
ছবি: সংগৃহীত
আমরা বেশিরভাগ মানুষই চেষ্টা করি এমন কেউ হতে, যাকে অন্যরা ভালোবাসে, যার সঙ্গে সময় কাটাতে সবাই স্বচ্ছন্দ বোধ করে। কিন্তু মাঝেমধ্যে এমন কিছু মানুষকে আমরা দেখি—যারা হয়ত ইচ্ছাকৃতভাবে নয়, কিন্তু ঘরে ঢুকেই চারপাশের আমেজ নিঃশেষ করে দেয়।
গবেষণা বলছে, কিছু নির্দিষ্ট আচরণ মানুষের প্রতি বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। এ ধরনের আচরণ যে কাউকে দূরে ঠেলে দেয়, আর এসব আচরণ যারা করেন, তারা হয়ত বুঝতেই পারেন না কেন সবাই তাদের এড়িয়ে চলে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক মনোবিজ্ঞান অনুযায়ী এমন ৫ ধরনের মানুষ যাদের সঙ্গে থাকতে কেউই পছন্দ করে না—
চিরকালীন অভিযোগকারী
সবারই মাঝে মাঝে কষ্ট বা হতাশা প্রকাশ করার দরকার পড়ে, সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু কেউ যদি সব সময় নিজের সমস্যার কথাই বলেন, সমাধানে আগ্রহ না দেখান, তাহলে তা অন্যদের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, একটানা নেতিবাচক চিন্তা মস্তিষ্ককে এমনভাবে প্রভাবিত করে যে, মানুষ আরও বেশি হতাশা ও দুশ্চিন্তার ফাঁদে পড়ে যায়।
এ ধরনের মানুষদের আশেপাশে থাকা মানেই মানসিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়া। ক্রমাগত অভিযোগ শুনতে শুনতে মানুষ এক সময় সেই ব্যক্তিকে এড়িয়ে চলতে শুরু করে নিজের মানসিক শান্তি রক্ষার স্বার্থে।
'আমি আরও ভালো জানি' ধরনের মানুষ
আপনি হয়ত কোনো আনন্দদায়ক ঘটনা শেয়ার করছেন, হঠাৎই তিনি নিজের আরও বড় গল্পে ঢুকে পড়লেন। তারা এমনভাবে নিজের অভিজ্ঞতা বা সাফল্য তুলে ধরেন যেন প্রতিযোগিতা চলছে।
মনোবিজ্ঞানী মার্ক ট্র্যাভার্স বলেন, “নিজেকে প্রমাণ করার বা আধিপত্য দেখানোর প্রবণতা অন্যদের মধ্যে অস্বস্তি ও অবিশ্বাস তৈরি করে। এতে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বোঝাপড়ার ভিত্তি নষ্ট হয়।”
এই ধরনের মানুষদের কারণে অন্যরা নিজেদের মূল্যহীন ও অবহেলিত মনে করতে শুরু করে। ধীরে ধীরে সম্পর্কের জায়গায় দূরত্ব তৈরি হয়।
সবকিছুতে নিজেকে ‘ভিকটিম’ ভাবা ব্যক্তি
এরা সব সময় নিজেকে নির্যাতিত মনে করেন—যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজেকে দোষহীন ভাবেন এবং অন্যদের ওপর দোষ চাপান। যদিও প্রকৃত দুর্দশার ক্ষেত্রে সহানুভূতির দরকার, তবে কেউ যদি সবসময় নিজেকে 'অসহায়' প্রমাণ করতে চায়, তাহলে তা সম্পর্কের ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়।
মনোবিজ্ঞানী ড. নিকোলা ডেভিস বলেন, “অনেকেই এই আচরণ ব্যবহার করেন অন্যকে প্রভাবিত করতে, সহানুভূতি কুড়াতে। কিন্তু এরা নিজেদের পরিস্থিতি বদলানোর সুযোগ থাকা সত্ত্বেও পরিবর্তন করতে চান না।”
এদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে গিয়ে অন্যরা একসময় হাঁপিয়ে ওঠে। এ ধরনের মানুষের আসল প্রয়োজন সহানুভূতি নয়, বরং আত্মসমালোচনা ও বাস্তবতা মেনে নেওয়া।
কথায় বাধাদানকারী ব্যক্তি
কেউ কেউ অতি উত্তেজনায় কথার মাঝে বাধা তৈরি করে, সেটাও কিছুটা মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু যদি এটি অভ্যাসে পরিণত হয়, তাহলে অন্যের প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ পায়।
গবেষণায় দেখা গেছে, বারবার কথায় বাধাদানকারী মানুষের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে অন্যরা বিরক্ত, হীনম্মন্যতা এবং অবমূল্যায়িত বোধ করে।
ক্যারিয়ার কোচ মার্টি নেমকো বলেন, “আপনি যদি বারবার কথার মধ্যে বাধা দেন, তা অনেক সময় রূঢ় ও অশ্রদ্ধাশীল বলে মনে হয়।”
এ ধরনের আচরণ বন্ধুত্ব ও পেশাগত সম্পর্ক—উভয় ক্ষেত্রেই ধ্বংসাত্মক হতে পারে। কারণ আন্তরিক সম্পর্ক গঠনের জন্য শোনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সবজান্তা ও বিচারক মনোভাবের মানুষ
যতই জ্ঞান থাকুক না কেন, সব সময় অন্যদের সমালোচনা করা বা অনাকাঙ্ক্ষিত উপদেশ দেওয়া কাউকে পছন্দের ব্যক্তি করে না তো বটেই, বরং অস্বস্তিকর করে তোলে।
স্বাস্থ্যবিষয়ক লেখিকা সঞ্জনা গুপ্তা বলেন, ‘কারও সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে হলে সমালোচনার বদলে সহানুভূতিশীল ও মানবিক হওয়া জরুরি’।
সবসময় ত্রুটি ধরার মানসিকতা মানুষের মধ্যে এক ধরনের চাপ ও জড়তা তৈরি করে। এতে সম্পর্কের স্বাভাবিকতা হারিয়ে যায়, এবং মানুষ খোলামেলা কথা বলতেও ভয় পায়।
আমাদের সবার মাঝেই কখনো না কখনো এ ধরনের আচরণ দেখা যেতে পারে। কিন্তু যদি তা অভ্যাসে পরিণত হয়, তাহলে তা আমাদের সম্পর্ক, সামাজিকতা ও জীবনের মানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
ভাগ্যক্রমে, সচেতনতা ও পরিবর্তনের ইচ্ছা থাকলে এসব আচরণ বদলানো সম্ভব। মানুষ হিসেবে পছন্দের হতে হলে সবসময় হাসিখুশি বা একমত হওয়া দরকার নেই—বরং দরকার শ্রদ্ধাশীল, সহানুভূতিশীল ও গ্রহণযোগ্য হওয়া। আর সেটাই আমাদের আরও ভালো মানুষ হয়ে ওঠার প্রথম ধাপ।
সূত্র: https://www.yourtango.com/self/types-of-people-no-one-likes-be-around-according-psychology
রবিউল হাসান