ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ২ বৈশাখ ১৪৩২

দ্বিতীয় সুযোগের অযোগ্য যেসব মানুষ

প্রকাশিত: ১৮:০৬, ১৪ এপ্রিল ২০২৫

দ্বিতীয় সুযোগের অযোগ্য যেসব মানুষ

ছবি: সংগৃহীত

নিঃসন্দেহে, সম্পর্ক জটিল একটি বিষয়। আমরা অনেকেই এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি যেখানে বারবার ক্ষমা করে দিয়েছি এমন মানুষকে, যারা হয়তো সেই সুযোগের যোগ্যই ছিল না।

কিন্তু বাস্তবতা হলো—কিছু মানুষ সত্যিই দ্বিতীয় সুযোগ পাওয়ার যোগ্য নয়। এটি কাউকে বিচার করা বা ক্ষমাহীন হওয়ার বিষয় নয়, বরং নিজের মানসিক সুস্থতা এবং আত্মসম্মান রক্ষা করার বিষয়।

চলুন, এবার এমন কিছু মানুষের কথা জেনে নিই, যাদের হয়তো আরেকটি সুযোগ দেওয়া উচিত নয়।

১) পেশাদার মিথ্যাবাদী

মিথ্যাবাদী মানুষদের আমরা সবাই চিনি। তারা এমনভাবে মিথ্যা বলে, যেন সেটাই সত্য। তাদের কারণে বিশ্বাসের ভিত্তি নষ্ট হয়ে যায়। আর একবার সেই বিশ্বাস ভেঙে গেলে, সম্পর্ক আর আগের মতো থাকে না। এমন মানুষকে দ্বিতীয় সুযোগ দেওয়া মানে ভবিষ্যতের কষ্টকে স্বাগত জানানো। মনে রাখবেন, আপনি সত্যিকারের সততা এবং শ্রদ্ধার যোগ্য।

২) আবেগিকভাবে মানুষকে নিয়ন্ত্রণকারীরা

এরা এমন মানুষ যারা আপনার কথাগুলোকে ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে এমনভাবে উপস্থাপন করে যাতে আপনি নিজেকেই সন্দেহ করতে শুরু করেন। এমনই এক বন্ধুর গল্প আছে আমার – ধরি তার নাম লরা। বহুবার আমি ভেবেছিলাম সে বদলাবে, কিন্তু প্রতিবারই সে আরও বেশি স্বার্থপর ও নিয়ন্ত্রণকারী হয়ে উঠেছে। যদি আপনার জীবনেও এমন কেউ থাকে, তার থেকে দূরে থাকা-ই বুদ্ধিমানের কাজ।

৩) সুবিধাবাদী ফ্রিলোডাররা

তারা শুধু নেয়, কোনো কিছু ফিরিয়ে দেয় না। বারবার অর্থ ধার নেয়, কিন্তু ফেরত দেয় না। তারা সম্পর্ককে ব্যালেন্স করে না, বরং কেবল আপনার উপকার নেয়। দ্বিতীয় সুযোগ দিলে তারা আবার সেই একই আচরণ করবে।

৪) ধারাবাহিক প্রতারকরা

প্রতারণা কেবল শারীরিক নয়, এটি বিশ্বাসঘাতকতা, মিথ্যাচার এবং প্রতারণার পুরো প্যাকেজ। যারা বারবার প্রতারণা করে, তারা কেবল কথা বলে; কাজে তা প্রমাণ করে না। এমন কাউকে ক্ষমা করা মানে নিজের অনুভূতিকে বিপদের মুখে ফেলা।

৫) নির্যাতনকারী ব্যক্তি

মানসিক, শারীরিক বা মৌখিক – কোনো নির্যাতনই গ্রহণযোগ্য নয়। যারা নিয়মিতভাবে অন্যকে কষ্ট দেয়, তাদের দ্বিতীয় সুযোগ দেওয়া মানে নিজেকে আবার সেই বিপদে ফেলা। মনে রাখবেন, আপনি ভালোবাসা, সম্মান এবং মানসিক শান্তির যোগ্য।

৬) সুবিধাবাদী বন্ধুরা

আপনার জীবনে এমন অনেক বন্ধু থাকতে পারে যারা কেবল সুখের সময়ে পাশে থাকে। কিন্তু যখন আপনি কঠিন সময় পার করেন, তখন তারা উধাও হয়ে যায়। প্রকৃত বন্ধু সেই, যে সুখে-দুখে পাশে থাকে। তাই এই ধরণের বন্ধুদের দ্বিতীয় সুযোগ না দেওয়াই ভালো।

৭) বারবার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী

যারা বারবার কথা দিয়ে কথা রাখে না, তাদের ওপর নির্ভর করা যায় না। প্রতিশ্রুতি সম্পর্কের ভিত গঠনের একটি প্রধান উপাদান। এমন মানুষদের দ্বিতীয় সুযোগ দিলে আপনি বারবার হতাশ হবেন।

৮) অনুতপ্ত না হওয়া মানুষ

মানুষ মাত্রেই ভুল করে। কিন্তু যারা ভুল স্বীকার করে না, দুঃখ প্রকাশ করে না, তারা নিজের আচরণের জন্য কোনো দায়িত্ব নেয় না। তাদের দ্বিতীয় সুযোগ দেওয়া মানে তাদের ভুলকে স্বাভাবিক মনে করা। আপনি এমন কাউকে চান না, যে নিজের দোষ স্বীকার করতেও রাজি নয়।

শেষ কথা: বিষয়টা হলো—সম্মান যারা আপনার সম্মান করে না, তাদের দ্বিতীয় সুযোগ দেওয়া মানে নিজের সম্মানকে ছোট করা। একজন মানুষ কেমন, তা বোঝা যায় সে আপনাকে সামনাসামনি যেমন ব্যবহার করে, তেমনি আপনার অনুপস্থিতিতেও কীভাবে কথা বলে।

আমেরিকান লেখক ব্রায়ান্ট এইচ. ম্যাকগিল একবার বলেছিলেন, “ভালোবাসা তখনই সত্যিকারের হয়, যখন সেখানে সম্মান থাকে।” কথাটা একদম সত্য। তাই আপনি যেন কখনো ভুলে না যান—আপনি সম্মান পাওয়ার যোগ্য। এবং যারা সেটা বুঝতে ব্যর্থ, তারা আপনার জীবনে দ্বিতীয় সুযোগ পাওয়ার যোগ্য নয়। আপনি যেমন ভালোবাসা দেন, তেমন ভালোবাসা ও সম্মান পাওয়ারও অধিকার রাখেন। কখনো কমে যাবেন না।

আসিফ

×