
ছবি: সংগৃহীত
মানুষের মতো সব প্রাণীই প্রতি রাতে ছয় কিংবা আট ঘণ্টা ঘুমায় না। কেউ ভাসতে ভাসতে ঘুমায়, কেউ দাঁড়িয়ে, আবার কেউ ঘুমের তোয়াক্কাই করে না ঘণ্টার পর ঘণ্টা! জলজ প্রাণী কিংবা বন্য পরিবেশে শিকারীর ভয়ে সদা সতর্ক প্রাণীরা নিজেদের শরীরকে এমনভাবে মানিয়ে নিয়েছে, যেন যেকোনো সুযোগে খানিকটা বিশ্রাম নিয়ে শক্তি পুনরুদ্ধার করা যায়।
বিবিসি আর্থ-এর তথ্য অনুযায়ী, প্রাণীদের ঘুমের ধরন অনেকটাই নির্ভর করে তাদের নিরাপত্তার প্রয়োজন, পরিবেশ, কিংবা প্রাকৃতিক গঠনের উপর। কেউ ঘুমায় সর্বদা সতর্ক থেকে, কেউ আবার ঘুমায় একেবারে ভিন্ন ভঙ্গিতে। কিছু প্রাণীর ঘুমের ধরন এতটাই বিচিত্র যে শুনলেই চোখ কপালে উঠবে!। চলুন, জেনে নেওয়া যাক এমন ৬টি প্রাণীর গল্প, যাদের ঘুম এক কথায় রীতিমতো আশ্চর্যের!
১. ডলফিন
ডলফিনের ঘুমের ধরন সত্যিই অভিনব। তারা কখনোই পুরো মস্তিষ্ক একসঙ্গে ঘুম পাড়ায় না। এক সময় মস্তিষ্কের একটি অংশ বিশ্রামে যায়, অন্য অংশ সচেতন থেকে আশপাশের পরিবেশে নজর রাখে—বিশেষ করে শিকারী বা বিপদের সম্ভাবনায়। এই সময় ডলফিন পানির উপরিভাগে ধীরে ধীরে ভেসে থাকে, যেটিকে বলা হয় ‘লগিং’। এই আচরণে তারা কাঠের গুঁড়ির মতো নিথর ভেসে থাকে। এই পদ্ধতি তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে, আবার প্রয়োজনীয় বিশ্রামও মেলে।
২. স্পার্ম হোয়েল
স্পার্ম হোয়েল ঘুমায় একেবারে ভিন্ন এক ভঙ্গিতে। তারা পুরোপুরি ঘুমিয়ে থাকতে পারে এবং পানির নিচে উলম্বভাবে অর্থাৎ মাথা ওপরে আর লেজ নিচে রেখে স্থির ভেসে থাকতে দেখা যায়। তাদের ঘুম এতটাই গভীর হয় যে আশেপাশে কী ঘটছে, তাও তারা বুঝতে পারে না। কেউ হালকা ধাক্কা না দিলে তাদের ঘুম ভাঙে না। তবে ঘুম ভাঙার সঙ্গে সঙ্গে তারা দ্রুত সাঁতরে সরে যায়, যা দেখলে বোঝা যায়—জেগে উঠেই আবার সতর্কতার সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছে যায় তারা।
৩. হাতি
হাতির মতো বিশালদেহী প্রাণীর ঘুমের সময় কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে খুব কম। গবেষণায় দেখা গেছে, তারা দিনে গড়ে মাত্র দুই ঘণ্টা ঘুমায়, তাও একটানা নয়। পুরো দিনে তারা অল্প অল্প করে কয়েক মিনিটের ঘুম নেয়—যাকে বলে ‘বিচ্ছিন্ন বিশ্রাম’। এদের বেশিরভাগ ঘুমই হয় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। কারণ শুয়ে ঘুমানো তাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, বিশেষ করে বন্য পরিবেশে। তবে অতিরিক্ত ক্লান্ত হলে বা পুরোপুরি নিরাপদ পরিবেশ পেলে, তখন তারা শুয়ে ঘুমাতে দেখা যায়।
৪. মাকড়সা
কিছু প্রজাতির ওরব-উইভিং (জালের মতো জটিল জাল তৈরি করা) মাকড়সার ঘুমের চক্র মানুষের থেকে একেবারেই ভিন্ন। এদের দেহঘড়ি ২৪ ঘণ্টার মতো নয়, বরং চলে ১৭, ১৮ কিংবা ১৯ ঘণ্টার চক্রে। অর্থাৎ, যখন আমরা দিনের ঘুম বা রাতের বিশ্রামে অভ্যস্ত, তখন এই মাকড়সারা চলে সম্পূর্ণ আলাদা সময়ের হিসাবে। বিজ্ঞানীরা এখনও পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারেননি, কীভাবে তারা এমন অস্বাভাবিক ঘড়ি নিয়ে সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে পারে।
৫. ওয়ালরাস
ওয়ালরাস হলো ঘুমের ব্যাপারে সবচেয়ে অভিযোজনক্ষম প্রাণীদের একটি। তারা প্রায় যেকোনো জায়গাতেই ঘুমাতে পারে- এমনকি সমুদ্রের মাঝখানেও। কখনো তাদের পানির উপর ভেসে ঘুমোতে দেখা যায়, কখনো সাগরের তলদেশে শুয়ে থাকে। আবার অনেক সময় বরফের চাঁকের সঙ্গে দাঁত দিয়ে নিজেকে আটকে রেখে ভেসে থাকতে দেখা গেছে, তখনও তারা ঘুমাচ্ছে! তবে সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় হলো, ওয়ালরাস কখনো কখনো বিশ্রাম না নিয়েই টানা ৮৪ ঘণ্টা পর্যন্ত সাঁতার কাটতে সক্ষম।
৬. কোয়ালা
কোয়ালার নাম শুনলেই ঘুমকাতুরে একটি প্রাণীর কথা মনে আসে—এটা কিন্তু একেবারে ভুল নয়। চিড়িয়াখানার পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, কোয়ালারা দিনে প্রায় ২২ ঘণ্টা পর্যন্ত ঘুমাতে পারে। তবে বন্য পরিবেশে করা গবেষণা বলছে, প্রকৃতপক্ষে তারা গড়ে প্রায় ১৪ ঘণ্টা ঘুমায়, আর তার বাইরে কিছুটা সময় কাটায় নিরব বিশ্রামে। এই অতিরিক্ত ঘুমের একটি বড় কারণ তাদের খাদ্যাভ্যাস। কোয়ালারা মূলত ইউক্যালিপটাস পাতা খায়, যেটি হজম করতে অনেক সময় ও শক্তি লাগে। ফলে শরীরকে সচল রাখার জন্য বিশ্রামই হয়ে ওঠে সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
সোর্স: indianexpress.com
আরাফাত