ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ২ বৈশাখ ১৪৩২

জেনে নিন ৭টি সূক্ষ্ম কারণ

কীভাবে বুঝবেন কেউ আপনাকে জীবন থেকে বাদ দিচ্ছে?

প্রকাশিত: ১৯:৫৯, ১৪ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ২০:০০, ১৪ এপ্রিল ২০২৫

কীভাবে বুঝবেন কেউ আপনাকে জীবন থেকে বাদ দিচ্ছে?

ছবি: প্রতীকী

 

আমার মা সবসময় বলতো, “মানুষ তোমার জীবনে আসবে একটি উদ্দেশ্য, একটি সময় বা সারাজীবনের জন্য”।  

 

এই প্রবাদবাক্যটি আমি সবসময় মেনে চলেছি কারণ এর মাধ্যমে সম্পর্কের ক্ষণস্থায়ীত্ব জানা যায়। অনেক সময় মানুষ চুপচাপ চলে যায়। আবার অনেক সময় এই চলে যাওয়া চোখে পড়ার মতো।  

 

এমন না যে মানুষের বিদায় সবসময় নাটকীয়ভাবে হবে। আপনি হয়ত বুঝে উঠতে পারবেন না যে আপনার কাছ থেকে কিছু মানুষ দূরে সরে যাচ্ছে। এটা হতে পারে যোগাযোগ কমিয়ে আনার মাধ্যমে বা কথাবার্তার ধরনে পরিবর্তনের মাধ্যমে। 

 

আপনি কি কখনো নিজেকে এমন জায়গায় পেয়েছেন যেখানে নিজেকে জিজ্ঞাসা করতে হয়েছে “এই মানুষটা তার জীবন থেকে আমাকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে”?  তাহলে এই নিবন্ধটি আপনার জন্য।

 

এই নিবন্ধে আমরা সাতটি সূক্ষ্ম দিক নিয়ে আলোচনা করবো যার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারবো কেউ আমাদেরকে তার জীবন থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে কি না। এই দিকগুলো জানার মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন পরবর্তীতে ওই ব্যক্তির সাথে আপনি কীভাবে সম্পর্ক আগাবেন। 

 

মনে রাখবেন এটা সবসময় দোষ দেওয়ার ব্যাপার না। কখনো কখনো এটি মেনে নেওয়া এবং গ্রহণ করার ব্যপার। 

 

১. কম সাড়া দেওয়া

 

একটা সময় ছিল যখন আপনি মেসেজ দেওয়ার সাথে সাথে ‘পিং’ শব্দে উত্তর চলে আসতো। এখন মনে হয় চিরন্তনকাল হয়ে যাচ্ছে কিন্তু তাদের মেসেজের উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না। কখনো কখনো উত্তর আসেও না। 

 

যদিও এটা ট্যাব রাখার কোন বিষয় না কে কখন উত্তর দিলো, কতক্ষণ পর দিলো কিন্তু যখন কেউ অনবরত বেশি সময় নিচ্ছে বা তাদের উত্তরগুলোতে আগের মতো উৎসাহ নেই বুঝবেন সে আপনার থেকে নিজেকে দূরে রাখছে। যোগাযোগ হচ্ছে কোন সম্পর্কের প্রাণ। তো যখন এটা ধীরে ধীরে নিষ্প্রাণ হয়ে যায় বুঝবেন তারা দূরে সরে যাচ্ছে এবং আপনার এই ব্যাপারে নজর দেওয়া উচিত।  

 

২. আমন্ত্রণ বন্ধ হয়ে যাওয়া  

 

আমার একটা বন্ধু, সারাহ। একটা সময় ছিল যখন আমাদেরকে কেউ আলাদা রাখতে পারতো না। আমরা একসাথে সিনেমা দেখতাম, জিম করতাম, ভ্রমণে যেতাম। কিন্তু আমি খেয়াল করা শুরু করলাম এই আমন্ত্রণগুলো ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। একসাথে সিনেমা দেখে হয়ে গেলো মাঝে মাঝে খোঁজ নেওয়া আমরা একসাথে সিনেমা দেখতে চায় কি না। এবং এগুলো একপর্যায়ে ওর একক ভ্রমণে পরিবর্তিত হলো। 

 

এটা আমার জন্য মেনে নেওয়া সহজ ছিল না যে সারাহ ওর জীবন থেকে আমাকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু এই সূক্ষ্ম কারণগুলো আমাকে  কোন খারাপ অনুভূতি ছাড়া বুঝতে সাহায্য করেছিলো যে মানুষ একপর্যায়ে দুরে সরে যায় এবং এটি স্বাভাবিক।  

 

৩. আপনি আর তাদের ভরসার মানুষ নন

 

আমাদের সবার জীবনেই এমন একজন বন্ধু থাকে যার কাছে আমরা যেকোনো সমস্যা নিয়ে ছুটে যেতে পারি এবং সে সব সমস্যার সমাধান করে দিতে পারে। যাকে আমরা সবকিছুতে বিশ্বাস করতে পারি। 

 

কী হয় যখন আপনি তাদের জন্য আর সেই ভরসার মানুষ হিসাবে থাকে না? 

