
ছবি: সংগৃহীত
আপনার কুকুরটি কথা বলছে—আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন? অনেক কুকুর মালিকই দাবি করেন, তাদের প্রিয় পোষা প্রাণীর সঙ্গে গভীর একটি সম্পর্ক রয়েছে এবং তারা কুকুরের প্রতিদিনের চাহিদা ও অনুভূতি বোঝেন। কিন্তু সব সময়ই সেই ইশারা বা সংকেতগুলো বুঝে ওঠা সহজ হয় না।
পশু আচরণ ও প্রশিক্ষণ সংস্থা ‘Pet Harmony Animal Behavior and Training’-এর প্রতিষ্ঠাতা অ্যালি বেন্ডার সম্প্রতি Newsweek-কে জানান, কুকুরেরা যেভাবে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তার মধ্যে কিছু সহজবোধ্য লক্ষণ রয়েছে—যেমন শরীরের ভাষা, ডাকে সাড়া দেওয়া, কিংবা মালিক ও কাঙ্ক্ষিত জিনিসের মাঝে গিয়ে দাঁড়ানো।
তবে এই লক্ষণগুলো বুঝতে হলে কুকুরের শরীরী ভাষা সম্পর্কে ভালো ধারণা এবং আচরণ পর্যবেক্ষণের দক্ষতা থাকতে হয়। বেন্ডার বলেন, “উদাহরণস্বরূপ, ঠোঁট চাটা বা হাই দেওয়া—এইগুলো আসলে চাপের ইঙ্গিত, কিন্তু কেউ যদি না জানে যে এগুলো স্ট্রেসের লক্ষণ, তাহলে হয়তো বুঝতেই পারবে না কুকুরটি কিছু বোঝাতে চাইছে।”
যুক্তরাজ্যভিত্তিক কুকুর আচরণ বিশেষজ্ঞ জো উইলিংহ্যামও একমত পোষণ করে বলেন, “কুকুরেরা সব সময় আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে। আমরা সেটা বুঝতে না পারলেই কেবল ওদের বার্তাগুলো অদৃশ্য হয়ে যায়।”
তিনি আরও জানান, “অনেক সময় কুকুরকে আদর করার সময় দেখা যায় সে মাথা নিচু করে, চোখ ঘুরিয়ে তাকায়, হাই দেয় বা ঠোঁট চাটে—এসব আচরণ বোঝায় যে সে আদরটা সহ্য করছে, ভালোবাসছে না। অন্যদিকে যদি কুকুরটি আপনার পায়ের উপর বসে পড়ে এবং পেছন ঘুরিয়ে রাখে, তাহলে সেটা স্পষ্ট বার্তা যে সে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে এবং বুক চুলকাতে চায়—যা বেশিরভাগ কুকুরেরই পছন্দ।”
আমেরিকান কেনেল ক্লাব (AKC) জানায়, কুকুরের শরীরের ভাষা এবং ডাকাডাকি লক্ষ্য করেই তাদের অনুভূতির খবর পাওয়া যায়। যেমন, ধীরে ধীরে লেজ নাড়ানো মানে কুকুরটি শান্ত এবং খুশি; কিন্তু দ্রুত লেজ নাড়ানো মানে সে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। ঘাড়ের পশম খাড়া হয়ে যাওয়া মানে সে চাপের মধ্যে আছে। আবার বুক মাটিতে এবং পেছন দিক উপরের দিকে রাখা মানে সে খেলতে চাইছে।
তবে শুধু মানুষের সঙ্গে নয়, কুকুরদের শরীরী ভাষা অন্য কুকুরদের সঙ্গেও যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। উইলিংহ্যাম বলেন, “ভালোভাবে সমাজে গড়ে ওঠা কুকুরেরা সাধারণত আরেক কুকুরের কাছে সরাসরি না গিয়ে বাঁকা পথে হাঁটে—যেটা বোঝায়, ‘আমি বন্ধু, কোনো হুমকি না।’ এবং তারপর একে অপরের পেছনে ঘ্রাণ নেয়, যেটা কুকুরদের জন্য একধরনের করমর্দন।”
অন্যদিকে বেন্ডার বলেন, কিছু আচরণ আছে যেগুলো বোঝা বেশ কঠিন, কারণ বাইরে থেকে দেখলে মনে হয় তার কোনো সম্পর্কই নেই মানুষের সঙ্গে।
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, অনেক সময় মালিকরা কুকুরের ঘরের জিনিস আঁচড়ানো বা চিবোনোর আচরণকে ‘বিরক্তি’ বা ‘অবসর সময়ের কাজ’ ভেবে এড়িয়ে যান। কিন্তু এগুলো হতে পারে কুকুরের পক্ষ থেকে বলা—‘এই মানুষ, আমার সঙ্গে একটু সময় কাটাও।’
তিনি বলেন, “আমি যখন জানতে চাই—এই আচরণগুলোর পরে আপনি কী করেন, তখনই বোঝা যায় যে কুকুরটি জানে, এগুলো করলে মানুষের মনোযোগ পাওয়া যায়। যেমন, এক মালিকের কুকুর বারবার সোফায় খোঁচাতে থাকত, আর মালিক তখন তাকে থামাতে গিয়ে তার সঙ্গে খেলা শুরু করতেন। এতে কুকুরটি শিখে ফেলে, ‘খেলতে চাইলে সোফা খুঁড়লেই হবে!’”
বেন্ডার বলেন, “আমরা ঠিক করতে পারি না কে আমাদের আচরণকে কীভাবে ব্যাখ্যা করবে। তাই আমাদের উচিত—এই আচরণগুলো পর্যবেক্ষণ করা এবং বুঝে নেওয়া—আমাদের ‘বার্তা’ ঠিক কীভাবে কুকুরটি নিচ্ছে।”
আসিফ