
ছবি: সংগৃহীত
পুরুষদের মধ্যে চুল পড়া: কারণ ও প্রতিকার
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী পুরুষদের মধ্যে অতিরিক্ত চুল পড়া একটি সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্যে প্রভাব ফেলে না, বরং আত্মবিশ্বাসেও বড় ধরনের চাপে ফেলে দিতে পারে। যদিও চুল পড়া একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, তবুও হরমোন, বংশগত কারণ, পরিবেশগত প্রভাব, খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাপন এই প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে।
পুরুষদের চুল পড়ার প্রধান তিনটি কারণ নিচে তুলে ধরা হলো, যেগুলো এককভাবে কিংবা সম্মিলিতভাবে এই সমস্যার জন্য দায়ী হতে পারে:
১. হরমোনজনিত সমস্যা (অ্যান্ড্রোজেনেটিক অ্যালোপেসিয়া) পুরুষদের চুল পড়ার প্রায় ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই এই সমস্যাটি দায়ী। এটি মূলত টেস্টোস্টেরন হরমোন থেকে উৎপন্ন শক্তিশালী রূপ ‘ডাইহাইড্রোটেস্টোস্টেরন’ (DHT)-এর কারণে হয়ে থাকে। DHT চুলের ফলিকলের অ্যান্ড্রোজেন রিসেপ্টরে সংযুক্ত হয়ে চুল পাতলা হওয়া ও পড়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে। এই ধরনের চুল পড়া সাধারণত মাথার সামনের অংশ ও মুকুট অংশে বেশি দেখা যায় এবং ধীরে ধীরে "M" আকৃতির হেয়ারলাইন গঠন করে।
২. অটোইমিউন রোগ (অ্যালোপেসিয়া এরিয়াটা) এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিজেই চুলের ফলিকলের উপর আক্রমণ চালায়, ফলে ফলিকলে প্রদাহ সৃষ্টি হয় এবং চুল পড়ে যায়। এর সবচেয়ে সাধারণ রূপ ‘অ্যালোপেসিয়া এরিয়াটা’, যা মাথা কিংবা শরীরের বিভিন্ন স্থানে হঠাৎ করে চুল পড়ে যাওয়ার কারণ হয়।
৩. মানসিক চাপ (স্ট্রেস) শারীরিক বা মানসিক চাপ থেকেও চুল পড়া বৃদ্ধি পেতে পারে। অতিরিক্ত স্ট্রেসের ফলে কর্টিসল হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা চুলের বৃদ্ধির স্বাভাবিক চক্রে ব্যাঘাত ঘটায়। এতে করে হঠাৎ চুল পড়া শুরু হয়, যা অনেক সময় উদ্বেগ, বিষণ্ণতা বা অবসাদের মতো উপসর্গের সঙ্গেও যুক্ত থাকে।
৪. পারিবারিক ইতিহাস (জেনেটিক্স) পরিবারে যদি টাক পড়ার ইতিহাস থাকে, তাহলে একজন পুরুষের চুল পড়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। জেনেটিক কারণে শরীরে DHT-এর উৎপাদন ও প্রতিক্রিয়া বেড়ে গিয়ে চুল পড়ার হার বাড়ায়। সাধারণত এমন ক্ষেত্রে মাথার উপরের অংশ ও মুকুটে চুল পাতলা হয়ে পড়ে।
৫. পুষ্টিহীন খাদ্যাভ্যাস চুলের স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি যেমন আয়রন, জিঙ্ক, বায়োটিনের অভাব, অতিরিক্ত হিট স্টাইলিং, অথবা রুক্ষ রাসায়নিক ব্যবহারের কারণেও চুল পড়তে পারে বা চুল পড়ার হার বৃদ্ধি পেতে পারে।
প্রায়শই এই কারণগুলো একে অপরের সঙ্গে জড়িত থাকে। যেমন, মানসিক চাপ DHT হরমোনের প্রভাব বাড়িয়ে তুলতে পারে, যা আবার অ্যান্ড্রোজেনেটিক অ্যালোপেসিয়াকে ত্বরান্বিত করে।
চুল পড়া ঠেকাতে হলে মূল কারণগুলো শনাক্ত করে জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনা জরুরি। তবে সঠিক চিকিৎসা ও পরামর্শের জন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা সবচেয়ে ভালো, যেন সময়ের আগেই সমস্যার সমাধান করা যায়।
আসিফ