ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২

সকালের যে সাধারণ ভুলেই পড়াশোনায় মনোযোগ হারাচ্ছে শিশুরা!

প্রকাশিত: ২২:২২, ১৮ এপ্রিল ২০২৫

সকালের যে সাধারণ ভুলেই পড়াশোনায় মনোযোগ হারাচ্ছে শিশুরা!

ছবিঃ সংগৃহীত

সকালবেলা শিশুদের স্কুলে পাঠানোর সময় কিছু সাধারণ ভুল অভ্যাসই তাদের মনোযোগহীনতার বড় কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। শুধু "মনোযোগ কম" বা "সকালবেলা ঘুমঘুম ভাব" বলে ভুল বুঝে না গিয়ে, অভিভাবকদের উচিত এ সমস্যার মূল কারণগুলো খুঁজে বের করা। শিশুরা কেন স্কুলে গিয়ে ঠিকমতো মনোযোগ দিতে পারে না, সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেছেন।

১. তাড়াহুড়োর নাস্তা:
সকালে পুষ্টিকর নাস্তা ছাড়া স্কুলে গেলে শিশুদের মস্তিষ্ক কার্যত খালি ট্যাংকে চলতে থাকে। আবার অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার যেমন সিরিয়াল, পেস্ট্রি বা প্যাকেটজাত জুস অল্প সময়ের জন্য শক্তি দিলেও পরে তা রক্তে চিনির পরিমাণ কমিয়ে দিয়ে শিশুকে ক্লান্ত ও মনোযোগহীন করে তোলে। এর বদলে ডিম, টোস্ট, ওটস, ফল ও বাদাম বা দই দিয়ে স্মুদি জাতীয় স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ানো উচিত।

২. পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব:
একজন ১০ বছর বয়সী শিশু যদি রাত ১১টায় ঘুমিয়ে ভোর ৬:৩০-এ উঠে, তাহলে সে প্রয়োজনীয় ঘুম থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ঘুমের অভাব শিশুর মেজাজ, স্মৃতি, মনোযোগ এবং শারীরিক সমন্বয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। নিয়মিত ঘুমের রুটিন মেনে চলা, স্ক্রিন টাইম কমানো এবং রাতে ঘুমানোর আগে শান্ত পরিবেশ তৈরির পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

৩. সকালে স্ক্রিন টাইম:
সকালে মোবাইল, ট্যাব বা টিভি দেখার অভ্যাস শিশুর মনোযোগ ছিনিয়ে নেয়। এইসব ডিভাইস থেকে মস্তিষ্ক উত্তেজিত হয়ে যায়, ফলে ক্লাসরুমের মন্থর পরিবেশে ফিরে মন বসানো কঠিন হয়ে পড়ে। পাশাপাশি, রাতে স্ক্রিন ব্যবহারে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। তাই সকালটা যেন হয় স্ক্রিনমুক্ত ও শান্তিপূর্ণ।

৪. তাড়াহুড়ো করে দিন শুরু করা:
জলদি উঠা, দৌড়ে জামাকাপড় পরা, হুড়োহুড়ি করে খাবার খাওয়া—এসবই শিশুর মনে উদ্বেগ তৈরি করে। এই উদ্বেগ দিনভর থেকে গিয়ে মনোযোগে প্রভাব ফেলে। তাই আগের রাতেই স্কুল ব্যাগ গুছিয়ে রাখা, জামাকাপড় ঠিক করে রাখা এবং একটু আগে উঠার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত।

৫. পানিশূন্যতা:
অল্প পানিশূন্যতাও শিশুর মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অনেক শিশু সকালে পানি খায় না বললেই চলে। ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে এবং স্কুলে পানির বোতল দিতে হবে।

৬. পুষ্টির ঘাটতি:
শিশুর মস্তিষ্কের জন্য প্রয়োজন আয়রন, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, বি-ভিটামিন ও ম্যাগনেশিয়ামের মতো পুষ্টি উপাদান। এই উপাদানগুলোর ঘাটতি মনোযোগে ঘাটতি, অবসাদ ও ক্লান্তির কারণ হতে পারে। খাদ্যতালিকায় ডিম, শাকসবজি, বাদাম, বীজ ও মাছ রাখা জরুরি।

৭. অতিরিক্ত ক্লাস ও পড়াশোনার চাপ:
গান, খেলাধুলা, টিউশনি—সব মিলিয়ে শিশুর বিশ্রাম নেওয়ার সময়ই থাকছে না। ফলে মানসিক ক্লান্তি পরদিন মনোযোগে প্রভাব ফেলে। পড়াশোনার বাইরের কাজ সীমিত রাখা ও পর্যাপ্ত বিশ্রামের সুযোগ দেওয়া জরুরি।

৮. অজানা শারীরিক বা মানসিক সমস্যা:
যদি সবকিছু সঠিক থাকার পরেও শিশু মনোযোগ দিতে না পারে, তবে অজানা স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন চোখের সমস্যা, ADHD বা অডিটরি প্রসেসিং ডিসঅর্ডারের মতো জটিলতা থাকতে পারে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলা এবং প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

শিশুরা সব সময় শেখার জন্য প্রস্তুত থাকে, শুধু দরকার সঠিক যত্ন, পুষ্টি এবং একটি শান্ত সকাল। অভিভাবকরা ধীরে ধীরে একেকটি পরিবর্তন আনলেই শিশুর মনোযোগ, শক্তি ও স্কুলে যাওয়ার আগ্রহে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাবে।

 

সূত্রঃ https://timesofindia.indiatimes.com/life-style/parenting/moments/morning-mistakes-why-kids-struggle-to-focus-at-school/photostory/120375479.cms?picid=120375490

রিফাত

×