ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২

২০০ বছরের পুরনো সস এখন ফ্যাশন ট্রেন্ড!

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ১০ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ০৪:৩৮, ১০ এপ্রিল ২০২৫

২০০ বছরের পুরনো সস এখন ফ্যাশন ট্রেন্ড!

ছবি: সংগৃহীত

আধুনিকতার ঢেউয়ে হারিয়ে যাওয়া ব্রিটিশ ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলো—আর যেগুলো আবার ফিরে আসছে জনপ্রিয়তায়। জেন্টলম্যান’স রেলিশ, শিপহ্যাম’স পেস্ট, বাথ অলিভারস, লিয়া অ্যান্ড পেরিনস সস—নামগুলো শুনলেই যেন রান্নাঘরের কথা মনে পড়ে। তবে বিস্ময়ের বিষয় হলো, এই ঐতিহ্যবাহী ব্রিটিশ খাবারগুলোর অনেকগুলোই এখনো বাজারে পাওয়া যাচ্ছে, আর কিছু আবার ফিরে আসছে জনপ্রিয়তায়।

খাদ্য ইতিহাসবিদ ও ক্যাটারার সেরেন চারিংটন-হলিন্স বলেন, “খাবারের ফ্যাশন চক্রাকারে ঘোরে। মধ্যবয়সীরা হয়তো এসব খাবারকে মনে রাখে দাদী-নানীর বাড়ির স্মৃতি হিসেবে, যেখানে শৈশবে এগুলো খাওয়া হতো। আবার নতুন প্রজন্মের কাছে এসব খাবার নতুন, বিলাসবহুল ও ভিন্নধর্মী হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে।”

অনেক ঐতিহ্যবাহী ব্রিটিশ খাবারেই থাকে টকটকে বা ঝাঁঝালো স্বাদ, যা তাদের ১৯ শতকে উৎপত্তির ইঙ্গিত দেয়। সেই সময়কার ভিক্টোরিয়ানরা ঝাল ও মশলাদার সস দিয়ে খাবারে স্বাদ আনতেন। তখনকার ‘সেভরি’ নামক একটি কোর্সে পুরুষেরা খাবারের শেষে পোর্ট ওয়াইন, ধূমপান আর পটেড চিকেন লিভার বা জেন্টলম্যান’স রেলিশ খেতেন, যা থেকে এর পুরুষ-নির্দেশক নামকরণ। আর নারীরা খেলেন মিষ্টান্ন, সঙ্গে চলত তাস খেলা।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর এই ধরণের ভোজপ্রথা বিলুপ্ত হতে শুরু করে। কারণ, গৃহকর্মীর অভাব দেখা দেয়। তবু এই খাবারগুলো অনেকের কাছে ‘পোশ’ বা অভিজাত স্বাদের প্রতীক হিসেবে টিকে থাকে।

পরবর্তীতে, যখন বাজারে সহজলভ্য চিপস বা বাদামের মতো স্ন্যাকস আসলো, তখন এই ঐতিহ্যবাহী ‘সেভরি’ খাবারগুলো জনপ্রিয়তা হারায়। তবে কিছু পেস্ট এখনো মাঝারি আয়ের পরিবারে প্রচলিত। চারিংটন-হলিন্স বলেন, “আমার স্কুল লাঞ্চবক্সে শিপহ্যাম’স সারডিন ও টমেটো পেস্ট থাকত। আর কিছুদিন আগে সুপারমার্কেটে স্যান্ডউইচ স্প্রেড দেখে আমি চমকে গিয়েছিলাম!”

পরিসংখ্যান সংস্থা স্ট্যাটিস্টার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে সেভরি স্প্রেড বাজার ৪.৩৫ শতাংশ বেড়েছে, যার বাজার মূল্য এখন ৩৯৩ মিলিয়ন পাউন্ড।

তবে কিছু খাবার সব শ্রেণির মানুষের কাছে সমান জনপ্রিয়। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হচ্ছে মার্মালেড, যার প্রথম রেসিপি পাওয়া যায় ১৬৭০-এর দশকে। ডালেমেইন মার্মালেড অ্যাওয়ার্ডে একাধিক পুরস্কারজয়ী চারিংটন-হলিন্স বলেন, “প্যাডিংটন বিয়ার মার্মালেডের জন্য দারুণ কাজ করেছে।” রানী এলিজাবেথের প্লাটিনাম জুবিলি উপলক্ষে প্রচারিত সেই বিখ্যাত ভিডিওর পর, মার্মালেড বিক্রি বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ।

ফোর্টনাম অ্যান্ড ম্যাসনের মিসরচেন্ডাইজিং ডিরেক্টর রবার্ট পুলি জানান, তরুণদের মধ্যেও মার্মালেডের চাহিদা বাড়ছে। তারা এ বছর বাজারে আনছে একটি নতুন ‘নো-পিল’ সানবার্স্ট মার্মালেড, তরুণদের আকৃষ্ট করতেই।

