ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২

জীবন থেকে অলসতাকে ঝেড়ে ফেলার দেশীয় উপায়

প্রকাশিত: ১৯:১৪, ১৫ এপ্রিল ২০২৫

জীবন থেকে অলসতাকে ঝেড়ে ফেলার দেশীয় উপায়

ছবিঃ সংগৃহীত

অলসতা সব সময় শুধু শরীরের নিষ্ক্রিয়তা বোঝায় না; এটি অনেক সময় ক্লান্ত শরীর, অস্থির মন বা কম অনুপ্রেরণার লক্ষণও হতে পারে। তবে প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতি—বিশেষ করে আয়ুর্বেদ, যোগ এবং বৈদিক শাস্ত্রে—এমন কিছু সহজ অথচ কার্যকর পদ্ধতির উল্লেখ পাওয়া যায়, যেগুলি আজও আধুনিক জীবনে প্রাসঙ্গিক। নিয়মিত চর্চার মাধ্যমে এই পদ্ধতিগুলি দেহ ও মনকে প্রাকৃতিক ছন্দে ফিরিয়ে এনে অলসতা কাটাতে এবং উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে।

এখানে তুলে ধরা হলো এমনই ৫টি প্রাচীন ভারতীয় পদ্ধতি—

১. উষাপান (রাতভর তামার পাত্রে রাখা পানি পান)
আয়ুর্বেদের একটি বিখ্যাত নিয়ম হলো, সকালবেলা খালি পেটে তামার পাত্রে সারা রাত রাখা পানি পান করা। একে বলে উষাপান। এটি দেহের ত্রিদোষ (ভাত, পিত্ত, কফ) ভারসাম্য রাখতে সাহায্য করে, শরীর থেকে টক্সিন বের করে এবং হজম শক্তি ও মেটাবলিজম বাড়ায়।
তামার জলে থাকা প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও জীবাণুনাশক গুণাগুণ সেলুলার রিপেয়ারে সাহায্য করে, যা সারা দিনের জন্য শরীর ও মনের উৎফুল্লতা বাড়ায়।

২. ব্রহ্ম মুহূর্তে জাগরণ
সূর্যোদয়ের প্রায় দেড় ঘণ্টা আগে যে সময়টি পড়ে, তাকে বলা হয় ব্রহ্ম মুহূর্ত। এই সময়টি ধ্যান, চিন্তন, পড়াশোনা বা দিনের পরিকল্পনা করার জন্য আদর্শ বলে মনে করেন প্রাচীন ঋষিরা। এ সময়ে উঠে পড়লে মন শান্ত থাকে, মস্তিষ্ক স্বচ্ছ হয় এবং সৃজনশীলতাও বৃদ্ধি পায়। এতে দেহের সার্কাডিয়ান রিদম ঠিক থাকে এবং দিন শুরু হয় সতেজভাবে।

৩. ত্রাটক (যোগের দৃষ্টি ধ্যান)
ত্রাটক এক ধরনের ধ্যান পদ্ধতি, যেখানে চোখ না ঝাপসিয়ে একটানা কোনো একটি বস্তু—সাধারণত দীপশিখা—তাকিয়ে থাকতে হয়। এটি মনোযোগ বৃদ্ধি করে, চিন্তার অস্থিরতা কমায় এবং মনকে প্রশান্ত করে।
মাত্র ১০ মিনিটের ত্রাটক চর্চা মানসিক ক্লান্তি দূর করে এবং কাজের প্রতি মনোসংযোগ বাড়ায়। এছাড়াও এটি অজ্ঞান চক্র (তৃতীয় নেত্র) জাগ্রত করতেও সাহায্য করে।

৪. বৈদিক মন্ত্র জপ বা শ্রবণ
গায়ত্রী মন্ত্রের মতো বৈদিক মন্ত্র প্রতিদিন উচ্চারণ বা শ্রবণ করলে মন ও স্নায়ুতন্ত্র শান্ত হয়। মন্ত্রের শব্দতরঙ্গ মস্তিষ্কের তরঙ্গের ভারসাম্য বজায় রেখে মানসিক চঞ্চলতা কমায় এবং অভ্যন্তরীণ একাগ্রতা তৈরি করে।
সকালে মৃদু সুরে মন্ত্র শোনার অভ্যাস দিনভর ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখতে সাহায্য করে।

৫. ঘাসে খালি পায়ে হাঁটা (পৃথ্বী স্নান)
সকালের ভেজা ঘাসের ওপর খালি পায়ে হাঁটা, যাকে আয়ুর্বেদে পৃথ্বী স্নান বলা হয়, শরীরে পৃথিবীর প্রাকৃতিক শক্তি সঞ্চার করে। এই অভ্যাস মানসিক চাপ কমায়, মেজাজ ভালো করে এবং ঘুমচক্র নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে—যা দৈনন্দিন জীবনের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়ক।
এছাড়াও, এটি পায়ের পেশি ও স্নায়ু মজবুত করে এবং দেহে ভারসাম্য বজায় রাখে।

এছারাও প্রতিদিন সকালে উষ্ণ ভেষজ তেল দিয়ে সারা শরীরে মালিশ করলে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে, ক্লান্তি দূর হয় এবং কর্মশক্তি জাগে। মাথা, পা ও পিঠে মালিশ করলে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়। স্নানের আগে অভ্যঙ্গ করলে তা স্নায়ু শান্ত করে, টক্সিন বের করে এবং শরীরকে চনমনে করে তোলে। আধুনিক গবেষণাও দেখিয়েছে, নিয়মিত তেল মালিশ মানসিক অবসাদ কমিয়ে মন ভালো রাখে।


প্রতিদিনের জীবনে এই সহজ অথচ কার্যকর প্রাচীন পদ্ধতিগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করলে অলসতা দূর হয়ে যায় এবং শরীর-মন উভয়ই সক্রিয় থাকে। আধুনিক বিজ্ঞানও আজ এই প্রাচীন জ্ঞানকে সমর্থন করছে। তাই প্রযুক্তির যুগেও প্রাচীন পথেই মিলতে পারে সত্যিকারের কর্মশক্তির চাবিকাঠি।

 

সূত্রঃ https://timesofindia.indiatimes.com/life-style/health-fitness/de-stress/5-simple-ancient-indian-techniques-that-help-remove-laziness-and-increase-daily-productivity/photostory/120275515.cms

রিফাত

×