমন মাছ
চর্বিযুক্ত মাছের মধ্যে সালমন হলো ভিটামিন-ডি এর অন্যতম ভালো উৎস। মাত্র ৮৫ গ্রাম সালমনে পাওয়া যায় ৩৮৩ থেকে ৫৭০ IU ভিটামিন-ডি, যা মাছের ধরণ অনুসারে ভিন্ন হতে পারে।
২. রেইনবো ট্রাউট
সালমনের বিকল্প হিসেবে আপনি বেছে নিতে পারেন রেইনবো ট্রাউট। ৮৫ গ্রাম রেইনবো ট্রাউটে থাকে ৬৪৫ IU ভিটামিন-ডি।
৩. কমলার জুস
শেরি বলেন, ফোর্টিফায়েড (পুষ্টি সংযোজিত) খাবার থেকেও ভিটামিন-ডি পাওয়া সম্ভব। ২৪০ মিলিলিটার কমলার রসে থাকে প্রায় ১০০ IU ভিটামিন-ডি।
৪. কড লিভার অয়েল
ভিটামিন-ডি এর অন্যতম প্রাচীন ও কার্যকর উৎস হিসেবে পরিচিত কড লিভার অয়েল। মাত্র ৫ মিলিলিটারে পাওয়া যায় ৪৫০ IU ভিটামিন-ডি।
৫. সার্ডিন
সার্ডিন মাছ শুধু মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায় ও চুল পড়া রোধেই সাহায্য করে না, এটি ভিটামিন-ডি এরও ভালো উৎস। একটি ক্যানে থাকে প্রায় ১৬৪ IU ভিটামিন-ডি।
৬. দুধ
দুধ ক্যালসিয়ামের পাশাপাশি ভিটামিন-ডি এরও ভালো উৎস। এক কাপ দুধে থাকে প্রায় ১১৫ IU ভিটামিন-ডি।
৭. দই
দই একটি সহজলভ্য ও হজমে সহায়ক খাবার, যা ভিটামিন-ডি এর চাহিদা পূরণেও সহায়তা করে। প্রায় ২২৫ গ্রাম দইয়ে থাকে ১১৬ IU ভিটামিন-ডি।
ভিটামিন-ডি কীভাবে কাজ করে?
শেরি বলেন, ভিটামিন-ডি মূলত হাড়ের স্বাস্থ্য উন্নত করে। এটি ক্যালসিয়ামের সঙ্গে মিলে হাড় গঠন ও শক্তিশালী করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, মাংসপেশির কার্যক্ষমতা ঠিক রাখে, প্রদাহ কমায়, কোষের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে এবং রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
অতিরিক্ত ভিটামিন-ডি নিলে কী সমস্যা হতে পারে?
সূর্যের আলো থেকে অতিরিক্ত ভিটামিন-ডি গ্রহণের ঝুঁকি নেই। তবে অতিরিক্ত সাপ্লিমেন্ট বা খাদ্য থেকে বেশি গ্রহণ করলে ক্যালসিয়ামের শোষণ বাড়তে পারে। এর ফলে বমি বমি ভাব, ক্লান্তি, বিরক্তি, মাংসপেশির দুর্বলতা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেহেতু এটি চর্বিতে দ্রবণীয়, অতিরিক্ত গ্রহণে শরীরে জমে থাকতে পারে, যা বিষাক্তও হতে পারে।
প্রতিদিন কত IU ভিটামিন-ডি দরকার?
- এক বছরের নিচে শিশুদের: ৪০০ IU
- ৭০ বছরের নিচে যাদের বয়স: ৬০০ IU
- ৭০ বছরের ওপরে: ৮০০ IU
সাপ্লিমেন্ট নেওয়া কি জরুরি?
যদি কারও শরীরে ভিটামিন-ডি এর ঘাটতি থাকে তবে সাপ্লিমেন্ট প্রয়োজন হতে পারে। বিশেষ করে যারা সূর্যের আলো কম পায়, ঘরের ভেতর বেশি সময় কাটায় বা যাদের ত্বক গাঢ় – তাদের ক্ষেত্রে ঘাটতির আশঙ্কা বেশি। এছাড়া কোয়েলিয়াক বা হজমজনিত সমস্যা থাকলে ভিটামিন-ডি এর ঘাটতি হতে পারে।
তবে মনে রাখা জরুরি, সাপ্লিমেন্ট নেওয়ার আগে রক্ত পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া উচিত যে, আপনি ভিটামিন-ডি ঘাটতির ভুক্তভোগী কিনা। পরে চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদ পরিমাণ নির্ধারণ করে দিবেন কত IU এবং কতদিন সাপ্লিমেন্ট নেওয়া উচিত। সন্দেহ হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
সূত্র:https://www.vogue.co.uk/article/foods-high-in-vitamin-d
রবিউল হাসান