
ছবি: প্রতীকী
আমরা প্রায়ই ভাবি, আত্মনিয়ন্ত্রণ মানেই কঠিন সংগ্রাম—নিজেকে জোর করে কিছু থেকে বিরত রাখা। তবে সাম্প্রতিক এক গবেষণা জানাচ্ছে, ইচ্ছাশক্তি ছাড়াও আত্মনিয়ন্ত্রণ সম্ভব। শুধু দরকার কিছু প্রমাণিত কৌশল এবং অভ্যাস গড়ে তোলা।
আত্মনিয়ন্ত্রণ কী এবং কেন জরুরি?
আত্মনিয়ন্ত্রণ হলো এমন এক মানসিক দক্ষতা, যা আমাদের তাত্ক্ষণিক আনন্দের পরিবর্তে দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যে মনোযোগী থাকতে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ—
- ভিডিও গেম খেলার পরিবর্তে পড়াশোনা।
- রাতভর সিরিজ দেখা নয়, বরং ঘুমিয়ে পরদিনের জন্য তৈরি হওয়া।
- না ভেবে খরচ না করে স্বপ্নের গাড়ি বা বাড়ির জন্য সঞ্চয় করা।
এগুলোই আত্মনিয়ন্ত্রণের ক্লাসিক উদাহরণ। কিন্তু সমস্যা হলো, অনেকেই মনে করেন, এগুলোর জন্য প্রচুর ইচ্ছাশক্তির দরকার, যা সহজে শেষ হয়ে যায়।
ইচ্ছাশক্তি নয়, অভ্যাসই চাবিকাঠি
নেদারল্যান্ডসের মনোবিজ্ঞানী গিলিবার্ট এবং স্নাইডারের একটি গবেষণা (প্রকাশিত: Current Opinion in Psychology) বলছে, উচ্চ আত্মনিয়ন্ত্রণ সম্পন্ন মানুষরা মূলত দ্রুত সমস্যাটি শনাক্ত ও সমাধান করতে পারে। এর পেছনে কাজ করে দু’টি বড় কৌশল—
১. ভালো অভ্যাস গড়ে তোলা
ভালো অভ্যাস মানেই এমন আচরণ, যা সময় বা পরিবেশের সঙ্গে এমনভাবে জুড়ে যায়, যে তা চিন্তা ছাড়াই হয়ে যায়। যেমন:
- রাতে শোওয়ার আগে নিয়মিত কয়েক মিনিটের শ্বাসপ্রশ্বাস অনুশীলন।
- প্রতিদিন সকালে উঠে পানি খাওয়া।
এই অভ্যাসগুলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্বয়ংক্রিয় আচরণে পরিণত হয়, যার ফলে ইচ্ছাশক্তি ব্যবহার করতেই হয় না। গবেষণায় দেখা গেছে, আত্মনিয়ন্ত্রণে সফল মানুষদের ভালো অভ্যাস বেশি, খারাপ অভ্যাস কম।
২. আগেভাগে পরিকল্পনা—অ্যান্টিসিডেন্ট স্ট্র্যাটেজি
ইচ্ছাশক্তির ওপর নির্ভর না করে, যারা আত্মনিয়ন্ত্রণে সফল, তারা সাধারণত চারটি কৌশল ব্যবহার করে—
▸ পরিস্থিতি নির্বাচন:
যেখানে প্রলোভন বেশি, সেখানে যাওয়াই বন্ধ করুন। যেমন—ডায়েট করছেন? তবে চকলেট শপ পাশ কাটান।
▸ পরিস্থিতি পরিবর্তন:
বাড়িতে রাখা চিপস বা আইসক্রিম যেন সহজলভ্য না হয়, সেভাবে লুকিয়ে রাখুন বা বাইরে রাখুন না।
▸ মনোযোগ সরানো:
বিছানায় পড়ে আইসক্রিমের কথা ভাবছেন? বরং গান শুনুন, বন্ধুর সঙ্গে ফোনে কথা বলুন, অথবা ভবিষ্যতের ভ্রমণের পরিকল্পনা করুন।
▸ মন্তব্য বদলানো (রিএপ্রেইজাল):
প্রলোভনের পেছনের ক্ষতি নিয়ে ভাবুন। যেমন—ডোনাট? চিনির গোলা! স্বাস্থ্যের ক্ষতি, ওজন বাড়ানো এবং সৌন্দর্যহানির কারণ।
আত্মনিয়ন্ত্রণ মানেই বারবার "না" বলা নয়। বরং এটি এমন একটি দক্ষতা, যা ঠিকভাবে চর্চা করলে সহজ হয়ে যায়।
-
ভালো অভ্যাস গড়ে তুলুন।
-
পরিস্থিতি আগেভাগে সামলান।
-
ইচ্ছাশক্তির উপর চাপ না দিয়ে প্রলোভনের মুখোমুখি হওয়া কমান।
আর হ্যাঁ, নিজেকে নিয়ে খুব কঠোর হবেন না। আত্মনিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা মানেই সব শেষ নয়। শিখুন, মাফ করুন নিজেকে, এবং আবার শুরু করুন।
সূত্র: https://www.psychologytoday.com/us/blog/finding-a-new-home/202412/no-willpower-needed-proven-techniques-to-boost-self-control
রবিউল হাসান