ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২

যেভাবে বুঝবেন আপনার প্রাপ্তবয়স্ক সন্তান আপনাকে ভালোবাসে না 

প্রকাশিত: ১৫:১২, ১৬ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ২০:২৩, ১৬ এপ্রিল ২০২৫

যেভাবে বুঝবেন আপনার প্রাপ্তবয়স্ক সন্তান আপনাকে ভালোবাসে না 

ছবি: প্রতীকী

বাবা- মায়ের সাথে সন্তানের সম্পর্ক হয় অটুট। যেকোনো পরিস্থিতিতে তারা একে অপরের সাথে থাকে এবং সমর্থন করে। 

 

তবে কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণ করার যাত্রার মধ্যে অনেকেরই তাদের বাবা- মায়ের সাথে একটি দূরত্ব তৈরি হয়ে যায়। সম্পর্কে জটিলতা চলে আসে। সন্তানরা মানসিকভাবে নিজেদেরকে গুটিয়ে ফেলে। বাবা- মাকে তাদের দৈনন্দিন ঘটনা আর জানাতে চায় না শেষমেশ বিচ্ছিন্নতার সৃষ্টি হয়।  

 

কিছু সাইন বা লক্ষণ আপনার উপলব্ধি করা দরকার যার মাধ্যমে আপনি বুঝবেন আপনার প্রাপ্তবয়স্ক সন্তান আপনাকে আর ভালোবাসেনা। বিষয়টি শুনতে কষ্টকর মনে হলেও আপনাকে এগুলো বুঝতে সাহায্য করবে এই পরিস্থিতিতে আপনি কী করতে পারেন।  

 

এই নিবন্ধে এমন ১১টি দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।  

 

১. খুব সামান্য বা একেবারেই যোগাযোগ না রাখা 

যদি এমন হয় আপনার সন্তান আপনার সাথে প্রতিদিন কথা বলতো কিন্তু এখন মাঝে মধ্যে, কোন ছুটির দিনে, বা বিশেষ অনুষ্ঠান ব্যতীত খোঁজ খবর নিচ্ছে না তাহলে বুঝবেন এটা কেবল তাদের ব্যস্ততা নয়। যখন সাপ্তাহিক কথা মাসে রূপান্তরিত হয় এবং সেই কথাও আপনি শুরু করেন, তাহলে বুঝবেন যে আপনার সন্তান ধীরে ধীরে দূরে সরে যাচ্ছে বা আপনি তাদের জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছেন।  

 

এটা স্বাভাবিক যে সন্তান বড় হয়ে গেলে স্বাধীন হয়ে যায়। কিন্তু একেবারেই কোন যোগাযোগ না থাকলে মানসিকভাবে দূরত্বের সৃষ্টি হয়। আপনি এটা ভাবলে ভুল হবে না যে আপনার প্রাপ্তবয়স্ক সন্তান আপনাকে আর ভালোবাসে না। 

 

২. ব্যক্তিগত আলাপ এড়িয়ে চলা

আপনার সন্তান যদি আপনার সাথে শুধু উপর উপর আলাপ আলোচনা করে যেমন আজকের আবহাওয়া কেমন বা কে কী করছে, কিন্তু নিজেদের নিয়ে গভীর আলাপগুলো এড়িয়ে চলে তাহলে বুঝবেন সে আপনার থেকে মানসিক দূরত্ব তৈরি করতে চাচ্ছে। যখন দেখবেন তারা তাদের ব্যক্তিগত জীবনের সম্পর্ক, হতাশা, সংগ্রাম, সুখ, দুঃখ, আনন্দ আপনাকে বলতে চাচ্ছে না বুঝে যাবেন আপনি আর তাদের মানসিক স্বস্তির জায়গাতে নেই। 

 

এটা হতে পারে পূর্বের কোন ঘটনা থেকে যেখানে তারা কোনোভাবে আপনার থেকে কষ্ট পেয়েছে বা তাদের বিশ্বাস ভেঙ্গেছে, বা আপনি তাদের এই বিষয়গুলো ভালোভাবে গ্রহণ করবেন কি না সেই ভয় থেকে। 

 

৩. স্নেহ বা কৃতজ্ঞতার অভাব

আপনার সন্তান যদি আপনাকে কখনো না বলে ‘বাবা/ মা তোমাকে ভালোবাসি’ বা কৃতজ্ঞতা না জানায়, হতে পারে আপনাকে তারা স্নেহ করে না বরং সহ্য করে। 

