
ছবি: সংগৃহীত
আমরা অনেক সময় কথোপকথন শেষে ভাবি, "আরেকটু ভালো করে বললে হতো!"— হয়তো নিজেকে ঠিকমতো প্রকাশ করতে পারিনি, অথবা সামনের মানুষটি কথার মর্মটাই ধরতে পারেননি। এমনটা ঘটে আমাদের সবার সঙ্গেই— বন্ধুদের সঙ্গে হোক বা কর্মক্ষেত্রে। তবে ভালো যোগাযোগের কৌশল শেখা সম্ভব, এবং এর জন্য বিশাল কোনো পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই। কিছু ছোটখাটো পরিবর্তন— যেমন শুনে নেওয়া, নিজের কথার ধরন ঠিক করা, কিংবা প্রতিক্রিয়া জানানোর ধরনে পরিবর্তন— অনেক বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে।
সেইসব সাধারণ কিন্তু কার্যকর উপায়গুলো নিচে তুলে ধরা হলো:
১. “আমি” দিয়ে কথা শুরু করুন — দায় নিচ্ছেন আপনি
অনেক সময় আমরা বলি, “তুমি কখনও শোনো না” বা “তুমি সবসময় এটা করো।” এতে সামনের মানুষটি রক্ষণাত্মক হয়ে যায়, এবং আলোচনার বদলে ঝগড়ার রূপ নেয়। এর চেয়ে বরং বলুন, “আমি মনে করি আমার কথাগুলো গুরুত্ব পাচ্ছে না।” এতে নিজের অনুভূতির কথা বলা হয়, কারও উপর দোষ চাপানো হয় না— যা কথোপকথনকে শান্ত ও গঠনমূলক করে তোলে।
২. পুরো মনোযোগ দিন, সত্যিকারভাবে শুনুন
সত্যি করে বলুন তো— কথা বলার সময় আমরা কতটা মন দিয়ে শুনি? অনেক সময়ই আমরা উত্তর তৈরিতে ব্যস্ত থাকি, অথবা চট করে ফোনটা দেখে নিই। অথচ আসল সম্পর্ক গড়ে ওঠে তখনই, যখন আমরা অপরপক্ষকে মন দিয়ে শুনি। "অ্যাকটিভ লিসেনিং" মানে হলো প্রতিক্রিয়া দিয়ে বোঝানো যে আপনি মনোযোগ দিয়েছেন। যেমন, "তাহলে তুমি বলছো, কাজের চাপে তুমি খুব ভেঙে পড়ছো?"— এমন প্রতিফলন শুনিয়ে দিলে বোঝা যায় আপনি আন্তরিকভাবে শুনেছেন।
৩. প্রতিক্রিয়া জানানোর আগে এক মুহূর্ত থেমে যান
অনেক সময় উত্তেজনার মুহূর্তে কিছু বলে ফেলি, যা পরে আফসোসের কারণ হয়। তাড়াহুড়ো করে প্রতিক্রিয়া দিলে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। একটু থেমে, গভীর শ্বাস নিয়ে ভাবুন— তারপর বলুন। বলুন, “একটু ভাবতে দিন তো” বা “এক সেকেন্ড, আমি বোঝার চেষ্টা করছি।” এই সামান্য থেমে যাওয়া বড় বিপর্যয় ঠেকাতে পারে।
৪. সব কিছুতেই প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে না
সব মন্তব্যের উত্তর দেওয়া জরুরি নয়। অনেক সময় কেউ কিছু বলে ফেলে, যেটা আসলে ক্ষতির উদ্দেশ্যে নয়— সেটা হালকাভাবে নেওয়াই ভালো। তবে, কোনো মন্তব্য যদি সীমা ছাড়িয়ে যায়, তখন বলুন, “আমি এই ধরনের কথা পছন্দ করি না।” কিন্তু ছোটখাটো বিষয় নিয়ে উত্তেজিত হয়ে আলোচনা বাড়ানোর দরকার নেই। নিজের সীমারেখা বুঝিয়ে দিন, তবে শান্তভাবে।
৫. অনুমান না করে প্রশ্ন করুন
ধারণা বা অনুমান অনেক সময় ভুল পথে নিয়ে যায়। আমরা ভাবি, “সে নিশ্চয়ই এটা বোঝাতে চেয়েছে” কিংবা “ও হয়তো এটা ভাবছে”— কিন্তু আমরা তো ভবিষ্যৎদ্রষ্টা নই। তাই অনুমান না করে জিজ্ঞেস করুন। এতে বোঝা যায় আপনি আগ্রহী এবং মনোযোগী। বলুন, “তুমি এখন কী চাইছো?” বা “আমি কীভাবে তোমাকে সাহায্য করতে পারি?”— এই ধরনের প্রশ্ন খোলামেলা আলোচনা তৈরি করে এবং বিভ্রান্তি দূর করে।
ভালো যোগাযোগ মানে শুধু ভালোভাবে কথা বলা নয়— মন দিয়ে শোনা, সময় মতো প্রতিক্রিয়া জানানো এবং সম্পর্কের প্রতি সম্মান দেখানোও এর অংশ। এই পাঁচটি সহজ অভ্যাস গড়ে তুললে আপনার কথোপকথন হয়ে উঠবে আরও অর্থবহ, সুন্দর ও গঠনমূলক।
সূত্র: https://timesofindia.indiatimes.com/life-style/relationships/work/5-simple-ways-to-improve-your-conversations-as-per-psychology/photostory/120461531.cms
রবিউল হাসান