
ছবি: সংগৃহীত
বিশ্ববিখ্যাত বিনিয়োগকারী ওয়ারেন বাফেট বারবার প্রমাণ করেছেন যে, সফল বিনিয়োগের পেছনে শুধু সংখ্যা নয়, আছে গভীর মানব মনস্তত্ত্বের জ্ঞান। তাঁর মতে, যিনি মানুষের আচরণ ও মনস্তত্ত্ব বুঝতে পারেন, তিনিই শেষ পর্যন্ত হয়ে উঠবেন সত্যিকারের ধনী।
বাফেট বহুবার বলেছেন, “যখন অন্যরা লোভী হয়, তখন ভয় পেয়ো; আর যখন অন্যরা ভীত, তখন লোভী হয়ো।” এই মনোভাবই তাঁকে বিলিয়নিয়ার বানিয়েছে।
১৯৫২ সালে বিয়ের পরপরই স্ত্রী সুজির সঙ্গে এক রোড ট্রিপে বের হন বাফেট। পথে কিছু সময়ের জন্য থামেন লাস ভেগাসের বিখ্যাত ফ্লেমিংগো ক্যাসিনোতে। ২০১৯ সালের শেয়ারহোল্ডারদের সভায় সেই সময়ের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, “চারপাশে তাকিয়ে দেখি, অনেক সুসজ্জিত মানুষ হাজার হাজার মাইল দূর থেকে এখানে এসেছেন, এমন এক সময়ে যখন ভ্রমণ এত সহজ ছিল না।”
তবে তাঁর মূল উপলব্ধি ছিল আরেকটি। বাফেট বলেন, “তারা এমন কিছু করতে এসেছে, যার গাণিতিক ভিত্তিতে লাভের সম্ভাবনা নেই। সবাই জানতো এটা বোকামি—তবুও করেছে।” কয়েক ঘণ্টা ধরে মানুষদের পর্যবেক্ষণের পর তিনি স্ত্রী সুজিকে বলেন, “আমরা অনেক টাকা উপার্জন করব।”
২০০৯ সালের শেয়ারহোল্ডারদের সভায় তিনি বলেন, “যদি কেউ নিউ ইয়র্ক থেকে উড়ে এসে এমন কিছু করে যার প্রতিটি পদক্ষেপ গাণিতিকভাবে ক্ষতির সম্ভাবনায় ভরা, তাহলে এটা এমন এক পৃথিবী যেখানে তুমি খুব ধনী হতে পার।”
বাজার নয়, মনস্তত্ত্বে নজর দাও
বাফেট সব সময় ভবিষ্যতের লক্ষ্যে মনোযোগ দিতে বলেন। কঠিন সময়ে তিনি উদ্যোক্তাদের পরামর্শ দেন রুডইয়ার্ড কিপলিং-এর কবিতা If পড়ার। কবিতাটির একটি পঙক্তি: “যদি তুমি মাথা ঠান্ডা রাখতে পারো, যখন আশেপাশের সবাই দিশেহারা...” তাঁকে সব সময় অনুপ্রাণিত করেছে।
তিনি বলেন, “মানুষ খুব বেশি প্রতিক্রিয়া দেখায় স্বল্পমেয়াদী ঘটনার প্রতি।” তাই নিজেই মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন না, দিনে একবার মাত্র ইমেইল চেক করেন এবং খবরের শিরোনামে প্রভাবিত হন না।
২০১৭ সালের শেয়ারহোল্ডারদের চিঠিতে বাফেট লেখেন, “ভয়ের খবর তোমার মনকে বিষণ্ন করে তুলতে পারে, আর একটা অস্থির মন ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।”
অনিশ্চয়তাই হতে পারে সবচেয়ে বড় শক্তি
২০১০ সালে CNBC-তে বাফেট বলেন, “আমি জানি না আগামীকাল বা মাসখানেক পর বাজার কোথায় যাবে। তবে এটুকু জানি, প্রতিদিনই অনিশ্চয়তা থাকে—এটা স্বাভাবিক। যারা এই অনিশ্চয়তাকে মেনে নিয়ে এগিয়ে যায়, তারাই দীর্ঘমেয়াদে সফল হয়।”
এই মন্তব্যটি তিনি করেছিলেন ২০১০ সালের ৬ মে শেয়ারবাজারের বড় ধরনের পতনের পর। মাত্র ৩০ মিনিটে বাজার পড়ে যায় ৯ শতাংশের বেশি। সেই সময় ডাও জোন্স সূচক ছিল ১০,০০০—আজ তা ৪৫,০০০ ছুঁয়েছে। আর বাফেটের বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে করেছে প্রায় ৫০০ শতাংশ মুনাফা।
মন বুঝলে, ধন আসবে
ওয়ারেন বাফেটের শিক্ষাটি সহজ: যদি মানুষের আচরণ বুঝে ফেলতে পারেন, যদি অনিশ্চয়তার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে পারেন—তাহলেই আপনি অর্থনৈতিকভাবে অগ্রগামী হবেন। কারণ, ব্যবসা ও বিনিয়োগের জগতে সবকিছুর শিকড় হলো মানুষের মনের ভিতর।
সূত্র: ইঙ্ক ডটকম
এম.কে.