 

বাবা- মা এবং সন্তানের মধ্যে যে সবসময় নাটকীয় সম্পর্ক থাকবে এমন না কিন্তু কোন রকম ভালবাসা বা আদর যত্ন না থাকলে বা আপনি যদি ভালোবেসে তাদের জন্য কিছু করেন এবং তারা চোখ উল্টে সেটাকে তাচ্ছিল্য করে তাহলে সম্পর্কে আর কোন উষ্ণতা থাকে না।  

 

হতে পারে স্নেহ বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করা তাদের মানসিক দূরত্ব বহাল রাখার একটি মাধ্যম। অথবা তারা নিজেদের মনে এটা প্রতিষ্ঠিত করে নিয়েছে যে আপনি যাই করেন সেটা প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য না। এধরনের আচরণ এটাই বোঝায় যে তারা আপনার সাথে আর মানসিকভাবে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে না। 

 

৪. কঠোর সীমা নির্ধারণ করা

যেকোনো সম্পর্কে সীমানা নির্ধারণ করা জরুরি। প্রাপ্তবয়স্ক সন্তান এবং বাবা- মায়ের মধ্যে তো বটেই। কিন্তু আপনার সন্তান যদি অহেতুক সীমানা নির্ধারণ করে যেমন, তাদের অনুমতি ব্যতীত কল করা যাবে না, তাদের সাথে দেখা করতে যাওয়া যাবে না, বা তাদের সাথে পারিবারিক কোন বিষয়ে আলাপ আলোচনা করা যাবে না তাহলে বুঝবেন তারা আপনার সাথে গভীর কোন সম্পর্ক রাখতে আগ্রহী না। 

 

এই সীমানাগুলো যদি শীতলভাবে নির্ধারণ করা হয় যেখানে আদর, স্নেহ, মমতার কোন ছায়া নেই, যেগুলো তাদের নিজেদের ব্যক্তিগত বিষয়ের নিরাপত্তা করতে না বরং আপনাকে শাস্তি দিতে বানানো হয়েছে তাহলে বুঝবেন তারা মানসিকভাবে আপনাকে আর তাদের জীবনে রাখতে চাচ্ছে না। 

 

৫. প্রয়োজনের সময় যোগাযোগ করে

যখন আপনার সন্তান কেবল তখনই আপনার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে যখন তাদের কিছু প্রয়োজন হয় তখন আপনার মনে হওয়া স্বাভাবিক যে আপনি তাদের কাছে সম্পদ, অভিভাবক নন। তাদেরকে সাহায্য করা এক জিনিস আর শুধু প্রয়োজনে তাদের আপনার কথা মনে পড়ে সেটা আরেক জিনিস।  

 

এধরণের একপাক্ষিক সম্পর্ক মানসিক যোগাযোগের অভাবকে চিহ্নিত করে। এটা স্পষ্ট বোঝা যায় তারা ভালোবাসার জায়গা থেকে আপনার খোঁজ নিচ্ছে না। 

 

৬. স্থায়ী ক্ষোভ

প্রত্যেক সন্তানই তাদের ছোটবেলার কোন কোন কষ্ট মনে রাখে কিন্তু আপনার সন্তান যদি আপনার কোন ভুল থেকে পাওয়া কষ্টগুলো আঁকড়ে ধরে বসে থাকে বুঝবেন সে এখনো আপনার ভুলগুলো ভুলতে পারিনি। তারা আপনার এই ভুলগুলো এমনভাবে উপস্থাপন করতে পারে যে আপনি সামনে আসলেই তার এই কষ্টদায়ক স্মৃতিগুলো মনে পড়ে যায়। 

 

আপনি দুঃখ প্রকাশ করার পরও আপনাকে তার গল্পের ভিলেন হিসাবেই মনে করে। এরকম স্থায়ী ক্ষোভ সম্পর্কের মাঝে দেয়াল তুলে দেয়।  

 

৭. অসম্মানজনক ব্যবহার

যদি আপনার সন্তান আপনাকে ব্যঙ্গ করে বা আপনার সাথে বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ করে তাহলে আপনাকে বুঝতে হবে কেন তাদের আচরণে এই পরিবর্তন এসেছে। 

