
ছবি: সংগৃহীত
শিশুর মন ঠিক যেন একটুকরো কাঁচ—যত বেশি যত্নে গড়ে তোলা যায়, ততই তা সুন্দরভাবে জ্বলে ওঠে। তবে সব শিশু একরকম নয়। কেউ কেউ একটু বেশিই অনুভূতিপ্রবণ, যাদেরকে মনোবিজ্ঞানীরা বলেন “Highly Sensitive Child” বা অতিসংবেদনশীল শিশু। এমন শিশুদের বেড়ে ওঠার পথে দরকার বাড়তি যত্ন, বোঝাপড়া ও সঠিক দিকনির্দেশনা।
সংবেদনশীল শিশু কারা?
সংবেদনশীল শিশুরা সাধারণত চারপাশের পরিবেশ, মানুষের আচরণ, শব্দ, আলো কিংবা আবেগে খুব সহজেই প্রভাবিত হয়। তারা হয়তো খুব দ্রুত কেঁদে ফেলে, অপরিচিত পরিবেশে অস্থির হয়ে পড়ে, কারও কষ্ট দেখে সহজেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে অথবা নিজের চিন্তাজগতে ডুবে থাকে।
মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, পৃথিবীর মোট শিশুর প্রায় ১৫-২০% এই ধরনের অতিসংবেদনশীলতার বৈশিষ্ট্য বহন করে। তবে এটি কোনও দুর্বলতা নয়—বরং এটি একটি বিশেষ গুণ, যেটি সঠিক পরিচর্যায় একদিন হয়ে উঠতে পারে অসাধারণ শক্তি।
অভিভাবকদের করণীয় কী?
সংবেদনশীল শিশুকে বড় করতে গেলে প্রথমেই দরকার তাকে বোঝা এবং মেনে নেওয়া। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেওয়া হলো:
১. ভালোভাবে শুনুন ও বুঝুন: আপনার শিশুটি কী বলছে বা কীভাবে অনুভব করছে, তা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। তার কথাকে অযথা 'নাটক' বা 'অতিরিক্ত আবেগ' বলে উড়িয়ে দেবেন না।
২. সহনশীল পরিবেশ তৈরি করুন: বাড়ির পরিবেশ শান্ত ও নিরাপদ রাখার চেষ্টা করুন। উচ্চ স্বর, তাড়াহুড়ো কিংবা তুলনামূলক আচরণ তাদের মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
৩. রুটিন মেনে চলুন: সংবেদনশীল শিশুরা পূর্বপরিকল্পিত কাজ ও নির্দিষ্ট রুটিনে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। প্রতিদিন ঘুম, খাওয়া, পড়াশোনা ও খেলাধুলার একটি তালিকা তৈরি করুন।
৪. ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখুন: ভুল হলে গলা চড়ানো বা শাস্তি দেওয়ার পরিবর্তে শান্তভাবে বুঝিয়ে বলুন। এতে শিশু আত্মবিশ্বাস হারাবে না বরং শেখার আগ্রহ পাবে।
৫. সৃজনশীলতা উৎসাহ দিন: এমন শিশুরা সাধারণত চমৎকার শিল্পী, লেখক বা সংগীতশিল্পী হতে পারে। তাদের আঁকা, লেখা, গান বা আবিষ্কারে উৎসাহ দিন।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ
শিক্ষকেরা যদি সংবেদনশীল শিশুকে অতিরিক্ত ‘নরম’ হিসেবে বিবেচনা না করে, বরং তার শক্তি ও সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে উৎসাহ দেন, তাহলে শিশু নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে। ক্লাসরুমে বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহনুভূতিশীল পরিবেশ এই শিশুদের বিকাশে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
শেষ কথা
একজন সংবেদনশীল শিশু সহজেই অন্যের দুঃখ অনুভব করতে পারে, গভীরভাবে চিন্তা করতে পারে এবং দারুণ কল্পনাশক্তির অধিকারী হয়। তাই এ ধরনের শিশুকে সঠিকভাবে বড় করে তোলা মানেই মানবিক, সৃজনশীল ও নেতৃত্বগুণসম্পন্ন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে তোলা
কানন