
ছবি: সংগৃহীত
নিজেকে স্মার্ট ও সফল করে তুলতে হলে শুধু জ্ঞান থাকলেই হবে না, জানতে হবে কখন কথা বলতে হবে আর কখন নীরব থাকতে হবে। প্রাচীন যুগ থেকেই বিভিন্ন মনীষীরা এই বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে এসেছেন।
পিথাগোরাস বলেছিলেন, "একজন বোকার পরিচয় তার কথার মাধ্যমে বোঝা যায়, আর একজন জ্ঞানীর পরিচয় তার নীরবতায়।” আচার্য চাণক্যও বলেছেন, “যে ব্যক্তি জানে কখন, কোথায়, কী এবং কতটুকু বলা উচিত, তাকে সফলতা থেকে কেউ ঠেকাতে পারবে না।” কারণ, ধনুক থেকে ছোড়া তীর এবং মুখ থেকে বের হওয়া কথা আর ফেরানো যায় না।
আজকের যুগে আমরা প্রায়শই তর্কে জড়িয়ে পড়ি এবং পরে আফসোস করি—“ওই সময় এটা বললে ভালো হতো” কিংবা “আমি কেন সেটা বলিনি?” তর্ক জিতে নেওয়ার তাড়নায় আমরা এমন কিছু বলে ফেলি, যা আমাদের মূল্য কমিয়ে দেয়। বাস্তবে, যারা নিজেদের বড় ভাবেন, তারা অনেক সময়ও চুপ থাকতে পারেন না। অথচ ইতিহাসে দেখা যায়, অনেক জ্ঞানী, রাজা এবং সফল ব্যক্তি নীরব থাকার মধ্য দিয়েই নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছেন।
চুপ থাকার ৫টি গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা নিচে তুলে ধরা হলো:
১. নীরবতা আপনাকে শক্তিশালী দেখায়
যুদ্ধবিদ সান ত্সু তাঁর নীরবতার মাধ্যমেই শত্রুদের বিভ্রান্ত করেছেন। চুপ থাকলে শত্রু বুঝতে পারে না আপনি কী করতে চলেছেন। আপনি যখন কম কথা বলেন, মানুষ আপনাকে সাধারণ নয়, বিশেষ একজন ভাবতে শুরু করে।
২. কেউ আপনাকে সহজে প্রতারণা করতে পারবে না
চুপ থেকে আপনি অন্যের কথা ও আচরণ মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। এতে বুঝতে পারবেন, কে সত্য বলছে আর কে আপনাকে ব্যবহার করতে চাইছে। পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা বাড়ে, আর সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়।
৩. নীরবতা আকর্ষণ তৈরি করে
যখন আপনি চুপ থাকেন, মানুষ আপনার কথার জন্য অপেক্ষা করে। যেমন— ক্লাসে শিক্ষক হঠাৎ চুপ হয়ে গেলে ছাত্রদের মনোযোগ আবার তাঁর দিকে ফিরে যায়। তেমনই, আপনি যখন অপ্রয়োজনীয়ভাবে কথা না বলে চুপ থাকেন, তখনই মানুষ আপনার গুরুত্ব বোঝে।
৪. চুপ থাকা আপনাকে আরও সৃজনশীল করে তোলে
নিজের সঙ্গে একান্তে সময় কাটালে, আপনার কল্পনাশক্তি ও চিন্তাশক্তি বাড়ে। চুপ থেকে নিজের মনকে ইতিবাচকভাবে ব্যবহার করলে নতুন নতুন আইডিয়া আসবে, যা আপনাকে আরও প্রোডাক্টিভ করে তুলবে।
৫. আপনার পরিকল্পনা গোপন রাখুন
নিজের লক্ষ্য ও পরিকল্পনা আগে ভাগে প্রকাশ করলে অনেক সময় আশেপাশের মানুষ তা নেতিবাচকভাবে নেয় বা উপহাস করে। অনেক বড় উদ্যোক্তারা, যেমন জেফ বেজোস, নিজের ক্লাউড ব্যবসার পরিকল্পনা প্রথমদিকে গোপন রেখেছিলেন এবং সফলতার পরেই তা সামনে এনেছিলেন। কারণ, সঠিক সময় না আসা পর্যন্ত নিজের প্ল্যান গোপন রাখা বুদ্ধিমানের কাজ।
সবশেষে বলা যায়, চুপ থাকা শুধু আত্মসংযম নয়, এটি এক ধরনের শক্তি। যে ব্যক্তি এই শক্তির ব্যবহার জানে, সে জীবনের অনেক দিকেই এগিয়ে থাকতে পারে। সঠিক সময়ে সঠিক কথা বলার পাশাপাশি প্রয়োজনে চুপ থাকার জ্ঞানই একজন স্মার্ট ব্যক্তির আসল পরিচয়।
এম.কে.