 

ড্যানি, আমার বন্ধু। আমরা একে অপরের সাথে সব কথা বলতাম। কলেজের দুঃখ দুর্দশা থেকে শুরু করে সম্পর্কের মারপ্যাঁচ।  এক সময় খেয়াল করলাম ড্যানি আর আগের মতো কথা বলছে না। আমাদের কথোপকথন পাল্টে গেলো আবহাওয়ার খবর নিয়ে আলোচনায়। আমাকে ব্যাপারটা খুবই কষ্ট দেয়।   

 

কিন্তু এটি বুঝিয়েছিল ছিল যে ড্যানি দূরে সরে যাচ্ছে। সে তার উদ্বিগ্নতা এবং সফলতা অন্য একজনের সাথে শেয়ার করা শুরু করলো। এটা আমাকে যতই কষ্ট দিক আমি মেনে নিয়েছিলাম আমি ড্যানির জন্য আর ভরসার মানুষ হিসাবে নেই। 

 

৪. সম্পর্কের পরিবেশ পাল্টে যাওয়া 

 

কখনো এমন হয়েছে যে আপনি একটি জায়গায় গিয়েছেন এবং সেখানকার পুরো পরিবেশটাই বদলে গিয়েছে? কিছু একটা হচ্ছে কিন্তু আপনি বুঝতে পারছেন না কি? যখন কেউ আপনার জীবন থেকে দূরে সরে যায় তখন ঠিক এমনি অনুভূতি হয়। 

 

যারা আগে আপনার সাথে চলাফেরা করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতো মনে হয় তারা এখন জোর করে কথা বলছে। যেন আপনাদের মধ্যে একটি অদৃশ্য দেয়াল আছে। হ্যাঁ, সবারই কিছু খারাপ দিন যায়, কথা বলতে ভালো লাগে না। কিন্তু এটা যদি প্রায়ই হয় তাহলে বুঝবেন সে আপনার থেকে দূরে সরে যেতে চাচ্ছে। 

 

৫. সবসময় ব্যস্ত থাকা 

 

আপনি কি জানেন গবেষণার তথ্যমতে একজন কর্মজীবী মানুষ ৩.৫ ঘণ্টার মধ্যে একটি ইমেইলের উত্তর দেন? বিষয়টি হাস্যকর মনে হতে পারে যার কাছে আপনার জন্য সবসময় সময় থাকতো এখন হঠাৎ করেই সে ব্যস্ত হয়ে গিয়েছে। 

 

জীবনে ব্যস্ততা চলে আসে, ঠিক। কাজের চাপে, পরিবারের কাজে, ব্যক্তিগত কাজে আমরা ব্যস্ত হয়ে পড়ি। মনে রাখবেন কেউই এত ব্যস্ত না যে একটি মেসেজের উত্তর দিতে পারবে না। যখন দেখবেন আপনার কাছের কেউ প্রায়ই বলছে ‘আমি ব্যস্ত আছি’ বুঝবেন সে দূরে সরে যেতে চাচ্ছে। 

 

৬. গভীর আলাপ এড়িয়ে চলা

 

আমাদের সবারই কিছু ভীতি, স্বপ্ন, সফলতা এবং ব্যর্থতা আছে। এই বিষয়গুলো শেয়ার করার মাধ্যমে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গাঢ় হয়।   

 

কিন্তু এই আলোচনাগুলো যদি ফ্যাকাশে হতে  শুরু করে? 

 

আপনি যদি খেয়াল করেন আপনার বন্ধু গভীর আলাপে যাওয়ার বিষয়গুলো এড়িয়ে যাচ্ছে, এটা আপনার জন্য একটি  সূক্ষ্ম দিক হতে পারে যে তারা আপনার সাথে এধরনের আলাপে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে না। 

 

আপনি হয়ত নিজেকে প্রশ্ন করতে পারেন যে আপনি কোন ভুল করেছেন কি না। কিন্তু মনে রাখবেন এটা সবসময় আপনি না। মানুষের নিজস্ব কিছু সমস্যা থাকে যার কারণে তারা দূরত্ব তৈরি করে। 

 

৭. প্রয়োজনে পাশে থাকে না

 

বলা হয়ে থাকে বন্ধুত্বের সবথেকে কঠিন পরিক্ষা হলো বন্ধুর অসময়ে তার পাশে থাকতে পারা। যদি কেউ অনবরত আপনার দুঃসময়ে পাশে থাকতে না পারে তাহলে স্পষ্টতই বুঝবেন তারা পিছপা হচ্ছে আপনার সাহায্য করতে। এই সময়গুলোতে আমরা বুঝতে পারি কে আমাদের প্রকৃত বন্ধু।  

 

এটা এমন না যে আমি ট্যাব রাখছি কে আমাকে সাহায্য করলো বরং এটি পারস্পরিক সহযোগিতা। যদি এমন হয় আপনি সবসময় তাদের বিপদে পাশে থাকছেন কিন্তু আপনি বিপদে পড়লে তারা রহস্যময়ভাবে গায়েব হয়ে যাচ্ছে তাহলে বুঝবেন সে আপনার প্রকৃত বন্ধু না। 

 

এই দিকগুলো বুঝতে পারা  কষ্টসাধ্য কিন্তু মনে রাখবেন এটাতে নিজেকে দোষ দেওয়া বা মন খারাপ করা যাবে না। বরং এটা বুঝতে হবে যে মানুষের সাথে সাথে সম্পর্কও বদলায়। এই সময়গুলো নিজেকে জানতে এবং বুঝতে অতিবাহিত করুন। কারণ দিন শেষে যে সম্পর্কটা সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ তা হলো আপনার নিজের সাথে নিজের। 

সুরাইয়া

×