ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ২ বৈশাখ ১৪৩২

মধ্যবিত্তরা যে ব্যাপারগুলো সব সময় গুরুত্ব দেন

প্রকাশিত: ২০:০৪, ১৪ এপ্রিল ২০২৫

মধ্যবিত্তরা যে ব্যাপারগুলো সব সময় গুরুত্ব দেন

ছবি: সংগৃহীত

ধনী হওয়া এবং ধনী দেখানোর মধ্যে সূক্ষ্ম পার্থক্য আছে, যা ছোট ছোট বিষয়েই প্রকাশ পায়। ধনী ব্যক্তিরা তাদের বিত্তের মাধ্যমে বিলাসিতা প্রদর্শন করতে পারেন, তবে মধ্যবিত্ত শ্রেণী তাদের অবস্থান এবং গুণের মাধ্যমে নিজেদের ফুটিয়ে তোলে। মধ্যবিত্তের রয়েছে একটি নিজস্ব ভাষা- 'স্ট্যাটাস সিম্বল', যা তাদের জীবনযাপন, পছন্দ এবং গুণের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়। ফলে, তারা মুখে না বললেও তাদের অবস্থান, পছন্দ এবং জীবনধারা সহজেই বোঝা সম্ভব।

চলুন জেনে নেই মধ্যবিত্তদের ৭টি 'স্ট্যাটাস সিম্বল':

১) ব্র্যান্ড লোগো
মধ্যবিত্তরা তাদের স্ট্যাটাস প্রকাশে বড়, ঝলমলে ব্র্যান্ড লোগো ব্যবহার করে না। বরং তারা ছোট এবং সূক্ষ্ম লোগোকে প্রাধান্য দেয়, যা শুধুমাত্র সচেতন ব্যক্তিরা বুঝতে পারে। যেমন রালফ লরেনের শার্টে ছোট পোলো হর্স লোগো বা লুই ভিটনের বেল্টে ছোট ‘LV’ সাইন। এসব ব্র্যান্ড নিজেদের উপস্থিতি জমকালোভাবে নয়া করে বরং সাদামাটাভাবে প্রকাশ করে। মধ্যবিত্তদের জন্য এসব ছোট চিহ্নই মাঝে মাঝে সবচেয়ে বড় অর্থ বহন করে, যা তাদের স্ট্যাটাস এবং রুচির পরিচয় দেয়।

২) সংখ্যা নাকি গুণগত মান
মধ্যবিত্তদের মধ্যে কোন জিনিসের গুণগত মানের প্রতি এক বিশেষ নজর থাকে। কম দামি একাধিক জিনিসের চাইতে মোটামুটি মানের একটি পণ্য হলে চলে তাদের। যেমন, কোন ব্যক্তি যখন প্রথম ভালো মানের চামড়ার ওয়ালেট কেনে সেটি শুধুমাত্র তার কাছে কঠোর পরিশ্রম, আবেগ এবং রুচির বহিঃপ্রকাশ বলা চলে। এটি শুধু ওয়ালেটের ব্যাপার নয়, বরং ভালো মানের আসবাবপত্র, গাড়ি কিংবা দীর্ঘস্থায়ী কোনো জিনিস কেনার ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার খাটে। মধ্যবিত্তরা তাই এক্ষেত্রে সংখ্যার চেয়ে গুণগত মানের দিকে বেশি নজর দেন।

৩) শিক্ষা এবং জ্ঞান
মধ্যবিত্তদের জন্য শিক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ স্ট্যাটাস সিম্বল হিসেবে কাজ করে। এটি শুধু ডিগ্রি বা যোগ্যতা দেখানোর বিষয় নয়, বরং জ্ঞানের প্রতি তাদের আগ্রহ এবং সারাজীবন শেখার প্রতি প্রতিশ্রুতিকে নির্দেশ করে। গবেষণা বলছে, মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো তাদের সন্তানদের বেশি সময় পড়াশোনায় ব্যয় করায় এবং শিক্ষামূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করায়। তাই ব্যাক্তিজীবনে মধ্যবিত্তের সন্তানরা অন্যদের চাইতে বেশি সফলার মুখ দেখেন। 

