
ছবি: সংগৃহীত।
সকালে ঘুম থেকে উঠে যদি আপনি ক্লান্তি এবং অনিচ্ছার মোকাবেলা করেন, তবে দিনের সঠিক সূচনা আপনার সমগ্র কর্মক্ষমতা এবং মেজাজের উপর গভীর প্রভাব ফেলে। যদিও কিছু মানুষ প্রাকৃতিকভাবেই সকালের মানুষ হয়, বেশিরভাগ মানুষেরই ছোট ছোট অভ্যাসের পরিবর্তনের মাধ্যমে সকালের উদ্যম ও চেতনা বাড়ানোর প্রয়াস থাকে।
সঠিক ঘুম ও অ্যালার্ম ব্যবস্থা
ঘুম থেকে ওঠার সাথে সাথে শরীর ও মস্তিষ্ক নতুন দিনের জন্য শক্তি গ্রহণের সুযোগ পায়। নিউওয়েস্টার্ন মেমোরিয়াল হাসপাতালের নিউরোলজিস্ট ডা. সাব্রা অ্যাবট বলেন, স্নুজ বাটন বারবার চাপলে ঘুম বিভক্ত হয়ে যায় এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া সম্ভব হয় না। এজন্য আপনাকে সর্বশেষ ঘুমানোর সময় নির্ধারণ করে একবারেই অ্যালার্ম সেট করা উচিত। যদি সকালে অতিরিক্ত ক্লান্তি বোধ হয়, তাহলে ধীরে ধীরে রাতের ঘুমের সময় এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন যাতে গভীর এবং পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা যায়।
ইতিবাচক মনোভাব ও নিজেকে উৎসাহিত করা
সকালে আমাদের প্রথম চিন্তাগুলো সারাদিনের মেজাজ নির্ধারণ করে। মনোবিজ্ঞানী এলিজাবেথ লোমবার্ডো নির্দেশ দেন, “সকালের প্রথম ভাবনাগুলোই সারাদিনের মেজাজের ভিত্তি।” যদি ঘুম থেকে ওঠার সাথে সঙ্গে আপনার মনে ‘এখনও ভোর’ বা ‘আজ অনেক চাপ’ এর মতো নেতিবাচক শব্দের প্রতিধ্বনি ওঠে, তাহলে নিজেকে উৎসাহিত করে বলুন, “আজ আমি খুশির কিছু একটা পাবো।” বিছানার পাশে একটি ছোট নোট রেখে দেওয়াও সহায়ক হতে পারে, যা আপনাকে দিনভর ইতিবাচকতা মনে করিয়ে দেবে।
প্রাকৃতিক আলো গ্রহণ ও শরীরচর্চা
ঘরে উঠেই পর্দা সরিয়ে প্রাকৃতিক আলো গ্রহণ করা অত্যন্ত উপকারি। সরাসরি সূর্যালোক শরীরকে দ্রুত জাগিয়ে তোলে ও রাতে ভালো ঘুমের সহায়ক হিসেবে কাজ করে। যদি সূর্যের সরাসরি আলো না পাওয়া যায়, তবে ঘরের আলো যতটা সম্ভব উজ্জ্বল করে দিন। এছাড়া, ঘর ছাড়ার আগে ৫-১০ বার গভীর শ্বাস নিয়ে এবং কিছু সহজ স্ট্রেচিং—যেমন, হাত উপরে তোলা, কোমর মোচড়ানো, সামনের দিকে ঝুঁকে পায়ের আঙ্গুল স্পর্শ করা—করলে শরীরের রক্তচালনা উন্নত হয়। ডা. ক্যারি জাওরস্কি এ ব্যাপারে বলেন, এই ছোট খাটো শরীরচর্চা প্রাকৃতিক উদ্যম বৃদ্ধিতে সহায়ক।
স্বাস্থ্যকর সকালের খাদ্যাভ্যাস ও পানি পান
সকালের খাদ্যাভ্যাসও আপনার সারাদিনের এনার্জি লেভেলে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। ডা. অ্যাবটের মতে, কার্বোহাইড্রেট মস্তিষ্কের প্রিয় জ্বালানি হওয়ায় হোল গ্রেইন টোস্ট, অ্যালমন্ড বাটার বা কম চিনি ও উচ্চ ফাইবার সেরিয়াল, বেরি ইত্যাদি গ্রহণ করা উচিত। এ ধরনের খাবার ধীরে ধীরে হজম হয়ে এনার্জি সারাদিন ধরে রাখতে সহায়ক। অনেকেই মনে করেন, সকালে স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা বেশি থাকায় কফি খাওয়ার আগে প্রথমে পানি পান করা এবং কিছুক্ষণের জন্য অপেক্ষা করা উত্তম। রাতে ঘুমের কারণে শরীরে পানিশূন্যতা সৃষ্টি হলে, সকালে উঠে একটি বড় গ্লাস পানি পান করা অত্যন্ত আবশ্যক; পূর্বরাত্রে পানিতে পুদিনা, তুলসী বা আদা মিশিয়ে রেখে সতেজতার অনুভূতি বাড়ানো যেতে পারে। পাশাপাশি, ঘর গোছানো—যেমন বিছানা তৈরি করা বা ঘরের পরিবেশ সুন্দরভাবে সাজিয়ে নেওয়া—মানসিক প্রস্তুতির একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
দ্রুত এনার্জি বৃদ্ধির সহজ টিপস
অনেক সময় আমাদের একটু অতিরিক্ত চাঙ্গা বা উদ্যম প্রয়োজন হয়। তড়িৎ এনার্জি বৃদ্ধির জন্য কিছু সহজ এবং কার্যকর উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে:
শাওয়ারে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করলে তাৎক্ষণিকভাবে চেতনা বৃদ্ধি পায়। কমলা রঙ উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে, তাই কমলা রঙের রোব পরা বা কমলা রঙের মগে কফি খাওয়া সহায়ক। যোগব্যায়ামের কোবরা ভঙ্গিমা শরীরে প্রাকৃতিক এনার্জি যোগায়; উপুড়িয়ে শুয়ে হাত কাঁধের নিচে রেখে বুক ধীরে তুলে প্রায় ৩০ সেকেন্ড ধরে রাখা একটি কার্যকরী অভ্যাস।প্রিয় গান শোনা মানসিক উদ্দীপনা বাড়ায় এবং মনকে প্রাণবন্ত করে তোলে। এছাড়াও সাইট্রাস বা রোজমেরির সুবাস শরীরকে সতেজ করে, এজন্য শাওয়ারে এক ফোঁটা ইসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহার করে ঘরে সুন্দর ঘ্রাণ ছড়িয়ে দিতে পারেন।
এই সহজ ও কার্যকর পদ্ধতিগুলো মেনে চললে প্রতিদিন সকালে আপনি আরও উদ্যমী, সতেজ ও মনোযোগী অবস্থায় দিন শুরু করতে পারবেন, যা আপনার সারাদিনের কর্মক্ষমতা ও মেজাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
সায়মা ইসলাম