
ছবি: সংগৃহীত
ফুসফুস ক্যান্সার বলতে আমরা সাধারণত ধূমপানের প্রভাবকেই দায়ী করে থাকি। তবে চিকিৎসা ও গবেষণা বলছে, ধূমপান না করেও অনেকেই এই প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ফুসফুস ক্যান্সারের রোগীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ কখনোই ধূমপান করেননি। পরিবেশ, জীবনযাপন ও জিনগত প্রভাবসহ একাধিক কারণ এই ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে।
দ্বিতীয় হাতের ধোঁয়া বড় হুমকি
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেক সময় নিজে ধূমপান না করলেও পরিবারের সদস্য, সহকর্মী বা আশেপাশের ধূমপায়ীদের ধোঁয়ার সংস্পর্শে এসে ক্ষতির শিকার হন অনেকে। নিয়মিত ‘সেকেন্ডহ্যান্ড স্মোক’ গ্রহণ করলে ফুসফুসে দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ ও ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
বায়ুদূষণ ও শিল্পজাত রাসায়নিক বড় কারণ
ঢাকা শহরসহ দেশের নানা নগরীতে যানবাহনের ধোঁয়া, কলকারখানার গ্যাস ও ধুলাবালির কারণে বায়ুদূষণ বেড়েই চলেছে। পাশাপাশি কারখানায় অ্যাসবেস্টস, আর্সেনিক বা সালফার ডাই-অক্সাইডের মতো বিষাক্ত পদার্থের সংস্পর্শেও দীর্ঘমেয়াদে ফুসফুসে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
জিনগত প্রভাব ও পারিবারিক ইতিহাস
চিকিৎসকদের মতে, পরিবারের কোনো সদস্য যদি আগে ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে জেনেটিক কারণে পরবর্তী প্রজন্মেও সেই সম্ভাবনা থেকে যায়। এমনকি ধূমপানের ইতিহাস না থাকলেও কিছু নির্দিষ্ট জিন মিউটেশন ফুসফুস ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।
দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসকষ্টজনিত রোগ ও জীবনধারা
যেসব ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে অ্যাজমা, সিওপিডি, যক্ষ্মা বা ব্রঙ্কাইটিসে ভুগছেন, তাদের ফুসফুস দুর্বল হয়ে পড়ে। এতে ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। একই সঙ্গে অনিয়মিত জীবনযাপন, অপুষ্টি, এবং শারীরিক পরিশ্রমের অভাবও ঝুঁকিকে বাড়িয়ে তোলে। নারীদের মধ্যে হরমোনাল পরিবর্তন বা হরমোন থেরাপিও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ বলে মনে করছেন গবেষকরা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে ঘরে র্যাডন গ্যাসের উপস্থিতি পরীক্ষা করানো, দূষিত এলাকায় মাস্ক ব্যবহার, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া ও নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা জরুরি। ধূমপায়ী ব্যক্তিদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলাও একটি কার্যকর পদক্ষেপ। স্বাস্থ্য বিশারদরা মনে করছেন, শুধু ধূমপান নয়, বরং আরও অনেক পরিবেশগত ও শারীরিক উপাদান ফুসফুস ক্যান্সারের জন্য দায়ী হতে পারে। তাই সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে ঝুঁকি শনাক্ত করে আগাম প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
বি.দ্র: প্রতিবেদনটি সচেতনতার উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে। কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ফারুক