ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ২ বৈশাখ ১৪৩২

আধুনিক যুগে সামাজিক বন্ধন বিয়ের নতুন কিছু ধরন

প্রকাশিত: ২০:১০, ১৩ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ২০:১১, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

আধুনিক যুগে সামাজিক বন্ধন বিয়ের নতুন কিছু ধরন

ছবি: প্রতীকী

বিয়ে হলো একটি প্রচলিত সামাজিক বন্ধন বা বৈধ চুক্তি যার মাধ্যমে দুজন মানুষের মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপিত হয়। একটা সময় ছিল, যখন সবাই ভাবত বিয়ে মানেই আজীবনের প্রেমের বন্ধন। কিন্তু বাস্তবতা একটু আলাদা। ইতিহাসে অনেক সময়ই বিয়ে হয়েছে সামাজিক মর্যাদা, সন্তান ধারণ বা পরিবারের চাপে পড়ে। ভালোবাসার থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল দায়িত্ব ও সমাজের নিয়ম মানা। ফলে অনেক সম্পর্ক হয়ে উঠতো একপেশে, আনন্দহীন।

কিন্তু এখন সমাজ বদলেছে। মানুষ স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করছে, আর তারা আর আগের মতো প্রেমহীন সম্পর্কে আটকে থাকতে চায় না।

এক গবেষণা অনুযায়ী, ১৯৭০ সালের তুলনায় বর্তমানে আমেরিকায় বিয়ের হার ৫০% কমে গেছে। তবে এর মানে এই না যে মানুষ বিয়ে করছে না—বরং তারা বিয়ে করছে নিজের শর্তে, নিজের প্রয়োজন মেনে। নিচে এমন তিনটি আধুনিক ধরনের বিয়ের কথা বলা হলো, যেখানে প্রেম নয়, বরং বিশেষ কিছু প্রয়োজনই মুখ্য:

১. সুবিধাবাদী বা বন্ধুত্বমূলক বিয়ে (Convenience Marriage)

এই ধরনের বিয়েতে দম্পতির মধ্যে রোমান্টিক সম্পর্ক নাও থাকতে পারে। তারা একসঙ্গে থাকে, কারণ তাদের জীবনের লক্ষ্য ও রুচি মিলে যায়, তারা একে অপরকে সম্মান করে।

জাপানে একে বলা হয় ‘ফ্রেন্ডশিপ ম্যারেজ’। এতে দম্পতিরা একসঙ্গে বা আলাদাভাবে থাকতে পারে। তারা চাইলে কৃত্রিম উপায়েও সন্তান নিতে পারে। যারা প্রেমে আগ্রহী নয় বা সামাজিক চাপে পড়ে বিয়ে করতে চায় না, তাদের জন্য এই ধরনটি অনেক বেশি মানানসই।

একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, আমেরিকার প্রায় ১৫ শতাংশ দম্পতি ‘যৌনহীন’ বৈবাহিক সম্পর্কে রয়েছেন, তবুও তারা একে সফল বলে মনে করেন।

২. চুক্তিভিত্তিক বা মেয়াদ নির্ধারিত বিয়ে (Renewable Marriage Contract)

মেক্সিকোতে এধরনের বিয়ে বেশি প্রচলিত, যেখানে দম্পতিরা নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য বিয়ে করে—ধরুন ২ বা ৫ বছর। এরপর যদি সম্পর্ক ভালো চলে, তাহলে আবার নবায়ন করা যাবে। না হলে, আলাদা হয়ে যাওয়াও সহজ।

এই ব্যবস্থায় বিয়ের সব দায়িত্ব ও নিয়ম আগে থেকেই লিখিত চুক্তিতে থাকে—যেমন সন্তান পালনের নিয়ম, সম্পত্তির অধিকার ইত্যাদি। যারা বিয়েকে ‘চিরকালের বন্ধন’ হিসেবে মানতে চায় না, তাদের জন্য এই পদ্ধতি হতে পারে অনেক বেশি বাস্তবসম্মত ও চাপমুক্ত।

৩. একসঙ্গে থেকেও আলাদা (Living Apart Together – LAT)

নেদারল্যান্ডসে জনপ্রিয় এই ধারণা, যেখানে দুজন মানুষ বিবাহিত বা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সম্পর্কের মধ্যে থাকে, কিন্তু আলাদাভাবে বসবাস করে। তারা মনে করে, একসঙ্গে না থেকেও ভালোবাসা ও বিশ্বাস বজায় রাখা যায়। অনেকে পেশাগত কারণ, ব্যক্তিগত জায়গা বজায় রাখা বা পারিবারিক পরিস্থিতির জন্য এমনটা বেছে নেয়।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, LAT দম্পতিরা বিশ্বাস করে—তাদের সম্পর্ক টিকে থাকে ভালোবাসা, বোঝাপড়া ও সম্মানের ভিত্তিতে, কোনো সামাজিক বা আইনি চাপে নয়।

বিয়ে এখন আর একরকম বাঁধা নিয়মে হয় না। কে কাকে বিয়ে করবে, কীভাবে একসঙ্গে থাকবে—এসব এখন মানুষ নিজের মতো ঠিক করছে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, বিয়ের সম্পর্ক দুজনের জন্যই শান্তির, সম্মানের ও সুখের হোক। সবচেয়ে মূল্যবান, প্রেম হোক বা না-ই হোক, দুজন মানুষ পরস্পরের প্রতি দায়িত্বশীল হোক, একে অপরকে বুঝুক।

 

সূত্র: সাইকোলজি টুডে

রাকিব

×