ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২

আপনি অলস নন, মানসিকভাবে ক্লান্ত—এই ৯টি লক্ষণ বলছে আসল সত্যি

প্রকাশিত: ১৫:২৮, ১২ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ১৫:৪২, ১২ এপ্রিল ২০২৫

আপনি অলস নন, মানসিকভাবে ক্লান্ত—এই ৯টি লক্ষণ বলছে আসল সত্যি

ছবি: প্রতীকী

এক সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম স্ক্রল করতে করতে মনে হলো, সবাই যেন জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত কাজে লাগাচ্ছে, নতুন নতুন প্রোডাক্টিভিটি হ্যাক, ঝলমলে ফিটনেস রুটিন! আর আমি যেন এক অদৃশ্য বালিতে আটকে গেছি। তখনই উপলব্ধি করলাম, এই স্থবিরতা বা অনিচ্ছা মানেই অলসতা নয়। এর পেছনে থাকতে পারে মানসিক ও আবেগগত সমস্যা, যা সাধারণ আলসেমির চেয়ে অনেক গভীর।

 

আপনিও যদি এই অনুভবের সঙ্গে একমত হন, জেনে রাখুন আপনি একা নন। বহু মানুষ মানসিক চাপ ও ক্লান্তিকে ভুলবশত অলসতা বলে মনে করে নিজেকে দোষারোপ করে। নিচে দেওয়া হলো এমন ৯টি লক্ষণ, যা দেখায় আপনি আসলে ‘অলস নন, বরং মানসিকভাবে অতিভারগ্রস্ত।

 

আপনার টু-ডু লিস্ট কখনো শেষ হয় না

সারাক্ষণ মাথায় ঘোরে অসংখ্য কাজের তালিকা, যেগুলো দিনশেষেও শেষ হয় না। আপনি হয়তো সকাল শুরু করেন “সব কাজ শেষ করব এই ভাবনায়, কিন্তু রাতে দেখা যায়, তালিকাটি প্রায় অপরিবর্তিত। আসলে এটি প্রমাণ করে আপনি চেষ্টার কমতি রাখছেন না, বরং দায়িত্ব এত বেশি যে একসঙ্গে সব সামলানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

 

বিশ্রামের সময়েও মন বিশ্রাম নেয় না

যখন আপনি একটু বিশ্রাম নিতে চান, তখনই মাথায় আসে হাজারো চিন্তা আগামীকালের কাজ থেকে শুরু করে পাঁচ বছর আগের এক বিব্রতকর মুহূর্ত পর্যন্ত! এই ধরনের চিন্তা থামাতে না পারাটা অলসতার চিহ্ন নয়, বরং মানসিক চাপের বহিঃপ্রকাশ। এমন অবস্থায় মেডিটেশন, ডায়েরি লেখা বা মননশীল অনুশীলন কার্যকর হতে পারে।

 

ছোটখাটো ব্যাপারেই বিরক্ত হয়ে যান

ইন্টারনেট স্লো, গ্লাস থেকে পানি পড়ে যাওয়া, এইসব ছোট ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় যদি আপনি রেগে যান, সেটা আপনার মানসিক ক্লান্তির ইঙ্গিত হতে পারে। এটি কোনো খারাপ স্বভাব নয়, বরং আপনার আবেগীয় সহনশীলতা সীমায় পৌঁছেছে এই বুঝে নেওয়াই প্রথম পদক্ষেপ।

 

আপনি শারীরিকভাবে অতিরিক্ত ক্লান্ত অনুভব করেন

ঘুম ঠিকঠাক হলেও সারাদিন ক্লান্ত লাগছে? এটা মানসিক চাপের অপ্রকাশ্য প্রভাব হতে পারে। যখন মনে হয়, “আমি কিছু করছি না, কিন্তু এত ক্লান্ত কেন?”, তখন ভেবে দেখা উচিত, আপনার মানসিক শক্তি কতটা খরচ হচ্ছে অজান্তেই।

 

মনোযোগ ধরে রাখতে পারেন না

কোনো কাজ শুরু করলেই মন চলে যায় অন্যদিকে সোশ্যাল মিডিয়া, পুরোনো মেসেজ, এমনকি হঠাৎ ঘর পরিষ্কার করার চিন্তাও এসে পড়ে! এটি প্রোক্র্যাস্টিনেশন নয়, বরং মানসিক বিশৃঙ্খলার লক্ষণ। ভাবনা গুছিয়ে নেওয়ার জন্য সময় দিন, প্রয়োজনে কাউকে মনের কথা বলুন।

 

বারবার অপরাধবোধে ভোগেন

"আজকে তো কিছুই করলাম না!"—এই চিন্তা ঘুরপাক খায় সারাক্ষণ? এটি অলসতা নয়, বরং আত্ম-অবমূল্যায়নের প্রতিফলন।

যদি বিশ্রামের সময়েও নিজেকে দোষ দেন, ভাবুনআপনার প্রত্যাশা কি বাস্তবসম্মত?

 

যেসব কাজ একসময় ভালো লাগত, এখন আর লাগে না

আপনি হয়তো আগে বই পড়তেন, গান শুনতেন, রান্না করতেন আনন্দ করে। কিন্তু এখন এগুলো বিরক্তিকর মনে হয়? এটা মানসিক বার্নআউটের সতর্ক সংকেত। মন যদি পুরোনো আগ্রহে সাড়া না দেয়, তবে ছোট ছোট পদক্ষেপ নিন খুব অল্প সময়ের জন্য হলেও। তাতেও আগ্রহের পুনর্জাগরণ হতে পারে।

 

চাপের কারণে কাজ ফেলে রাখেন

কোনো কাজ নিয়ে ভাবলেই যদি বুক ধড়ফড় করে, মনে হয় ভুল হবে বা কেউ রেগে যাবে, তবে জেনে রাখুন, আপনি কাজ ফাঁকি দিচ্ছেন না, বরং ভয় এড়াতে চাইছেন। এক্ষেত্রে কাজকে ছোট ছোট ধাপে ভাগ করে নেওয়া উপকারী হতে পারে।

 

আপনি কাজের চেয়ে বেশি চিন্তা করেন

"কত কাজ বাকি!"—এই চিন্তায় কাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা, অথচ কোনো কিছুই এগোয় না? এটি অলসতা নয়, বরং বিশ্লেষণজনিত পক্ষাঘাত, অর্থাৎ অতি বিশ্লেষণেই আপনি স্থবির হয়ে পড়ছেন। এমন সময়ের জন্য একটি ছোট ট্রিক হতে পারে: ১৫ মিনিটের জন্য চিন্তা করুন, তারপর একটি ছোট কাজ শুরু করুন।

 

এই ৯টি লক্ষণ যদি আপনার সঙ্গে মিলে যায়, তবে নিজেকে অলস না ভেবে একটু সহানুভূতির চোখে দেখুন। মানসিক ও আবেগগত চাপ বুঝে ফেলা মানেই সমাধানের পথে আপনি অনেকটাই এগিয়ে। নিজের প্রতি সদয় হন, প্রয়োজনে কাউন্সেলিং, মেডিটেশন, বা সঠিক গাইড খুঁজে নিন।

 

মনে রাখবেন, নিজের মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রাধান্য দেওয়া অলসতা নয়বরং এটি হলো একটি টেকসই জীবনের ভিত্তি। আপনি পারবেন, ধৈর্য রাখুন।

 

সোর্স: https://dmnews.com/dna-9-signs-youre-not-lazy-youre-just-mentally-and-emotionally-overwhelmed/

রবিউল হাসান

×