
ছবিঃ সংগৃহীত
জীবনে এগিয়ে যাওয়া আর একই জায়গায় আটকে থাকার মাঝে রয়েছে একটি স্পষ্ট পার্থক্য। এই পার্থক্যের মূল কারণ—অভ্যাস। ব্যর্থ মানুষদের কিছু নির্দিষ্ট অভ্যাস থাকে, যা তাদের প্রকৃত সম্ভাবনার দ্বার থেকে দূরে রাখে।
বিশেষ করে সপ্তাহান্তে যেসব অভ্যাস তারা গড়ে তোলে, তা অনেক কিছু বলে দেয় কেন তারা জীবনে এগিয়ে যেতে পারেন না। যদি আপনি সচেতন হন, তাহলে দেখবেন—এই মানুষদের মধ্যে কিছু অভিন্ন আচরণগত ধারা রয়েছে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক সপ্তাহান্তের এমন ৮টি অভ্যাস সম্পর্কে, যা মানুষকে সফলতার পথ থেকে দূরে সরিয়ে রাখে:
১) নিরাপত্তার অঞ্চলে আটকে থাকা
নিজের কমফোর্ট জোনে আটকে থাকা ব্যর্থ মানুষদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এটি নিশ্চিন্ত, সহজবোধ্য এবং চ্যালেঞ্জবিহীন। যদিও নিরাপদ মনে হয়, কিন্তু এটি আসলে একটি ফাঁদ।
যারা জীবনে এগোতে পারেন না, তারা সাধারণত পরিচিত জগতের বাইরে পা ফেলেন না। তারা ঝুঁকি নিতে চান না, নতুন কিছু শেখার বা চেষ্টা করার সাহস পান না।
আসল পরিবর্তন হয় সেই জায়গায়, যেখানে আপনি চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন, নতুন দক্ষতা শেখেন, নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হন এবং নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। নিজ শহর ছেড়ে না যাওয়ার মতোই—আপনি নিরাপদ বোধ করলেও, জীবনের বহু সুযোগ হারিয়ে ফেলেন।
২) কাজ ফেলে রাখার অভ্যাস (প্রোক্র্যাস্টিনেশন)
প্রোক্র্যাস্টিনেশন এমন একটি অভ্যাস যা ধীরে ধীরে আপনাকে কোথাও পৌঁছাতে দেয় না।
যদি আপনি বারবার কাজ ফেলে “পরেরবার” বা “আগামীকাল” বলছেন, বুঝে নিন এটি এক ধরনের বিপদসংকেত।
৩) আত্মবিশ্লেষণের অভাব
আত্মবিশ্লেষণ ছাড়া ব্যক্তিগত উন্নতি সম্ভব নয়। এটা আমাদের নিজের দুর্বলতা, শক্তি, ও অগ্রগতির পথ চিনতে সাহায্য করে।
ব্যর্থ মানুষদের সাধারণত এই অভ্যাস নেই। তারা সপ্তাহান্তে নিজেদের কর্ম, জীবন বা লক্ষ্য নিয়ে ভাবেন না। এর ফলে তারা একই ভুল বারবার করে এবং জীবনে এগোতে পারেন না।
৪) স্বাস্থ্য ও সুস্থতার প্রতি উদাসীনতা
শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য—সফলতার ভিত্তি। কিন্তু ব্যর্থ মানুষরা অনেক সময়ই নিজের যত্ন নিতে চান না।
সপ্তাহান্তে বিশ্রাম, ব্যায়াম, পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ বা মানসিক স্বস্তি বজায় রাখার চেষ্টার অভাব তাদের মধ্যে দেখা যায়। এতে শুধু স্বাস্থ্য নয়, তাদের মানসিক স্পষ্টতা ও উৎপাদনশীলতাও কমে যায়। নিজেকে ভালো রাখা বিলাসিতা নয়—এটা সফলতার জন্য অপরিহার্য।
