ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ২ বৈশাখ ১৪৩২

একতরফা সম্পর্কের মানসিক ফাঁদ থেকে বের হওয়ার উপায়

প্রকাশিত: ২১:৫৩, ১৫ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ২১:৫৪, ১৫ এপ্রিল ২০২৫

একতরফা সম্পর্কের মানসিক ফাঁদ থেকে বের হওয়ার উপায়

ছবি: সংগৃহীত

আজকের দিনে মানসিকভাবে অসুস্থ করে তোলা সম্পর্কের একটি পরিচিত নাম "লিমারেন্স"— যেখানে একতরফা ভালোবাসা, অতিরিক্ত অবসেশন ও অন্ধ আবেগের মিশেলে আমরা নিজের আত্মসম্মানকেই বিসর্জন দিয়ে ফেলি। এই ফাঁদে পড়ে অনেকেই এমন সম্পর্ক আঁকড়ে থাকেন, যেখানে ভালোবাসা বা সম্মান— দুটোরই অভাব প্রকট। কিন্তু তবু কেন আমরা এমন সম্পর্ক ছাড়তে পারি না?

বিশেষজ্ঞদের মতে, যখন আমরা কারো প্রতি প্রবল অবসেশনে পড়ে যাই, তখন আমরা তার বাস্তব রূপটি নয়, বরং আমাদের কল্পনার তৈরি আদর্শ মানুষটিকে ভালোবাসতে থাকি। বাস্তবতার সঙ্গে এই কল্পনার বিরাট ফারাক আমরা বুঝেও বুঝি না। অনেক সময় দেখা যায়, সম্পর্কের শুরুতে পাওয়া একটু কেয়ার, একটু কাইন্ডনেস— হোক তা মুহূর্তের— আমাদের ভেতরের পুরনো না-পাওয়ার ক্ষতগুলোতে প্রলেপ ফেলে। আমরা ভাবি, এই মানুষটাই বুঝি আমার জীবনের “তালাশের শেষ”।

এভাবেই শুরু হয় একতরফা ভালোবাসার এক ভয়ংকর চক্র। কেউ একজন হয়তো সামান্য সদয় ব্যবহার করলো, একটু সহানুভূতি দেখালো— আমরা তৎক্ষণাৎ ধরে নিই, সে আমাদের ভালোবাসে। অথচ বাস্তবতা বলে, একজনের সাধারণ সৌজন্যপূর্ণ আচরণ মানেই ভালোবাসা নয়।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই অবসেশন বা অতিরিক্ত মানসিক নির্ভরশীলতার পেছনে থাকতে পারে আমাদের শৈশবের ট্রমা বা অবচেতন কিছু অপূর্ণ চাহিদা। ছোটবেলায় যেসব ভালোবাসা বা স্বীকৃতি আমরা পাইনি, সেগুলো পূরণ করতে গিয়েই আমরা অনেক সময় ভুল মানুষদের ‘সঠিক’ ভাবতে শুরু করি।

এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বড় বিপদ হলো, আমরা বাস্তবতাকে চ্যালেঞ্জ করতে চাই না। প্রেমে ডুবে যাওয়ার পরে, যখন পার্টনার একের পর এক রেড ফ্ল্যাগ দেখাতে থাকে—চিটিং, ডাবল টাইমিং, মানসিক নির্যাতন—even then, we refuse to accept the truth. বরং কল্পনার মানুষটিরই স্মৃতিকে আঁকড়ে থাকি, এবং আশাবাদী হই যে “একদিন সে বদলে যাবে”।

এই অবস্থাকে মনোবিদরা বলেন “Self-abandonment”—নিজের সম্মান, চাহিদা, মানসিক শান্তি সব বিসর্জন দিয়ে অন্য একজনকে খুশি করতে থাকা। আমরা ভাবি, “আমি যদি ওকে খুশি রাখতে পারি, তাহলে একদিন সে আমাকে ভালোবাসবে।” কিন্তু বাস্তবতা হলো, এটা একদিকে আত্মপ্রবঞ্চনা, অন্যদিকে নিজের আত্মবিনাশ।

সমাধান কী?
১. রিয়েলিটি মেনে নিতে শিখুন – সম্পর্কের শুরুতে সব সুন্দর লাগলেও, আপনাকে বোঝাতে হবে এটি শুধুই ডেটিং বা হানিমুন ফেজ। পারস্পরিক সম্মান ও সমঝোতার চেকপয়েন্টে ফেইল করলে সেই সম্পর্ক টিকবে না।

২. নিজের ইমোশনাল নিড বুঝুন – আপনি যদি অতীতের অপূর্ণতা কাউকে দিয়ে পূরণ করতে চান, সেটা কখনোই স্থায়ী হবে না। আপনাকে নিজের ট্রামা, নিজের অপূর্ণতা চিহ্নিত করে হিল করতে হবে।

৩. অন্যকে না, নিজেকে ভালো রাখার দায়িত্ব নিন – আপনার শান্তি বা সুখ অন্যের হাতে তুলে দেবেন না। এটি একটি আত্মঘাতী প্রবণতা।

৪. মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন – যদি আপনি বোঝেন যে আপনি একটি অসুস্থ চক্রে আটকে আছেন, তবে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সহায়তা নেওয়াই শ্রেয়।

একতরফা ভালোবাসা বা অবসেশন—এটা প্রেম নয়, এটা একটি মানসিক ফাঁদ। এই ফাঁদ থেকে মুক্তির প্রথম ধাপ হচ্ছে নিজের মানসিক অবস্থা বুঝে নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া। মনে রাখবেন, ভালোবাসা তখনই সুস্থ হয় যখন তা হয় পারস্পরিক। আপনি নিজেই আপনার শান্তির সবচেয়ে বড় চাবিকাঠি।

ভিডিও দেখুন: https://youtu.be/LiLT_19Kam4?si=hbpx267Ww6VMiEXn

এম.কে.

×