 

আপনাকে সে সরাসরি অসম্মান নাও করতে পারে। কিন্তু তাদের আচারভঙ্গি, কথা বলার ধরণ,  আপনাকে নিয়ে মজা করা বা আপনি কিছু বললে চোখ উল্টানোর মাধ্যমে তারা আপনাকে অসম্মান করতে পারে। 

 

সম্মান একটি সম্পর্ককে বেঁধে রাখে। এর অভাবে সম্পর্ক অনমনীয় হয়ে পড়ে।

 

৮. মানসিক বিচ্ছিন্নতা

কেউ যখন আপনাকে স্নেহ করা বন্ধ করে দেয় আপনি তা বুঝতে পারবেন। আপনার সন্তান যখন আপনার অসুস্থতায়, বিপদে, সফলতায় কোন ভ্রূক্ষেপ করে না তখন এটা আপনাকে কষ্ট দেয়। 

 

সে আপনার জন্মদিন ভুলে যেতে পারে, আপনার মেসেজ না দেখে রেখে দিতে পারে, আপনি কিছু জিজ্ঞাসা করলে তার রসকষহীন উত্তর দিতে পারে। এর মানে এই না যে তারা ব্যস্ত বরং তারা আপনার থেকে মানসিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। 

 

৯. পারিবারিক অনুষ্ঠান এড়িয়ে চলা

দুর্ভাগ্যক্রমে এক দুটি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে না পারা আলাদা বিষয়। কিন্তু যখন আপনার সন্তান ছুটির দিনে, জন্মদিনে বা খাবার টেবিলেও উপস্থিত থাকছে না আপনি বুঝবেন সে আপনাকে এড়িয়ে চলছে। আপনি যেখানে থাকছেন আপনার সন্তান সেখানে থাকছে না।  

 

তারা শেষ মুহূর্তে পরিকল্পনা বাতিল করে দিতে পারে , অথবা অনুষ্ঠানের শেষ মুহূর্তে অংশগ্রহণ করতে পারে। আবার এমনও হতে পারে সে না এসে অন্য কাউকে তার পরিবর্তে পাঠাচ্ছে। এর মাধ্যমে বোঝায় যে আপনার প্রতি তার কোন ভালবাসা আর নেই। 

 

১০. অন্যের কাছে নেতিবাচক কথা বলা

আপনি হতবাক হবেন যখন আপনি আপনার পরিচিতদের কাছ থেকে আপনার বদনাম শুনবেন তাও আবার যখন সে বদনাম করেছে আপনার সন্তান। 

 

এগুলো অনেক নির্দয় বা এক- পাক্ষিক হতে পারে। তারা এই বদনামগুলো করে জমে থাকা রাগ, ক্ষোভ, বা আপনার থেকে নিজেকে দূরে রাখার উদ্দ্যেশ্যে। আপনাকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করে তাদের আচরণকে যথার্থতা দেওয়ার চেষ্টা করে। আপনার সন্তান যদি আপনার সাথে তার সম্পর্ক পুনরায় ঠিক করতে চায় তাহলে সে আপনার বদনাম না করে সরাসরি আপনার সাথে কথা বলতো।  

 

১১. সম্পর্ক ঠিক করতে আপত্তি

আপনার সন্তান যে আপনাকে আর ভালোবাসে না তার সবথেকে বড় উদাহরণ হল আপনি সবকিছু ঠিক করতে চান কিন্তু সে চায় না। 

 

আপনি ক্ষমা চাইবেন কিন্তু তা যথেষ্ট না। আপনি কথা বলবেন কিন্তু সে কোন উত্তর না দিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যাবে। এটা পরিষ্কারভাবে বোঝায় সে আপনার সাথে সম্পর্ক রাখতে ইচ্ছুক নয়। 

 

যখন কেউ কোন সম্পর্ক আর টিকিয়ে রাখতে চায় না তখন তারা সে সম্পর্ক ঠিক করার সকল প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে। এটি আপনাকে কষ্ট দিলেও আপনাকে বুঝতে হবে তারা হয় আশা ছেড়ে দিয়েছে নয়তো তারা আপনাকে ফেলে সামনে এগিয়ে গিয়েছে। 

 

তথ্যসূত্র

https://www.yourtango.com/2025385283/signs-adult-child-doesnt-love-you-parents

সুরাইয়া

×