
সংগৃহীত
আমরা অনেকেই ভাবি, ৭০ পার করে জীবন কীভাবে এত প্রাণবন্ত আর সাফল্যময় হয়ে থাকে? এটা শুধু দীর্ঘ জীবন নয়, বরং জীবনকে প্রতিদিন জয় করার গল্প। যারা ৭০, ৮০ কিংবা তারও বেশি বয়সে জীবন উপভোগ করছেন, তাদের সকালের শুরুটাই হয় একটু ভিন্নভাবে।মনোবিজ্ঞান বলছে, এর পেছনে কিছু নির্দিষ্ট অভ্যাস রয়েছে।
সকালের রুটিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দিন কেমন যাবে, অনেকটাই নির্ভর করে দিনের শুরুর উপর। আর যারা প্রতিনিয়ত জীবনে সাফল্য ধরে রেখেছেন, তাদের মধ্যে কিছু সাধারণ সকালের অভ্যাস দেখা যায়।
এই লেখায় থাকছে এমন সাতটি সকালের অভ্যাস, যা মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে ৭০ বছরের বেশি বয়সী জয়ী মানুষদের জীবনযাপনের চাবিকাঠি হতে পারে। আপনি যদি এখনই এই পথের দিকে পা বাড়াতে চান বা ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হতে চান, তাহলে এই অভ্যাসগুলো হতে পারে আপনার পরবর্তী জীবনের দিকনির্দেশনা।
১. ভোরে উঠার অভ্যাস গড়ে তোলা
সকাল সকাল উঠলেই জীবন বদলে যায়, এটা শুধু প্রবাদ নয়, বাস্তব অভিজ্ঞতা। যারা জীবনে সাফল্য ধরে রেখেছেন, তাদের বড় একটি অংশ দিনের শুরুটা করে খুব ভোরে।ভোরের নিস্তব্ধতা, ঠাণ্ডা বাতাস, আর নিজের সঙ্গে কিছু নিঃশব্দ সময়, এসব ব্যবহার করেন আত্মজয়ী মানুষরা আত্মবিশ্লেষণ, পরিকল্পনা কিংবা এক কাপ চায়ের নিরিবিলি আনন্দে।
মনোবিজ্ঞানের ভাষায়, দিনের শুরুতে মন থাকে সবচেয়ে সতেজ ও সৃষ্টিশীল, যেটা মনোযোগ এবং সমস্যার সমাধানে সহায়ক।তাই যদি এখনও নিজেকে রাতজাগা পাখি ভাবেন, তাহলে একটু ভাবুন , হয়তো জীবনে জয়ী হওয়ার প্রথম ধাপ হলো দিনের সূর্য ওঠার আগেই জেগে ওঠা।
২. প্রতিদিন মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন
যারা জীবনের পরিণত বয়সেও মানসিকভাবে সুস্থ, প্রাণবন্ত এবং আত্মবিশ্বাসী, তাদের মধ্যে একটি অভ্যাস চোখে পড়ে, তা হলো প্রতিদিনের মেডিটেশন।আমার নানী, যিনি এখন ৮৫, তিনি প্রতিদিন সকালে নাস্তার পর ২০ মিনিট মেডিটেশন করেন। তার মতে, এটি তার মনকে শান্ত ও স্থির রাখে সারাদিন।
বিশ্বখ্যাত মনোবিজ্ঞানী এলেন ল্যাঙ্গার বলেছেন, “মাইন্ডফুলনেস হলো নতুন কিছু খেয়াল করা, যা মানুষকে বর্তমানের সঙ্গে সংযুক্ত রাখে।”এটি মানসিক চাপ কমায়, মনোযোগ বাড়ায় এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ,বয়স বাড়লেও মানসিকভাবে সক্রিয় থাকার অন্যতম কৌশল।
৩. সকালের শরীরচর্চা কখনো বাদ দেন না
৭০-এর পরে যারা সুস্থ জীবন কাটাচ্ছেন, তারা অলস বসে থাকেন না। তারা জানেন, সকালের হালকা ব্যায়াম বা হাঁটা শরীর ও মন উভয়ের জন্যই অপরিহার্য।এটা কোনো ম্যারাথনের প্রস্তুতি নয়। এটা হতে পারে পার্কে কিছুক্ষণ হাঁটা, কিছুটা যোগব্যায়াম, বা বাসায় হালকা স্ট্রেচিং।শরীরের নড়াচড়া মানে শুধু ফিট থাকা নয়, এটা মানসিক স্বাস্থ্যকেও চাঙ্গা করে। তাই জুতা পরুন আর কিছুক্ষণ হাঁটুন — শরীর ও মন আপনাকে ধন্যবাদ জানাবে।
