
ছবি সংগৃহীত
আমরা সবাই জীবনে এমন মানুষদের চিনি যারা সব সময় আলোর ঝলক ছড়িয়ে যান। জীবন যতই কঠিন হোক না কেন, তাদের মুখে একটি প্রশান্তির ছাপ দেখা যায়, যা আমাদের মনে প্রশ্ন জাগায়—"ওদের জীবনের গোপন রহস্যটা কী?"
বিশ্বব্যাপী নানা গবেষণা ও কাউন্সেলিং অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন মানুষেরা সাধারণত ৫টি বিষয়কে জীবনের প্রতিশ্রুতি হিসেবে ধরে রাখেন, যেগুলো তাদের সুখী, শান্ত ও স্থির থাকতে সাহায্য করে। চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই পাঁচটি বিষয়, যেগুলোর প্রতি বিশ্বের সবচেয়ে সুখী মানুষরা খুবই আন্তরিক:
১. জীবনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা
"আমি যা করছি, কেন করছি?" এই প্রশ্নটা যারা নিজেদের জিজ্ঞেস করে, এবং তার একটি সন্তোষজনক উত্তর জানে, তারাই সাধারণত নিজেদের জীবনে বেশি সন্তুষ্ট থাকে। কেউ হয়তো সমাজসেবামূলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন, আবার কেউ একজন আদর্শ বাবা-মা হওয়ার স্বপ্নকে উদ্দেশ্য হিসেবে বেছে নেন।
ইতিবাচক মনোবিজ্ঞানের জনক মার্টিন সেলিগম্যান বলেন, জীবনে একটি পরিস্কার উদ্দেশ্য থাকা মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুখের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত। উদ্দেশ্যবোধ একজন মানুষকে প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠার একটা কারণ দেয় এবং নিজের শক্তিকে সঠিক দিকে চালিত করতে সাহায্য করে।
২. সুস্থ সম্পর্ক ও একতাবদ্ধ সমাজ
যখন জীবনের পথে ঝড় আসে, তখন একজন প্রকৃত বন্ধু বা আপনজন পাশে থাকলে সবকিছুই অনেক সহজ মনে হয়। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘমেয়াদি এক গবেষণায় দেখা গেছে, অর্থবহ সামাজিক সম্পর্ক শুধু মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায় না, বরং দীর্ঘজীবী হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়ায়।
যাদের জীবনে অন্তত একজন বিশ্বাসযোগ্য মানুষ থাকে, তারা চাপ ও দুঃসময়ের মধ্যে থেকেও অনেক বেশি স্থির থাকতে পারেন। তাই সংখ্যার চেয়ে সম্পর্কের মানে গুরুত্ব দিন। প্রকৃত সম্পর্ক আমাদের জীবনে আনে বিশ্বাস, নির্ভরতা।
৩. কৃতজ্ঞতার চর্চা
প্রতিদিনের ছোট ছোট বিষয়ের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার অভ্যাস জীবনের দৃষ্টিভঙ্গিকে বদলে দিতে পারে। গরম এক কাপ চা, একজন বন্ধুর আন্তরিক বার্তা, কিংবা রোদের আলো—এই ছোট ছোট মুহূর্তগুলো আসলে জীবনের বড় সুখ এনে দেয়।
হার্ভার্ড হেলথ-এর এক গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রতিদিন কৃতজ্ঞতার চর্চা বিষণ্ণতা কমাতে এবং সুখবোধ বাড়াতে সাহায্য করে। আপনি চাইলে প্রতিদিন রাতে তিনটি বিষয় লিখে রাখতে পারেন, যেগুলোর জন্য আপনি কৃতজ্ঞ। এই ছোট্ট অভ্যাসটি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জীবনের বড় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে।
৪. নিরবচ্ছিন্ন শিক্ষা ও আত্মোন্নয়ন
নতুন কিছু শেখা, ভিন্ন সংস্কৃতি অন্বেষণ, কিংবা সৃজনশীল কোনো শখে নিজেকে যুক্ত করা মানুষের সুখানুভূতি বাড়াতে সাহায্য করে।
স্নায়ুবিজ্ঞানের মতে, আমাদের মস্তিষ্ক নতুন অভিজ্ঞতা ভালোবাসে। চ্যালেঞ্জিং ও নতুন কিছু শেখার মাধ্যমে আমরা আত্মতৃপ্তি পাই এবং জীবনের প্রতি উৎসাহ বজায় থাকে। সুতরাং শেখার প্রক্রিয়াকে জীবনে প্রতিদিনের অংশ বানিয়ে ফেলাই শ্রেয়।
৫. আত্ম-পরিচর্যা
কাজ, পরিবার, সমাজ সবকিছুর মাঝে নিজেদের জন্য সময় বের করাটা অনেকেই বিলাসিতা মনে করেন। কিন্তু আত্ম-পরিচর্যা মোটেও অহেতুক কিছু নয়। বরং এটা মানসিক সুস্থতার জন্য অত্যন্ত অত্যন্ত জরুরী। এই ছোট্ট অভ্যাসটি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জীবনের বড় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে।
যদি আপনি ইতিমধ্যেই এই বিষয় গুলতে “হ্যাঁ” বলেন তাহলে নিজেকে অভিনন্দন দিন।আর যদি মনে হয় এখনো আপনি সেদিকে পৌছাতে পারেননি তাহলে ছোট ছোট পরিবর্তনের মাধ্যমে নিজের সুখের দিকে এগিয়ে যাওয়া শুরু করুন।
এই পাঁচটি উপাদান—উদ্দেশ্য, সম্পর্ক, কৃতজ্ঞতা, ব্যক্তিগত উন্নয়ন, আর আত্ম-পরিচর্যা—সবকটিই আমাদের সম্পূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে।
আপনি জীবনের যেই অবস্থাতেই থাকেননা কেন, আশা করি এই কথাগুলো আপনাকে নতুন কিছু ভাবার সুযোগ দেবে। একটিমাত্র দিক দিয়েও শুরু করতে পারেন, তারপর ধীরে ধীরে অন্যগুলোকেও নিজের মতো করে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।
জীবন এক চলমান প্রক্রিয়া আর সবচেয়ে অর্থবহ যাত্রাগুলোই শুরু হয় একটি সাধারণ “হ্যাঁ” থেকে।
আব্দুল্লাহ