৪) নিজের বাড়ির মালিকানা
নিজস্ব বাড়ি থাকা মধ্যবিত্তের একটি প্রথাগত স্ট্যাটাস সিম্বল। এটি শুধু মাথার উপর একটি ছাদ থাকা নয় বরং সেই বাড়িতে ব্যক্তিগত রুচি এবং মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটানোর একটি সুযোগ। একটি আরামদায়ক বাড়ি বা স্টাইলিশ শহুরে অ্যাপার্টমেন্ট যে কোনোটাই হোক না কেন, সমাজে নিজের বাড়ির মালিক হওয়া মধ্যবিত্তদের জন্য একটি বড় সাফল্য হিসেবে ধরা হয়। এটি শুধু তাদের আর্থিক বিনিয়োগ নয়; মানসিক বিনিয়োগও বটে। বাড়ি মালিকানা শুধুমাত্র স্ট্যাটাস সিম্বল নয়, এটি সমাজে তার পরিচয় এবং মূল্যবোধের একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। 

৫) ভ্রমণের অভিজ্ঞতা
মধ্যবিত্তদের জন্য বিলাসবহুল ভ্রমণ মানে পাঁচতারা হোটেল, বিলাসবহুল নামীদামি রেস্টুরেন্টে খাওয়া-দাওয়া করা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ন না। ভ্রমণ তাদের কাছে অভিজ্ঞতা অর্জন করার বিষয়। তারা এটিকে নতুন সংস্কৃতি জানার, নানা ধরনের খাবার টেস্ট করার এবং নিজের স্বাচ্ছন্দ্যের সীমানা ছাড়ানোর এক অনন্য সুযোগ হিসেবে দেখে। এই ধরনের অভিজ্ঞতাগুলো ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গিকে সম্প্রসারিত করে। 

৬) স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন
মধ্যবিত্তরা স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনকে বেশ গুরুত্ব দিয়ে দেখে। অর্গানিক খাবার খাওয়ার থেকে শুরু করে নিয়মিত ব্যায়াম করা—এই অভ্যাসগুলো তারা নিয়মিত করার চেষ্টা করেন। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন মূলত আত্মবিশ্বাস, আত্মসন্তুষ্টি এবং নিজের প্রতি দায়িত্বশীলতার একটি প্রতীক। তাই মধ্যবিত্ত ব্যক্তি শ্রেণী তাদের শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেন। 

৭) সময়
মধ্যবিত্তদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্ট্যাটাস সিম্বল হলো—সময়। সময়ের সঠিক ব্যবহার, বিশেষ করে পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে কাটানো সময়, নিজের পছন্দের কাজের পেছনে সময় ব্যয় করা এবং ব্যক্তিগত উন্নতির জন্য সময় দেওয়া—এই সব কিছুই মধ্যবিত্তদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আজকের ব্যস্ত পৃথিবীতে যেখানে সবাই ব্যস্ত সেখানে নিজের সময় নিয়ন্ত্রণ করাটা বিলাসিতা ছাড়া কিছু না। এখানে কাজের সাথে নিজের সময়ের ব্যালেন্স করার একটা ব্যাপার আছে-যেটি মধ্যবিত্তরা খুব ভাল করেই পারেন। কখন পরিবারকে, আর কখন বন্ধুদের সময় দিতে হবে, এসব ভাল মেইনটেইন করতে পটু তারা। তাই সময়ের সঠিক ব্যবস্থাপনা এবং স্বাধীনভাবে তা উপভোগ করার ক্ষমতা, তাদের জন্য সবচেয়ে বড় স্ট্যাটাস সিম্বল। 

আরাফাত

×