৫) সম্পর্কের মূল্য না বোঝা
জীবনের প্রকৃত সৌন্দর্য সম্পর্কের মধ্যেই লুকিয়ে আছে। তা সত্ত্বেও ব্যর্থ মানুষরা সম্পর্ক গড়ে তোলার বা রক্ষা করার বিষয়ে উদাসীন থাকেন।
সপ্তাহান্তে তারা প্রিয়জন, বন্ধু বা পেশাগত নেটওয়ার্কের সঙ্গে সময় কাটান না। অথচ এসব সম্পর্কই আমাদের নতুন সুযোগের মুখোমুখি করে তোলে, মানসিক সমর্থন জোগায়।
৬) লক্ষ্য নির্ধারণ না করা
লক্ষ্য ছাড়া জীবন দিকহীন এক নৌকার মতো। আমার নিজের জীবনে এমন এক সময় ছিল যখন আমি ভাবতাম "যা হবে দেখা যাবে"—কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্য ছাড়াই দিন কাটত। তখন বুঝি, আমি এক জায়গায় আটকে আছি।
কিন্তু যখন নির্দিষ্ট ও বাস্তবসম্মত লক্ষ্য নির্ধারণ করলাম, তখনই অন্ধকারে আলো দেখার মতো অনুভব হলো। ব্যর্থ মানুষরা সপ্তাহান্তে কোনো লক্ষ্য ছাড়াই সময় কাটিয়ে দেন। ফলে তারা উদ্দেশ্যহীনভাবে দিন পার করেন, যা অগ্রগতির পথে বড় বাঁধা।
৭) কৌতূহলের অভাব
কৌতূহল জ্ঞানের বীজ। এটা নতুন জিনিস জানার ইচ্ছা জাগায়, প্রশ্ন তোলে, এবং উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করে।
কিন্তু যারা ব্যর্থ, তাদের মধ্যে অনেক সময় কৌতূহলের ঘাটতি দেখা যায়। তারা সপ্তাহান্তে রুটিনে আটকে থাকেন, নতুন কিছু শেখার আগ্রহ দেখান না। একটি কৌতূহলী মন কখনো স্থির থাকে না। এটা সর্বদা ভালো কিছু খোঁজে, শেখে, এবং পরিবর্তনকে স্বাগত জানায়।
৮) ব্যর্থতার ভয়
ব্যর্থতার ভয় অনেককে থামিয়ে দেয়। এটি এক অদৃশ্য শৃঙ্খল, যা মানুষকে এগিয়ে যেতে বাধা দেয়।
কিন্তু সত্যটা হলো—ব্যর্থতা কোনো সাফল্যের বিপরীত নয়, বরং তারই অংশ। প্রত্যেক সফল মানুষের জীবনে ব্যর্থতা এসেছে। সেই ব্যর্থতা থেকেই তারা শিখেছেন, বেড়েছেন এবং সফলতার দিকে এগিয়েছেন।
শেষ কথা: পরিবর্তনের ক্ষমতা আপনার হাতেই
সাফল্য কেবল অর্জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়—এটি আমাদের অভ্যাস ও প্রতিদিনের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে।
এই আটটি সপ্তাহান্তের অভ্যাস কোনো স্থায়ী রায় নয়। বরং এটি নির্দেশ করে, কোথা থেকে পরিবর্তন শুরু হতে পারে। অভ্যাসগুলো শেখা যায়, আবার ভুল অভ্যাসগুলো সংশোধনও করা যায়।
অ্যারিস্টটল একবার বলেছিলেন, “আমরা যা বারবার করি, সেটাই আমাদের প্রকৃতি। শ্রেষ্ঠতা কোনো কাজ নয়, এটা একটি অভ্যাস।”
সূত্রঃ https://dmnews.com/gb-8-weekend-habits-of-unsuccessful-people-who-never-move-forward-in-life/
ইমরান