৪. স্বাস্থ্যকর নাশতা দিয়ে দিন শুরু
যারা ৭০-এর পরেও জীবন উপভোগ করেন, তারা দিনের শুরুটা করেন একটি পুষ্টিকর নাশতার মাধ্যমে।গবেষণা বলছে, সকালের উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। তাই শুধু খাওয়া নয়, কী খাচ্ছেন সেটাই আসল।চটজলদি কফি বা ডোনাট নয়, বরং ডিম, ওটস, ফল বা বাদাম দিয়ে তৈরি একটি পুষ্টিকর নাশতা হতে পারে আপনার জীবনের গতি ফেরানোর উপায়।
৫. কৃতজ্ঞতার অনুভূতি চর্চা করেন
আমার দাদু, যিনি এখন ৯০, প্রতিদিন সকালে কিছু সময় নেন তার জীবনের ছোট ছোট আনন্দগুলোর জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে।এটা তাকে সারাদিনের জন্য ইতিবাচকতা দেয়, যা অন্যদের মাঝেও ছড়িয়ে পড়ে।
মনোবিজ্ঞানী রবার্ট এমন্স বলেন, “কৃতজ্ঞতা হলো এমন একটি মনোভাব, যা মানুষকে যা আছে তা উপভোগ করতে শেখায়, সবসময় নতুন কিছু খুঁজতে নয়।”সকালে নিজের জীবনের ভালোলাগার দিকগুলো মনে করে একটি ‘ধন্যবাদ’ বলুন — পরিবর্তনটা নিজেই অনুভব করবেন।
৬. একা থাকার সময়টাকে গুরুত্ব দেন
যারা জীবনে সাফল্য ধরে রেখেছেন, তারা জানেন সকালের কিছু সময় নিজের সঙ্গে থাকা কতটা মূল্যবান।এই সময়টা ব্যবহার করেন আত্মবিশ্লেষণে, দিনের পরিকল্পনায় এবং মানসিক প্রস্তুতির জন্য।মনোবিজ্ঞানী কার্ল জুং বলেছিলেন, “নিঃসঙ্গতা আমার জন্য এমন এক নিরাময়ের উৎস, যা আমার জীবনকে জীবনের মতো করে তোলে।”
নিজের ভেতরের সত্তার সঙ্গে যোগাযোগ করাটাই আসল। তাই সকালে কিছু সময় কেবল নিজের জন্য রাখুন, তা হতে পারে জীবনের নতুন দ্বার উন্মোচনের চাবিকাঠি।
৭. জানার আগ্রহ বজায় রাখেন
যারা বয়সের বাধা পেরিয়েও জীবন জিতে যাচ্ছেন, তারা কখনো শেখা বন্ধ করেন না।প্রতিদিন সকালে হয়তো কিছু নতুন পড়া, কিছু জানা, বা কোনো বিষয়ে ভাবার মাধ্যমে তারা মাথাকে সচল রাখেন।মনোবিজ্ঞানী আলবার্ট বানডুরা বলেন, “ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটে তখনই, যখন আমরা আমাদের আশেপাশের পরিবেশ বদলাই।”
এই আগ্রহই তাদের মনকে রাখে তীক্ষ্ণ আর জীবনের প্রতি উৎসাহী। জানার আগ্রহ ধরে রাখুন — বয়স যতই হোক, শেখা কখনো থেমে যায় না।
জীবন মানেই শুধু বেঁচে থাকা নয়, বরং প্রতিদিন নতুন করে বাঁচা। ৭০-এর পরেও যারা জীবনকে জিতে নিচ্ছেন, তাদের অভ্যাসগুলো আমাদের দেখায়, বয়স বাড়লেও সম্ভাবনা ফুরোয় না।সকালের শান্তি, শরীরচর্চা, মনের পরিচর্যা আর জানার আগ্রহ — সব মিলিয়ে এগুলো জীবনের সত্যিকারের জয়ী মানুষদের পথচিহ্ন।এগুলো শুধু অভ্যাস নয়, বরং প্রতিদিনের সচেতন সিদ্ধান্ত, যাতে বয়স যতই বাড়ুক, জীবন হয়ে ওঠে অর্থবহ।তাই আগামীকাল সকালেই শুরু করুন — হয়তো এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।
সূত্র:https://tinyurl.com/5cbftma4
আফরোজা