
ছবিঃ সংগৃহীত
জীবনে অগ্রগতির চাবিকাঠি শুধুমাত্র সৌভাগ্য বা প্রতিভা নয়—এটি গড়ে ওঠে সুনির্দিষ্ট কিছু অভ্যাসের ওপর ভর করে।
একজন মানসিক প্রশান্তি বা মাইন্ডফুলনেস বিশেষজ্ঞ হিসেবে আমি লক্ষ্য করেছি, জীবনে যারা নিয়মিতভাবে এগিয়ে যান, তাদের জীবনে কিছু সাধারণ আচরণ ও অভ্যাস থাকে।
তাদের সাফল্য কাকতালীয় নয়—তারা কিছু শক্তিশালী অভ্যাসের চর্চা করেন, যা তাদের ভবিষ্যৎকে গঠন করে।
চলুন, জেনে নিই সেই ৮টি অভ্যাস যা আপনাকেও এগিয়ে যেতে সাহায্য করতে পারে—
১. পরিবর্তনকে গ্রহণ করা
জীবনে অগ্রসর হতে গেলে পরিবর্তনের পথ ধরতেই হয়—যা সবসময় সহজ হয় না। যারা নিয়মিত এগিয়ে যান, তারা পরিবর্তনকে ভয় পান না। তাঁরা জানেন, জীবন কখনোই স্থির নয়, আর তাঁরাও নয়।
পরিচিত পরিবেশে আটকে না থেকে তাঁরা নতুনকে আলিঙ্গন করেন। পরিবর্তনকে তাঁরা বিপদ নয়, বরং শেখার সুযোগ হিসেবে দেখেন।
মাইন্ডফুলনেস বা সচেতন উপস্থিতি তাঁদের সহায়তা করে—ভয় বা উদ্বেগকে স্বীকার করেও তাঁরা এগিয়ে যেতে পারেন।
২. কৃতজ্ঞতার চর্চা
কৃতজ্ঞতা এমন একটি অভ্যাস যা জীবনের দৃষ্টিভঙ্গিই পাল্টে দিতে পারে। আমি নিজেও যখন জীবনের একঘেয়েমিতে আটকে ছিলাম, তখন প্রতিদিন রাতে তিনটি বিষয় লিখতাম, যেগুলোর জন্য আমি কৃতজ্ঞ।
কখনো তা হতো এক কাপ গরম কফি, কখনো বন্ধুর শুভেচ্ছাবার্তা, আবার কখনো ব্যস্ততার মাঝে পাওয়া প্রশান্তির মুহূর্ত।
এই ছোট্ট অভ্যাসটিই আমার জীবনে আলো ফেরায়। জীবনে এগিয়ে চলা মানুষরা কৃতজ্ঞ থাকেন—যা আছে, তা উপভোগ করেন। ফলে তাঁরা ইতিবাচক থাকেন এবং বাধা এলেও দমে যান না।
৩. বর্তমান মুহূর্তে বাঁচা
যাঁরা জীবনে সত্যিই এগিয়ে যান, তারা অতীতের ভুলে আটকে থাকেন না বা ভবিষ্যতের ভয় পান না। তাঁরা মনোযোগ দেন এই মুহূর্তে।
মাইন্ডফুলনেসের চর্চা—হোক তা ধ্যানের মাধ্যমে বা সকালের চা উপভোগ করার মাধ্যমে—তাঁদের বর্তমানকে পূর্ণতা দেয়।
ফলে তাঁরা আরও সজাগ, সচেতন এবং জীবনের ছোট ছোট আনন্দেও শান্তি খুঁজে পান।
৪. অহং কমিয়ে চলা
সাফল্যের পথে হাঁটতে গিয়ে অনেকেই অহংয়ে আটকে পড়েন। কিন্তু যারা সত্যিকারের অগ্রগতি অর্জন করেন, তাঁরা নিজের অহংকে নিয়ন্ত্রণে রাখেন। বৌদ্ধ দর্শনে অনত্তা বা ‘নির্বর্তিত আত্মা’র কথা বলা হয়—অর্থাৎ, ‘আমি’ ভাবটাই কৃত্রিম এবং দুঃখের উৎস।
এই ভাবনাকে গ্রহণ করে তাঁরা হয়ে ওঠেন আরও নম্র, গ্রহণযোগ্য, এবং শিখতে আগ্রহী। তাঁরা বাহ্যিক চেহারার চেয়ে অন্তর্নিহিত বিকাশকে গুরুত্ব দেন।
৫. আত্ম-যত্নে বিনিয়োগ
আত্ম-যত্ন মানেই শুধু আরামদায়ক স্পা নয়—এটি মানসিক, শারীরিক এবং আবেগগত সুস্থতার যত্ন। নিজের খালি পাত্র দিয়ে অন্যকে পানি দেওয়া যায় না। যারা জীবনে এগিয়ে যান, তারা জানেন: আত্ম-যত্ন বিলাসিতা নয়, প্রয়োজন।
৬. ব্যর্থতাকে স্বাগত জানান
শুনতে অদ্ভুত লাগলেও, যারা জীবনে সবসময় এগিয়ে যান, তাঁরা ব্যর্থতাকে ভয় পান না—বরং স্বাগত জানান।
তাদের দৃষ্টিতে ব্যর্থতা মানে থেমে যাওয়া নয়, বরং নতুন শেখার সুযোগ। তারা প্রতিটি ভুল থেকে শিক্ষা নেন, নিজেকে পর্যালোচনা করেন এবং আরও দৃঢ় হয়ে উঠে দাঁড়ান।
৭. স্পষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ
অগ্রগতির জন্য দিকনির্দেশনা দরকার। জীবনে যারা সফল, তারা জানেন কোথায় যেতে চান এবং কীভাবে সেখানে পৌঁছাতে হবে।
তারা শুধু স্বপ্ন দেখেন না—তারা সেই স্বপ্নকে ছোট ছোট লক্ষ্য এবং কর্মপরিকল্পনায় ভেঙে ফেলেন। তাদের লক্ষ্য বাস্তবায়নে তারা প্রতিদিন একটু একটু করে কাজ করেন।
৮. সহনশীলতা ও স্থিতিশীলতা গড়ে তোলা
জীবন সবসময় মসৃণ নয়। আনন্দের পাশাপাশি থাকে কষ্ট, সাফল্যের পাশাপাশি থাকে ব্যর্থতা।
যারা এগিয়ে যান, তারা জীবনের প্রতিকূলতা মোকাবিলা করার মানসিক শক্তি তৈরি করেন। তাঁরা জানেন, ঝড় আসবেই—কিন্তু সেটার মধ্য দিয়েই আরও শক্ত হয়ে উঠে দাঁড়াতে হয়।
সহনশীলতা কোনো একদিনে আসে না—চর্চা ও সচেতনতা থেকেই জন্ম নেয় এই ক্ষমতা।
মুমু