ফোর্টনামসে জেন্টলম্যান’স রেলিশ-এর বিক্রি বেড়েছে ১৫ শতাংশ। তবে সবচেয়ে বেশি চমক দিয়েছে তাদের নিজস্ব ১৮১ সস, যার বিক্রি বেড়েছে ১১৩ শতাংশ। ফোর্টনামসের বাইং ডিরেক্টর লিজ মরগান বলেন, “ব্রিটিশ ঐতিহ্যবাহী প্রাতঃরাশের প্রতি আগ্রহ বাড়ায় ব্রাউন সস আবার জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।”

২০২৩ সালের ফ্যাশন উইকের সময় বারবেরি ব্র্যান্ড লন্ডনের টাফনেল পার্কের এক সাধারণ ক্যাফেকে নিজেদের ব্র্যান্ডিংয়ে রাঙিয়ে তোলে। ক্যাফের লবণ-মরিচ থেকে শুরু করে কর্মীদের পোশাকও ছিল বারবেরি স্টাইলে। এরপর হয়তো জেন জেড প্রজন্ম আবার ব্রাউন সসে আগ্রহ দেখাতে শুরু করে।

ফোর্টনামসের ডেপুটি আর্কাইভিস্ট লুইস উফ জানান, ১৮০০ সালে তাদের প্রথম বিক্রিত ব্রাউন সস ছিল হার্ভিস, যার মূল উপাদান ছিল অ্যাঙ্কোভি, ভিনেগার ও সয়াসস। তবে বর্তমান ১৮১ সসের রেসিপি গোপন রাখা হয়েছে।

তাদের ঐতিহ্য-আধুনিকতার মিশ্রণ আরও ভালোভাবে বোঝা যায় স্কচ এগের মাধ্যমে—১৭৩৮ সালে উদ্ভাবিত এই খাবারটি এখন পাওয়া যায় চিকপি দিয়ে তৈরি নিরামিষ সংস্করণে, এমনকি ইস্টার উপলক্ষে চকলেট প্রলেপে মোড়া স্কচ এগেও।

হারিয়ে যাওয়া কিছু খাবার


বাথ অলিভারস: ১৭৫০ সালে উইলিয়াম অলিভার তৈরি করেন এই স্বাদহীন বিস্কুট, যাতে পনিরের স্বাদ বাড়ে। তবে এটি ২০২০ সালের পর থেকে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।

ম্যাটেসন্স মিট পেস্ট: ১৯৪৭ সালে রিচার্ড ম্যাটেস ও তার ছেলে ভার্নার উদ্ভাবন করেন বিভিন্ন ধরনের মাংসের পেস্ট, যার জনপ্রিয়তা ৬০-৭০-এর দশকে তুঙ্গে। বর্তমানে এ ধরনের পেস্ট আর বাজারে দেখা যায় না, তবে কিছু প্রক্রিয়াজাত সসেজ ও মুরগির পদ এখনো বিক্রি হয়।

বিলাসবহুল কিন্তু চলমান


জেন্টলম্যান’স রেলিশ (পাতাম পেপেরিয়াম):  ১৮২৮ সালে জন ওসবোর্ন উদ্ভাবিত এই অ্যাঙ্কোভি পেস্ট এখনো ট্রেন্ডি রেস্টুরেন্টে পাওয়া যায়। লেখক আমির কোটেচা বলেন, “২০০ বছরের ঐতিহ্যের পরও এই খাবারটিকে অনেকেই ফ্যাশনেবল বলেই ভাবেন।”

ধীরে হলেও টিকে আছে


শিপহ্যাম’স ফিশ পেস্ট: ১৭৫০-এর দশকে চালু হওয়া এই ব্র্যান্ড এখনও বাজারে টিকে আছে। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এর বিক্রি খুব একটা বাড়েনি।

আবার ফিরে আসছে

ব্রাউন সস: ১৮৯৫ সালে ফ্রেডেরিক গার্টন উদ্ভাবন করেন এই সস, যা পরবর্তীতে ‘এইচপি সস’ নামে খ্যাত হয়। কিছু বছর বিক্রি কমে গেলেও বর্তমানে আবার চাহিদা বাড়ছে।

ওরচেস্টারশায়ার সস: ১৮৩০-এর দশকে এলোমেলোভাবে উদ্ভাবিত এই সস এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিশেষ জনপ্রিয়। লিয়া অ্যান্ড পেরিনসের এই সস ২০২৪ সালে এক বিলিয়ন ডলারে মূল্যায়িত হয়েছে এবং ২০৩১ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশিত।

শহীদ

×