
ছবি: প্রতীকী
ওয়ারেন বাফেট তার তীক্ষ্ণ বিনিয়োগ বুদ্ধির জন্য বিশ্ববিখ্যাত। কিন্তু তিনিও স্বীকার করেন, আবেগগত বুদ্ধিমত্তা বা emotional intelligence তার সহজাত ছিল না। তিনি বলেন, ক্যারিয়ারের শুরুতে আমার বুদ্ধি ছিল, কিন্তু মানুষের সঙ্গে বোঝাপড়া করার ক্ষমতা ছিল না। এই অভাব পূরণ করতে সাহায্য করেছিলেন তার দীর্ঘদিনের বন্ধু ও পরামর্শদাতা টম মারফি, যিনি বাফেটকে এমন একটি সহজ অথচ অসাধারণ পরামর্শ দিয়েছিলেন, যা আজও তিনি মনে রাখেন।
যে শিক্ষা আজও অনুপ্রেরণা
গিলিয়ান জোই সেগাল রচিত বই Getting There: A Book of Mentors-এ বাফেট শেয়ার করেছেন সেই অমূল্য শিক্ষা। চল্লিশ বছর আগে টম আমাকে বলেছিলেন, ওয়ারেন, তুমি কাউকে নরকে পাঠাতে চাইলে, সেটা কালও করতে পারো।
এই কথাটি প্রথমে মজার মনে হলেও এর ভেতরে লুকিয়ে আছে নেতৃত্বের একটি গভীর দৃষ্টিভঙ্গি, যা ইঙ্গিত করে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করাই একজন সত্যিকারের নেতার বৈশিষ্ট্য। অর্থাৎ রেগে গিয়ে সবসময় তৎক্ষণাৎ প্রতিক্রিয়া দেখাতে হয়না।
আত্মসচেতনতাই নেতৃত্বের ভিত
প্রথমদিকে বাফেট নিজেই বলেন, তার ‘সামাজিক দক্ষতা’ খুব একটা ভালো ছিল না।
তিনি সহজেই উত্তেজিত হয়ে পড়তেন এবং দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখাতেন। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি শিখেছেন কীভাবে থেমে, চিন্তা করে, উদ্দেশ্য নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে হয়, এটাই আত্মসচেতনতা।
তার পরামর্শদাতা মারফি নিজে এই গুণের প্রতিচ্ছবি ছিলেন। বাফেট বলেন, “তিনি কখনও চিৎকার করতেন না, কখনও কারও ওপর আধিপত্য বিস্তার করতেন না। সব কিছুই করতেন অত্যন্ত শান্তভাবে।”
আবেগ নিয়ন্ত্রণের তিনটি ধাপ
আবেগ নিয়ন্ত্রণ মানে কোনোভাবে নিজের আবেগ চেপে রাখা নয়। বরং, এটি সেই সচেতনতা তৈরি করে যা আপনার নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা দেয়।
আবেগে প্রতিক্রিয়া না দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন
আপনি যদি কারও প্রতি রেগে গিয়ে শক্ত ভাষায় ই-মেইল লিখে ফেলেন তাহলে তা প্রেরণের আগে একদিন অপেক্ষা করুন। সময়ের সাথে সাথে হয়তো আপনি আগের লিখা সেই ই-মেইলটি পর্যালোচনা করবেন, বা আবার সম্পূর্ণ নতুনভাবে লিখবেন। অনেক সময়, মাত্র ১০ সেকেন্ড দম নিয়েও অনেক বড় ক্ষতি ঠেকানো যায়।
সময় নিয়ে অনুভব বুঝুন
নিজেকে জিজ্ঞেস করুন—আসলে কি আপনাকে রাগিয়ে তুলেছে? রাগের নিচে হয়তো লুকিয়ে আছে অপমান, হতাশা, বা অবমূল্যায়নের অনুভূতি।
বলতে পারেন, “আমাকে একটু সময় দিন—এই বিষয়ে পরে আলোচনা করবো।” কিংবা, বিশ্বাসযোগ্য কাউকে বলেও নিজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিষ্কার করতে পারেন।
সহানুভূতির জায়গা থেকে দেখুন
চেষ্টা করুন অন্য ব্যক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে ভাবতে। হয়ত সে নিজেই কোনো চাপে আছে। তার আচরণের পেছনে কী কারণ থাকতে পারে?
সহানুভূতি মানে অন্যের খারাপ ব্যবহার মেনে নেওয়া নয়, বরং নিজেকে আবেগে না ভেসে গিয়ে শান্তভাবে প্রতিক্রিয়া জানানোর ক্ষমতা তৈরি করা।
নেতৃত্ব মানে আত্মনিয়ন্ত্রণ
মনোবিজ্ঞানী ড্যানিয়েল গোলম্যান বলেন, যাঁরা আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন, তাঁরাই নিরাপদ, ন্যায্য কর্মপরিবেশ তৈরি করতে পারে। আর মেধাবীরা সবসময় এমন কিছুই প্রত্যাশা করে।
ব্যবসায় হোক বা জীবনে, সেরা নেতৃত্ব আসে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারা থেকে। তাই যখন আপনি পরবর্তীতে কারও উপর রেগে যাবেন এবং কিছু বলার জন্য মুখ খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন— তখন টম মারফির এই উপদেশ মনে করুন, ‘তুমি কালও সেটা বলতে পারো—হয়ত তখন আর বলার প্রয়োজনই থাকবে না’
সূত্র: https://www.inc.com/marcel-schwantes/warren-buffetts-simple-rule-for-keeping-your-cool-and-leading-with-emotional-intelligence/91175573
রবিউল হাসান