
ছবি: সংগৃহীত
চলচ্চিত্রের রঙিন পর্দায় জায়গা করে নেওয়ার আগেই, এরা ছিলেন মেডিকেল বই, প্র্যাকটিকাল আর সাদা অ্যাপ্রনের জগতে ব্যস্ত। পরিবার বা সমাজের প্রত্যাশা থেকে শুরু করে নিজস্ব বিজ্ঞানপ্রেম—বিভিন্ন কারণে তারা পা রেখেছিলেন চিকিৎসাশাস্ত্রের পথে। কেউ সফলভাবে ডিগ্রি শেষ করেছেন, কেউ হয়তো মাঝপথেই অন্য পথে পা রেখেছেন। কিন্তু সবার গল্পই প্রমাণ করে, জীবনের চলার পথ একরৈখিক হয় না, আর সাফল্যও অনেক সময় আসে একদম অপ্রত্যাশিত মোড় থেকে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই অভিনেতাদের গল্প, যারা ডাক্তার হতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ভাগ্য তাদের টেনে নিয়েছে রুপালি পর্দার দুনিয়ায়।
আদিতি গোভিত্রিকার
ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় তারকা আদিতি গোভিত্রিকার যাত্রা সত্যিই অনুপ্রেরণামূলক। এমবিবিএস ডিগ্রি শেষ করে স্ত্রীরোগ বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিও অর্জন করেন তিনি। এরপরই জয় করেন মিস ইন্ডিয়া এবং পরে মিস ওয়ার্ল্ড খেতাব। চিকিৎসক থেকে বলিউড অভিনেত্রী হয়ে ওঠা আদিতির পথ সহজ ছিল না। ‘পহেলি’, ‘দে দানা দান’–এর মতো ছবিতে অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি স্বাস্থ্য ও মানসিক সুস্থতা বিষয়ে কাজ করে চলেছেন। তিনি বিদেশ থেকেও মনোবিজ্ঞান ও ওয়েলনেস নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। তার জীবন প্রমাণ করে—বিজ্ঞান, গ্ল্যামার আর আত্মউন্নয়ন—সব একসঙ্গে সম্ভব।
ড. শ্রীরাম লাগু
শ্রীরাম লাগু ছিলেন ভারতের শ্রেষ্ঠ অভিনেতাদের একজন এবং একই সঙ্গে একজন প্রখ্যাত ইএনটি সার্জন। ভারতে ও আফ্রিকায় চিকিৎসা করে তিনি পরে থিয়েটার ও সিনেমার প্রতি আকৃষ্ট হন। মারাঠি ও হিন্দি নাট্যজগতে তিনি হয়ে উঠেছিলেন এক অবিস্মরণীয় নাম। ‘ঘারৌন্ডা’, ‘পিঞ্জরা’ এবং ‘এক দিন আচানক’-এর মতো ছবিতে তার অভিনয় অসাধারণ আবেগ ও নৈতিকতাবোধ ফুটিয়ে তোলে। তার অভিনয়ে যেমন ছিল মেধা, তেমনি ছিল সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা। শ্রীরাম লাগুর জীবন নতুন প্রজন্মকে শেখায়, সাহস করে নিজের পথ বদলালেও সাফল্য ধরা দেয়।
মোহন আগাশে
বর্ষীয়ান অভিনেতা মোহন আগাশে একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ছিলেন। পুনের বিখ্যাত বিজে মেডিকেল কলেজে কাজ করার পাশাপাশি থিয়েটারেও অভিনয় করতেন। চিকিৎসক হিসেবে লেকচার দেয়ার ফাঁকে ফাঁকে তিনি রিহার্সাল চালিয়ে যেতেন! তার সিনেমা ‘গান্ধী’, ‘ড. বাবাসাহেব আম্বেদকর’, ‘কাউন’-এ তার চরিত্রায়ণে স্পষ্ট ধরা পড়ে তার মনস্তত্ত্বের গভীর জ্ঞান। তিনি ভারতের মানসিক স্বাস্থ্য নীতিতেও ভূমিকা রেখেছেন। ক্লিনিকাল ইন্টেলিজেন্স ও সৃজনশীলতার এমন মেলবন্ধন বিরল।
আমোল কোলহে
এমবিবিএস পাশ করার পর আমোল কোলহে অভিনয় শুরু করেন মারাঠি টিভি ও চলচ্চিত্রে। বিশেষ করে ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ ও ছত্রপতি সাম্ভাজি-এর মতো ঐতিহাসিক চরিত্রে তার অনবদ্য অভিনয় নজর কেড়ে নেয় সকলের। তবে শুধু অভিনয় নয়, পরে তিনি রাজনীতিতেও নাম লেখান এবং বর্তমানে তিনি একজন সংসদ সদস্য। তার জীবনযাত্রা প্রমাণ করে—একজন মানুষ একাধিক জগতে সফলভাবে পথচলা করতে পারেন, যদি লক্ষ্য স্থির থাকে।
সাই পল্লবী
সাই পল্লবী শুধুই তার স্বাভাবিক সৌন্দর্য বা অভিনয়ের জন্য বিখ্যাত নন, তিনি হলেন কয়েকজন ভারতীয় অভিনেত্রীর একজন, যিনি সম্পূর্ণ এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তিনি জর্জিয়ার তিবলিসি স্টেট মেডিকেল ইউনিভার্সিটি থেকে ডিগ্রি অর্জন করেন।
‘প্রেমাম’ (২০১৫) ছবিতে তার সহজ-সরল চরিত্র দর্শকের হৃদয় জয় করে নেয়, তখনো তিনি মেডিকেলের ছাত্রী। যদিও তিনি পেশাগতভাবে চিকিৎসা শুরু করেননি, তবু তার পড়াশোনার প্রতি নিষ্ঠা এবং অভিনয়ে আত্মনিবেদন তাকে আজ এক আলাদা উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
সূত্র: https://timesofindia.indiatimes.com/entertainment/hindi/bollywood/news/actors-who-studied-to-become-doctors/photostory/120105354.cms
রবিউল হাসান