ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ২ বৈশাখ ১৪৩২

সাশ্রয়ী জীবনযাপনের জন্য যে পুরনো অভ্যাসগুলো ফিরিয়ে আনা উচিত

প্রকাশিত: ২০:৪৪, ১৪ এপ্রিল ২০২৫

সাশ্রয়ী জীবনযাপনের জন্য যে পুরনো অভ্যাসগুলো ফিরিয়ে আনা উচিত

ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান যুগে যখন প্রযুক্তি ও আধুনিক জীবনযাত্রার কারণে আমরা অনেক কিছুই সহজে পেয়ে যাচ্ছি, তখন আমাদের দাদী-নানীরা কীভাবে এত কম সামগ্রী নিয়ে দিব্যি জীবনযাপন করতেন, সেই বিষয়টি অনেকেই হয়তো ভেবেও দেখেন না। তারা কখনো কোনো প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করতেন না কিংবা অতিরিক্ত কেনাকাটা কিংবা আবেগতাড়িত খরচে ঝুঁকতেন না। তবে আজকের দিনে তাদের অভ্যাসগুলোতে কিছু এমন গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা রয়েছে, যা আমাদের জীবনকে আরও সাশ্রয়ী এবং টেকসই করে তুলতে পারে।

সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব জীবনযাপনের জন্য কিছু পুরনো অভ্যাস ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব তুলে ধরেছে বিশেষজ্ঞরা। এগুলো শুধু আমাদের খরচ কমাবে না, বরং মানসিক শান্তিও আনবে।

১. ফেলে না দিয়ে মেরামত করা
একসময় কিছু জিনিস ফেলা হতো না যদি তা মেরামত করে ব্যবহার করা সম্ভব হতো। পুরনো সেলাই, আসবাবপত্র মেরামত, বা ছোটখাটো বৈদ্যুতিক সমস্যা সামলানো ছিল সাধারণ কাজ। আজকাল ইউটিউব ভিডিও এবং কমিউনিটি মেরামত ক্যাফেগুলো এসব জ্ঞান আবার ফিরিয়ে আনছে।

২. নিজের খাবার নিজে চাষ করা
এক সময় পেছনের উঠানে খাবার চাষ করা ছিল সাধারণ ব্যাপার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আমেরিকার প্রায় ৪০% ফল ও সবজি নিজেদের গার্ডেন থেকেই উৎপাদিত হতো। আজকালও ছাদে বা বারান্দায় ছোট টবগুলিতে খাদ্য চাষ করে খরচ বাঁচানো সম্ভব।

৩. রান্না করা – বাজারের খাবারের চেয়ে ভালো ও সস্তা
ঘরে রান্না করা খরচ কমায় এবং স্বাস্থ্যও ভালো রাখে। বাজারের খাবারের তুলনায় ঘরোয়া খাবারে থাকে কম লবণ, চিনি এবং সংরক্ষক, ফলে এটি আমাদের শরীরের জন্য উপকারী।

৪. বহুমুখী জিনিসপত্র ব্যবহার করা
একটি কাস্ট আয়রন প্যান যেমন চুলায়, তেমনি ওভেনেও ব্যবহার করা যায়। একইভাবে, সাদা ভিনেগার দিয়ে প্রায় সব ধরনের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা করা সম্ভব। এভাবে একাধিক কাজে ব্যবহারযোগ্য জিনিস কিনলে খরচ কমে এবং ঘরের জঞ্জালও কমে।

৫. ভেবে চিন্তে কেনাকাটা করা
পুরনো দিনের মতো কেনাকাটার ক্ষেত্রে সঞ্চয়ের দিকে মনোযোগ দেওয়া দরকার। "Use it up, wear it out, make do, or do without"—এই প্রবচন অনুযায়ী কেনাকাটা করলে অতিরিক্ত খরচ এড়ানো যায়। প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার আগে ৩০ দিন অপেক্ষা করা একটি ভালো অভ্যাস।

৬. সমাজিক সম্পদ ভাগ করে নেওয়া
আগে পাড়া-প্রতিবেশীরা একে অপরের থেকে সরঞ্জাম ধার নিতেন এবং সহযোগিতার মাধ্যমে কাজ সম্পন্ন করতেন। এই ধরনের সহযোগিতা আজকের দিনে টুল লাইব্রেরি, স্কিল এক্সচেঞ্জ, কমিউনিটি গার্ডেনের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

৭. নিজে আনন্দ তৈরি করা, শুধু ভোগ না করা
একসময় মানুষ নিজেদের মধ্যে বিনোদন তৈরি করত—গান গাওয়া, গল্প বলা, খেলা করা ছিল সাধারণ কিছু ব্যাপার। আজও পরিবার বা বন্ধুদের সাথে এমন সময় কাটানো শরীর এবং মন দুটোই ভালো রাখে।

৮. ঋতু অনুসারে জীবনযাপন ও পরিকল্পনা করা
পুরনো সময়ের মানুষরা প্রকৃতির ঋতু অনুযায়ী খাবার সংরক্ষণ করতেন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী খরচ করতেন। এই ধারণা আমাদের জন্যও উপকারী হতে পারে—ঋতু অনুসারে কেনাকাটা করলে খরচ কমে এবং জীবনযাত্রা সহজ হয়।

৯. কৃতজ্ঞতা ও তৃপ্তির চর্চা
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস হলো কৃতজ্ঞতা। পুরনো প্রজন্মেরা যে সামান্যতেও সন্তুষ্ট থাকতেন, তা আমাদের জন্য একটি মূল্যবান শিক্ষা হতে পারে। কৃতজ্ঞতা এবং তৃপ্তির অনুভূতি মানসিক শান্তি এনে দেয়।

এই অভ্যাসগুলো শুধু সাশ্রয়ী নয়, বরং আমাদের জীবনে গভীর এবং অর্থপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আসে। আজকের যুগে যদি আমরা এসব পুরনো অভ্যাস ফিরিয়ে আনতে পারি, তবে আমরা শুধু টাকা বাঁচাব না, বরং পরিবেশবান্ধব, সার্থক এবং সম্পৃক্ত জীবনযাপন করতে পারব।

এম.কে.

×