
ছবি: সংগৃহীত।
আজকের ভোক্তাবাদী সমাজে ‘দেখাতে হবে’ মনোভাব অনেক সময় বাস্তব প্রয়োজনকেও ছাপিয়ে যায়। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষেরা অনেক সময় এমন কিছু কেনাকাটা করে থাকেন যা তাদের আর্থিক সামর্থ্যের সীমায় না হলেও, সমাজে উচ্চ মর্যাদার ভাব জাহির করতে সহায়ক হয়। মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, এই আচরণের পেছনে রয়েছে “স্ট্যাটাস সিম্বল” বা সামাজিক মর্যাদার প্রতীক দেখানোর প্রবণতা। নিচে এমন ৭টি জিনিসের তালিকা দেওয়া হলো, যেগুলো মধ্যবিত্তরা প্রায়ই শুধুমাত্র ‘দেখানোর জন্য’ কিনে থাকেন।
১. ব্র্যান্ডেড স্মার্টফোন
অ্যাপল, স্যামসাং গ্যালাক্সি সিরিজ বা অন্য প্রিমিয়াম ব্র্যান্ডের ফোন কেনা যেন আজকাল একটা সামাজিক মানদণ্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও অনেকেই ফোনের পূর্ণ ফিচার ব্যবহার করেন না, তবুও একটা দামি ফোন হাতে থাকলে যেন আত্মমর্যাদা বাড়ে—এমনটা ভেবে নেন অনেকে।
২. ডিজাইনার কাপড় ও ফ্যাশন ব্র্যান্ড
শুধু পোশাক নয়, তার সাথে লাগামছাড়া ব্যয় হয় জুতা, ব্যাগ, ঘড়ি—সব কিছুর উপর। আন্তর্জাতিক বা নামী দেশীয় ব্র্যান্ডের লোগো দৃশ্যমান এমন পোশাক পরা যেন উচ্চবিত্তের ছোঁয়া পাওয়ার মাধ্যম।
৩. চমকপ্রদ ঘরের সাজসজ্জা
দামি সোফা সেট, চ্যান্ডেলিয়ার, ওয়ালপেপার, ফ্লোরিং—এসবের অনেক কিছুই কেনা হয় অতিথিদের দেখানোর জন্য। বাস্তবে অনেক সময় এগুলোর ব্যবহার সীমিত থাকে, তবে ঘর যেন ‘রিচ’ দেখায়, সেটাই মূল লক্ষ্য।
৪. ঋণ নিয়ে গাড়ি কেনা
অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারই কিস্তিতে গাড়ি কেনেন শুধুমাত্র সামাজিক মর্যাদা রক্ষার জন্য। গাড়ি থাকা মানেই যেন উন্নত জীবনযাত্রার প্রতীক—এই ধারণা থেকেই জন্ম নেয় এই ব্যয়।
৫. দামি রেস্টুরেন্টে খাওয়া ও ছবি পোস্ট করা
"লাইফস্টাইল" শো অফ করতে সোশ্যাল মিডিয়াতে দামি রেস্টুরেন্টের ছবি পোস্ট এখন ট্রেন্ডে। কখনো কখনো খাবারের স্বাদ নয়, বরং রেস্টুরেন্টের বিলটাই হয়ে ওঠে গর্বের বিষয়।
৬. সন্তানকে ইংরেজি মিডিয়াম বা বিদেশি স্কুলে ভর্তি করা
এই প্রবণতা বাড়ছে হু হু করে। অনেক সময় পারিপার্শ্বিক সুবিধা ছাড়াও কেবল “স্ট্যাটাস” বজায় রাখতে সন্তানকে এমন প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়, যার খরচ টানতে গিয়ে পরিবারকে আর্থিক চাপ সহ্য করতে হয়।
৭. বড়সড় সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজন
বিয়ে, জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী বা এমনকি সাধভোজন—সব কিছুতেই যেন ‘দেখানোর’ প্রতিযোগিতা। ব্যাঙ্ক লোন নিয়ে হলেও অনুষ্ঠান যেন জমকালো হয়, এই মনোভাবই মাঝেমধ্যে অর্থনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট করে ফেলে।
এই সকল ব্যয়বহুল ‘স্ট্যাটাস সিম্বল’-এর পেছনে মূলত কাজ করে আত্মসম্মান, সামাজিক স্বীকৃতি ও “কে কী ভাববে” এই মনস্তাত্ত্বিক চাহিদা। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এই প্রবণতা আর্থিক দুরবস্থা ডেকে আনতে পারে। তাই সত্যিকারের আত্মসম্মান অর্জন করতে হলে বাহ্যিক চাকচিক্যের চেয়ে অভ্যন্তরীণ স্থিতি এবং অর্থনৈতিক বাস্তবতাকেই গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।
নুসরাত