
আমরা অনেক সময় এমন মানুষের সঙ্গে চলি, যাদের ব্যবহার খুব স্বাভাবিক মনে হয়। তারা হাসিমুখে কথা বলে, আমাদের সঙ্গেও থাকে। কিন্তু কখনো কখনো মনের ভেতর একটা অদ্ভুত অস্বস্তি জেগে ওঠে,যেন কেউ আমাদের ভালোটা ঠিক সহ্য করতে পারছে না। মুখে কিছু বলে না ঠিকই, কিন্তু আচরণে যেন একটা অস্পষ্ট ঠান্ডা ভাব।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অনুভূতি একেবারে অমূলক নয়। অনেক সময় কাছের কেউ-বন্ধু, সহকর্মী এমনকি আত্মীয়ও-আমাদের সফলতা সহ্য করতে না পেরে ভিতরে ভিতরে হিংসে করতে পারে। সেটা প্রকাশ না করলেও কিছু সূক্ষ্ম আচরণে ধরা পড়ে যায়।
চলুন দেখে নিই এমন ১১টি লক্ষণ যা বলে দিতে পারে,আপনার পাশে থাকা মানুষটি আসলে আপনাকে হিংসে করছে:
১. সবসময় আপনাকে নকল করে, অথচ সেটি স্বীকার করে না
আপনি নতুন কোনো পোশাক পরলে, কয়েকদিন পরেই সে একইরকম কিছু পরে আসে। আপনি যেভাবে কথা বলেন, যেভাবে সাজেন, এমনকি কোন ধরনের কাজ করেন—সব কিছুতেই সে যেন আপনাকে কপি করতে চায়। এটা ‘প্রশংসা’ মনে হতে পারে, কিন্তু বাস্তবে এটি ঈর্ষার প্রকাশ—সে আপনাকে আদর্শ না, প্রতিযোগী হিসেবে দেখে।
২. আপনার যেকোনো অর্জনকে টপকাতে চায়
আপনি যদি নতুন চাকরি পান, সেও নিজের পুরনো কাজ নিয়ে বড় বড় কথা বলতে শুরু করে। আপনি প্রেমে পড়লে, সেও হঠাৎ করে কাউকে খুঁজে পায়। এমনকি আপনি ছুটি কাটাতে কোথাও গেলে, সে আপনাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার মতোই কিছু করে। সবসময় যেন আপনাকে পেছনে ফেলে দেওয়ার তাড়না কাজ করে তার মধ্যে।
৩. আপনার পিছনে সমালোচনার রসদ খোঁজে
সম্মুখে বন্ধুত্বপূর্ণ হলেও, আপনার অনুপস্থিতিতে সে অন্যদের সঙ্গে আপনাকে নিয়ে নেতিবাচক কথা বলে। হয়তো বলে, “ও তো কপালে পেয়েছে” বা “ওর অত কিছু করার ছিল না, সুযোগটা কাজে লাগিয়ে ফেলেছে।” এমন মন্তব্য তার হিংসারই প্রমাণ।
৪. আপনার ভালো খবর শোনার পর মুখ গোমড়া হয়ে যায়
আপনি যদি কোনো ভালো সংবাদ দেন-চাকরির প্রমোশন, ভালো রেজাল্ট, নতুন সম্পর্ক—তখন সে অদ্ভুতভাবে চুপ করে যায়। বাহ্যিকভাবে হাসলেও সেটা প্রাণহীন, যেন জোর করে হাসছে।
৫. ধীরে ধীরে আপনাকে এড়িয়ে চলে
আপনি যখন নিজেকে গুছিয়ে নিচ্ছেন, তখনই সে দূরে সরে যায়। ফোনে আগের মতো সময় দেয় না, দেখা-সাক্ষাৎ কমিয়ে দেয়। তার মনে হয়, আপনার উন্নতি যেন তাকে আরও বেশি অযোগ্য করে তুলছে।
৬. হঠাৎ করে খুব ঘনিষ্ঠ হতে চায়
আবার এমনও হয়-আপনার সাফল্য তাকে এতটাই নাড়া দেয় যে সে হঠাৎ করে খুব বেশি ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করে। বারবার দেখা করতে চায়, আপনার রুটিন জানার চেষ্টা করে। আসলে সে জানতে চায়, আপনি কীভাবে এতদূর এলেন-না যেন সাহায্য করার জন্য, বরং নিজের কাজে লাগাতে।
৭. অতিরিক্ত প্রশংসা দিয়ে সন্দেহের পর্দা ফেলে
সে এমনভাবে প্রশংসা করে, যা বাস্তবে কখনো সত্যি হতে পারে না। “তোমার জীবন একেবারে নিখুঁত”, “তুমি তো সব পারো”-এই কথাগুলো যেন বাস্তবতা নয়, বরং ঈর্ষার মোড়কে মিশিয়ে দেওয়া এক ধরনের কটাক্ষ।
৮. আপনি যা করেন, সবকিছুর মধ্যে ভুল খোঁজে
আপনার যেকোনো উদ্যোগ বা সাফল্যকে সে সহজভাবে নেয় না। বরং সব সময় খুঁটিনাটি ভুল খোঁজে। তার চোখে আপনি কখনোই যথেষ্ট ভালো নন-এই মনোভাব জন্ম নেয় হিংসা থেকেই।
৯. আপনাকে ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ দিয়ে দেয়
বন্ধুদের আড্ডা, ঘোরাঘুরি, প্ল্যান-সব জায়গা থেকে আপনাকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। আগে আপনাকে জিজ্ঞেস করত, এখন আর করে না। কারণ সে চায় না আপনি আনন্দ পান বা তার জীবনের অংশ থাকেন।
১০. আপনার সবচেয়ে আনন্দের সময় সে গায়েব হয়ে যায়
আপনি জীবনের বড় কোনো অর্জনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন-সেই সময়েই সে যেন অদৃশ্য। আপনি যখন চাচ্ছেন কেউ পাশে থাকুক, সাপোর্ট করুক, তখন সে অনুপস্থিত। কারণ আপনার খুশি তার সহ্য হয় না।
১১. মনে করে আপনি সব কিছু খুব সহজেই পেয়ে গেছেন
আপনার পরিশ্রম, ত্যাগ, সংগ্রাম-সবকিছু সে অস্বীকার করে। ভাবে, “ও তো লাকি, কপাল ভালো।” এই ধরনের মানসিকতা থেকেই জন্ম নেয় হিংসা। আপনি যেটা ঘাম ঝরিয়ে অর্জন করেছেন, সেটা সে ‘অপসনে পাওয়া’ ভেবে নিচ্ছে।
সব মানুষ বন্ধুর মুখোশ পরে আসে না। কেউ কেউ সামনে ভালো আচরণ করলেও ভিতরে ভিতরে জ্বলে, কষ্ট পায়, হিংসে করে। আপনি যদি এই ১১টি লক্ষণের মধ্যে কয়েকটিও কারও মধ্যে দেখতে পান, তাহলে নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের কথা ভেবে সেই সম্পর্কের সঙ্গে দূরত্ব রাখাটাই বুদ্ধিমানের কাজ।
আপনার চারপাশে এমন মানুষ থাকুক, যারা সত্যিই আপনার ভালো চান—সুখে হোক বা দুঃখে, পাশে থাকেন নিঃস্বার্থভাবে।
সূত্র:https://tinyurl.com/mry5kffj
আফরোজা