
ছবি: সংগৃহীত।
স্বাস্থ্য সচেতনতায় অনেকেই সহজ সমাধান খোঁজেন। কেউ কেউ কাঁচা দুধ পান করার পরামর্শ দেন, আবার কেউ কেউ পুরোপুরি কার্বোহাইড্রেট বাদ দেওয়ার কথা বলেন। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞান ও পুষ্টিবিদদের মতে, এসব পরামর্শের বেশিরভাগই বিভ্রান্তিকর এবং কখনও কখনও ক্ষতিকরও হতে পারে।
তবে এও সত্যি, আমাদের দেহ সম্পর্কে আজও অনেক কিছু অজানা, এবং বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন তথ্য আবিষ্কার করছেন। উদাহরণস্বরূপ, কয়েক বছর আগেও গাট মাইক্রোবায়োম বা অন্ত্রের জীবাণু নিয়ে তেমন আলোচনা ছিল না, অথচ এখন এটিকে স্বাস্থ্য রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
সম্প্রতি আলোচনায় এসেছে আপেল সিডার ভিনেগার (Apple Cider Vinegar বা ACV) — প্রতিদিন অল্প পরিমাণ গ্রহণে কিছু সম্ভাব্য উপকারিতা থাকতে পারে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। যদিও একে কোনো ‘ম্যাজিক পানীয়’ বলা যায় না, তবু এটি একেবারে অকার্যকরও নয়।
শিকাগো ইউনিভার্সিটি মেডিসিন ওয়েবসাইটে গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট ড. এডউইন কেএম ম্যাকডোনাল্ড চতুর্থ বলেন, “আপেল সিডার ভিনেগার কোনো যাদুকরী উপাদান নয়, আবার এটি পুরোপুরি বাজে জিনিসও নয়। সত্য সাধারণত মাঝামাঝি কোথাও অবস্থান করে।”
রক্তে শর্করার পরিমাণ কমাতে সহায়ক
গবেষণায় দেখা গেছে, খাবারের পর আপেল সিডার ভিনেগার গ্রহণ করলে রক্তে গ্লুকোজের প্রবাহ হ্রাস পেতে পারে। বিবিসির এক পরীক্ষায় দেখা যায়, আপেল সিডার ভিনেগার গ্রহণকারী দলের রক্তে ৯০ মিনিটের মধ্যে গ্লুকোজের প্রবেশ ৩৬% হ্রাস পায়।
২০০৪ সালে জার্নাল অব দ্য আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব ডায়াবেটিস-এ প্রকাশিত আরেকটি ছোট পরিসরের গবেষণায়ও একই ফলাফল পাওয়া যায়।
কোলেস্টেরল কমাতেও ভূমিকা রাখতে পারে
‘বি.এম.সি কমপ্লিমেন্টারি মেডিসিন অ্যান্ড থেরাপিজ’ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে প্রতিদিন ১৫ মিলিলিটার আপেল সিডার ভিনেগার গ্রহণ করলে রক্তে মোট কোলেস্টেরলের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসে।
ওজন কমাতেও সাহায্য করতে পারে
২০১৮ সালে ‘জার্নাল অব ফাংশনাল ফুডস’-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়, ক্যালরি নিয়ন্ত্রিত ডায়েটের পাশাপাশি আপেল সিডার ভিনেগার গ্রহণ করলে ক্ষুধা কমে, শরীরের ওজন, বিএমআই, কোমরের পরিমাপ ও রক্তের ট্রাইগ্লিসারাইড কমে এবং উপকারী কোলেস্টেরলের (HDL) পরিমাণ বেড়ে যায়।
গবেষকরা জানান, “এই ফলাফল ইঙ্গিত দেয় যে, আপেল সিডার ভিনেগার ওজন নিয়ন্ত্রণের একটি সহায়ক উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।”
উচ্চ রক্তচাপ ও ক্যানসার নিয়ে বিভ্রান্তিকর দাবি
কিছু তথাকথিত ‘ওয়েলনেস গুরুরা’ দাবি করেন, আপেল সিডার ভিনেগার উচ্চ রক্তচাপ ও এমনকি ক্যানসারও নিরাময় করতে পারে। তবে ড. ম্যাকডোনাল্ড বলেন, “এসব দাবির বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। ক্যানসার নিরাময়ে আমি চাইতাম শুধু ভিনেগার খাওয়াতে পারি, কিন্তু বাস্তবতা এমন নয়।”
কীভাবে গ্রহণ করবেন?
বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, আপেল সিডার ভিনেগার সরাসরি না খেয়ে খাদ্যের সঙ্গে বা পানির সঙ্গে অল্প পরিমাণে মিশিয়ে খাওয়া ভালো। তবে এর গ্রহণের জন্য নির্দিষ্ট কোনো ডোজ নির্ধারিত নেই, তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অতিরিক্ত গ্রহণ করা উচিত নয়।
অতিরিক্ত গ্রহণে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
আপেল সিডার ভিনেগার অতিরিক্ত গ্রহণ করলে নিচের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো দেখা দিতে পারে: দাঁতের এনামেল ক্ষয়, গলা জ্বালা বা জ্বালাপোড়া, অম্বল বা অ্যাসিডিটি, বমিভাব,পেটে অস্বস্তি বা গ্যাস।
যে কোনো খাবার বা পানীয় নিয়মিত গ্রহণের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। আপেল সিডার ভিনেগারও তার ব্যতিক্রম নয়। স্বাস্থ্যবান থাকার জন্য সুষম খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম ও পেশাদার চিকিৎসা পরামর্শই সবচেয়ে কার্যকর পথ।
সায়মা ইসলাম